সম্প্রতি পোশাক শিল্পে বেতন-বোনাস নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ আন্দোলন এখনও চলছে। প্রায়শই এরকম আন্দোলন হয় পোশাক শিল্প খাতে। এছাড়া রানা প্লাজায় ধসের ঘটনায় দেশে-বিদেশে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয় পোশাক খাতের। এসব বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হয়েছেন পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিজিএমইএ এর সভাপতি আতিকুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হৃদয় মিজান।
রানা প্লাজা ধসের পর যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল কিভাবে তা মোকাবেলা করেছেন?
রানা প্লাজা ধস পোশাক শিল্প দুর্ঘটনার ইতহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। রানা প্লাজা ধসের পর সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সংকট উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। সবাই মিলে এক সাথে কাজ করেছি। দুর্ঘটনার সময় প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই মনিটরিং করেছেন। আমি নিজেও প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাগোগ করেছি।
রানা প্লাজা ধসে হাজারের অধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বিজিএমইএ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তাজরীনের অগ্নিকা-ের পর আমরা টাস্কফোর্স গঠন করেছি। রানা প্লাজা ধসের পর সব গার্মেন্টস কারখানার স্ট্রাকচারাল ডিজাইন পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য বুয়েটের প্রকৌশলীদের নিয়ে কমিটি করা হয়। ঢাকায় রাজউক বহির্ভূত এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ কলকারখানা পরীক্ষা করার জন্য শ্রমমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া সরকার, মালিক, শ্রমিক এবং বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছি। সবার কাছ থেকে সঙ্কট উত্তরণের পরামর্শ চেয়েছি। সবমিলিয়ে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সংকট উত্তরণ সম্ভব হয়েছে।
রানা প্লাজা ধসের পর অনেকেই অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের অধিকাংশ কারখানা ঝুকিপূর্ণ?
সব সময়ই বলা হয়, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ কারখানা ঝুকিপূর্ণ। এ নিয়ে অনেক প্রোপাগান্ডা হয়েছে। না জানার কারণে এটা হয়েছে। বাংলাদেশে ঝুকিপূর্ণ কারখানার হার দুই শতাংশের কম। যা এ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স কারখানা পরিদর্শন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়। আমি মনে করি, সময় এসেছে এ শিল্প নিয়ে পজেটিভ প্রোপাগান্ডা করার।
কারখানার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
কারখানার নিরাপত্তার জন্য সবধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক কারখানায় অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম লাগানো হচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। কারাখানা শুরুর সময় আমরা চিন্তা করিনি নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ডোর, স্প্রিঙ্কলার, হোসপাইপ এসব দামি সরঞ্জাম লাগাতে হবে। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের সাথে আমাদের পরিচিতি ছিল না। সোনারগাঁও একটি অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জামাদি নিয়ে একটি মেলা হয়েছে। সেখান উদ্যোক্তারা অনেক কিছু শিখেছেন। শিক্ষা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। অধিকাংশ কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম লাগানো হয়ে গেছে। বাকি কারখানাগুলোতে কাজ চলছে।
আপনারা প্রায়ই বলেন এ শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কারা এর সাথে জড়িত?
কিছু হলেই এ শিল্পকে কটাক্ষ করা হয়। আমরা ইন্টারনাল দিক গুলি দেশের বাইরে প্রচারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এটা ঠিক নয়। আমার দেশে যে কোন সমস্যা হতে পারে। দেশেই সেই সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা আছে। শ্রম অধিদপ্তরে জানাতে পারে। বিজিএমইএ কাছে জানাতে পারে। আমরা যদি সমস্যা সমাধান করতে না পারি তাহলে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন আছে। আইএলও আছে তাদের কাছে যেতে পারে।
আমাদের দেশ আর আরএমজি খাতটি জাতীয় সম্পদ। এখানে আমাদের সবার এক হওয়া উচিত। জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। এরসাথে গুটি কয়েক শ্রমিক সংগঠন জড়িত।
অভিযোগ রয়েছে মালিকরা শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন।
দেখেন ভাল মন্দ সব জায়গায় আছে। হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান নয়। মালিকরা ভাল কাজও করছে। সেটি কিন্তু মিডিয়ায় আসে না। শ্রমিকরা অস্স্থু হলে দুর্ঘটনায় আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ টাকা মালিকরা ব্যয় করেছেন এমন নজির আছে। শ্রমিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে- এসব নিয়ে দেশের বাইরে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিদেশে গিয়ে কিছু শ্রমিক নেতা শ্রমিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অপ-প্রচার চালাচ্ছে। আসলে এটা ঠিক নয়।
এ খাতের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ কি?
পোশাক শিল্প খাতের প্রচুর সম্ভাবনা এবং প্রচুর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন চায়না মার্কেট। সেখানে আমাদের শেয়ার ৫ শতাংশ। জাপানের বাজারে আমাদের এক শতাংশ শেয়ার। ব্রাজিল, রাশিয়া ভারত ও চায়নার দিকে আমাদের যেতে হবে। রপ্তানিবাজার বাড়াতে হবে। আমাদের এ শিল্পের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। দিন দিন আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। ১২ বিলিয়ন থেকে ২৪ বিলিয়নের উন্নীত হয়েছে। এ শিল্প এখন কঠিন সময় পার করছে। এ শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত সমস্যা, গ্যাস বিদ্যুতের সমস্যা। রানা প্লাজা ধস পরবর্তী ইমেজ পুনরুদ্ধার করা এবং যেসব ক্রেতারা অন্যদেশে চলে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
নারী শ্রমিকদের জন্য আপনারা কি উদ্যোগ নিয়েছেন?
এ শিল্পের ৮০ শতাংশ নারী শ্রমিক। নারী শ্রমিকদের জন্য নান কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। আমি গর্ব করে বলতে পারি পোশাক শিল্পের কল্যাণে নারীদের বাল্য বিয়ে কমেছে।
প্রশ্ন উঠেছে তোবার শ্রমিকদের বিষয়ে বিজিএমইএ আগে থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
আমরা আগে থেকে উদ্যোগ নিয়েছি। তোবা নিয়ে আমরা কাজ করছি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল এক হাজার কারখানায় গ-গোল হবে। তা আমরা সমাধান করেছি। শুধু একটি কারখানায় সমস্যা হয়েছে তা হলো তোবা গার্মেন্টস। আমরা ঈদের আগে ৯৯৯ টি কারখানার সমস্যা সমাধান করেছি। মালিক না থাকার কারণে তোবা শ্রমিকদের বেতন নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।
৯০ শতাংশ কারখানায় ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রথম যখন তিন হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা করা হয় তখন তা বাস্তবায়ন করতে প্রায় নয় মাস সময় লেগেছে। কিন্তু বর্তমানে ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি খুব কম সময়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ৯০ শতাংশ মজুরি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।