বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের একজন আবদুল আউয়াল মিন্টু। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন দুই দফা। আছে রাজনৈতিক পরিচয়ও। বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা। ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। সম্প্রতি কথা বলেছেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
বিএনপি বলেছিল ঈদের পর সরকার পতনে কঠোর আন্দোলনে যাবে। কিন্তু এখন নরম কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে। কেন?
আসলে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর আন্দোলন নির্ভর করে। ধাপে ধাপে আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোর করে তোলা হবে। এখন যেই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে তা চলমান আন্দোলনের অংশ।
এ কর্মসূচির পর কি হরতাল, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে বিএনপি?
এখনো এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে চলমান আন্দোলন ভবিষ্যতে আরও গতি পাবে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর কমিটিকে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিও আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থাকবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছিলেন এই সরকারকে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হবে না। কিন্তু সরকারের তো আট মাস পার হতে চললো।
বিএনপি তো নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। দেখা যাক সামনে কী হয়।
ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের দ্বন্দ্বের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসছে...
এর সবই গুজব। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। একটি শ্রেণি না বুঝেই এ সব নিয়ে অপপ্রচার করছে। সবাই অভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি। ঢাকা মহানগর কমিটিকে আরও সক্রিয় ও কার্যকর করাই আমাদের লক্ষ্য। এখানে বাধা হওয়ার কোনো কিছু তো নেই।
ঢাকা মহানগরীতে নতুন কমিটি করতে কতদিন লাগতে পারে?
এখনই এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। সব কিছুই সময়ের মধ্যেই হবে।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন বিএনপিকে কোণঠাসা করতে সরকার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে তড়িঘড়ি করছে...
আমিও তাই মনে করি। সরকার এই মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।
আপনি এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা। আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই বিষয়টি কীভাবে হয়েছে?
এটা আসলে ব্যাখ্যা করা কঠিন। আমি কখনো মাঠেঘাটে বা মিছিল-মিটিংয়ের রাজনীতি করিনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যখন আমি যুক্ত হই তখন তিনি বিরোধী দলেও ছিলেন না। তিনি তখন নির্বাচনও করেননি।
সেটা কীভাবে তৈরি হয়েছিল?
আমার স্ত্রী ও শেখ রেহানা একই স্কুলে পড়তেন। একসঙ্গে মেট্রিক পাস করেছেন। কলেজেও একসঙ্গে পড়েছেন। বিয়ের দিন থেকেই ওনাদের সঙ্গে পরিচয়। ওই সম্পর্কটা সামনের দিকে ভালো হওয়া ছাড়া খারাপ হয়নি। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আন্দোলনে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হই। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের সময়ও তার সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলাম।
২০০১ সালে আপনি বিএনপিতে যোগ দেওয়ায় সবাই অবাক হয়েছিল।
আসলে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওই সময় কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। তবে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় থেকেই বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল। তিনিও বারবার বলছিলেন বিএনপিতে আসেন, তাহলে এখানে আরও কাজ করার সুযোগ পাবেন। তাই আমি বিএনপিতে যোগ দিয়েছি।
অনেকের ধারণা আপনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে।
বিএনপি যে ক্ষমতায় আসবে এটা যে আমি চিন্তা করেছি তাতে সন্দেহ নেই। কারণ তখনকার সময় আমি রাজনীতিটা অনেকের চেয়ে ভালো বুঝতাম বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু কোনো ধরনের অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য আমি তখন বিএনপিতে আসিনি। কোনোদিন কোনো মন্ত্রী, সচিব বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ব্যবসায়িক কাজে গিয়েছি এটাও কেউ বলতে পারবেন না।
আপনি ঢাকার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। এই ইচ্ছাটা কেন হলো?
একটি রাজধানী শহর একটি দেশের অলংকারের মতো। রাজধানীর অবস্থা দেখেই মানুষ বুঝতে পারে দেশের হালচাল কেমন। রাজধানীকে সেইভাবে সাজানোই আমার আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল। আমার সুযোগ হয়নি, তাই আমি পারিনি।
বিএনপি থেকে আপনাকে সমর্থন দেওয়া হয়নি বলে প্রচার আছে। যে কারণে আপনার মন খারাপ হয়েছিল। আসলেই কি তাই?
আমি যখন আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসি তখন মেয়র পদে সমর্থন দেওয়ার কথা ছিল। বিএনপির কাছে আমি নিজে থেকে তা চাইনি। তবে জীবনের সবকিছুই শতভাগ হবে এটাও ঠিক নয়। দলের সমর্থন পেলেও যে আমি মেয়র হতাম এটাও তো কোনো কথা ছিল না। তবে অবশ্যই আমি এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি বলে মনে করি।
এ নিয়ে কোনো হতাশা কি আপনার মধ্যে আছে?
যখন মেয়র হতে চেয়েছিলাম তখন আমার বয়স ছিল ৫০ বছর। কিন্তু এখন আমার বয়স ৬৫। এই ১৫ বছরে আমার কাজের প্রাধান্য পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমি দেশের কৃষি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করেছি। ধান, গরু, মহিষের ওপর গবেষণা চলছে। হতাশার কোনো সুযোগ নেই আমার জীবনে। কারণ আমার করার মতো অনেক কাজ আছে।