logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
কোচিং সেন্টার স্কুলের বিকল্প হতে পারে না: ড. আখতারুজ্জামান
১০ আগস্ট, ২০১৪ ২১:৫৯:১৪
image

স্কুলের পড়াশোনা এখন হয়ে গেছে কোচিংনির্ভর। কোচিং সেন্টার আর প্রাইভেট পড়ে ভালো ফলাফল হয়ত করা যায়, কিন্তু তা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশে সমস্যা তৈরি করে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। এসব বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হয়েছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মহিউদ্দীন মাহী


কোচিং কি স্কুলের বিকল্প হতে পারে?


এটা কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। স্কুলে কেবল বই পড়ানো হয় না, দেওয়া হয় জীবন গড়ে তোলার শিক্ষা। একটি ছাত্রকে মানবিক গুণসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রথম দিন থেকে চেষ্টা করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর কেবল পাঠ্যবই নয়, পাঠ্যবহির্ভূত বইসহ নানা কিছু পড়তে উৎসাহী করা হয় স্কুলে। এভাবে একজন ছাত্রের চিন্তার ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলো ছাত্রদের শেখায় কীভাবে প্রশ্নের উত্তর দিলে ভালো নম্বর পাবে। একজন ছাত্রকে সত্যিকারের ছাত্র হিসেবে গড়ে উঠতে হলে তাকে শ্রেণিকক্ষেই মনোযোগ দিতে হবে।


কিন্তু হচ্ছে তো তাই?


কোচিং-বাণিজ্য সারা দেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। এটা বন্ধে আইন করা জরুরি। কারণ সরকার ২০১২ সালে নীতিমালা করেছে। কিন্তু সেই নীতিমালা আশানুরূপ কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে আগের মতোই চলছে এই বাণিজ্য। এ থেকে উত্তরণে দরকার চতুর্মুখী সচেতনতা। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও সরকার চার পক্ষের সম্মিলিত চেষ্টা দরকার। শিক্ষকদের নৈতিক প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।


শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রদের কোচিংয়ে আসতে বাধ্য করার অভিযোগ আছে?


শিক্ষকতা পেশা সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই সমাদৃত মহান পেশা। সভ্যতার শুরু থেকেই এই পেশার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ছিল। শিক্ষকরাও ছিল মহান। তাদের গুণাবলীর  কারণেই মানুষ এত ভক্তি-শ্রদ্ধা করত। কিন্তু এখন এই পেশার প্রতি মানুষের ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষকরা এখন আর নীতি- নৈতিকতার ওপর নেই। অনেকেই শিক্ষা পেশাটাকে ব্যবসায় পরিণত করেছে।


শিক্ষকরা কেন এমন করছে?


শিক্ষকদের যে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে তা মোটেও বর্তমান বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজটা শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে করে এলেও বর্তমান সময় আর সম্ভব নয়। ফলে শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়েছে কোচিংয়ে। শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই তাদের আর্থিক দিকটা বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। শিক্ষকদের আর্থিক  দৈন্যদশা দেখলে নিশ্চয়ই শিক্ষার্থীরা তার শিক্ষককে আদর্শ মনে করবে না।


শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বোঝাবে কে? 


কেবল শিক্ষক নয়, অভিভাবকদেরও বোঝাতে হবে। তাদের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। স্কুলের শ্রেণিকক্ষেই ভালো পাঠদান করা হয় এই ধারণা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।


প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথেও কোচিং সেন্টারের নাম এসেছে?


আসলে প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি মারাত্মক অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত ভয়াবহ। বিভিন্ন সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কোনো শাস্তি হয় না। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত এর কোনো হদিসই পাওয়া যায় না। এজন্য এই কাজগুলো বার বার ঘটছে। আর কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে এই ধরনের মারাত্মক  অপরাধ করছে।


এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?


কোচিং-বাণিজ্য আইন করে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। পরীক্ষার মধ্যে ছুটি কমিয়ে আনতে হবে। খুব দ্রুত পরীক্ষা নিতে হবে। সময় কমিয়ে আনলে এটা বন্ধ হয়ে যাবে।


সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে কি যথেষ্ট মনে করেন?


শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার বেশ ভালো একটা উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ কোচিং-বাণিজ্য এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছিল যে, শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের বাসায় পড়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হতো। কারণ শিক্ষকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বাসায় ভালোভাবে পড়ায়। এ ছাড়া স্যারদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে না এ রকম ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ অবস্থায় অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ছেলেমেয়েদের প্রাইভেটে পাঠাত। ফলে শিক্ষা হয়ে উঠেছিল পণ্য। শিক্ষার এ বাণিজ্য বন্ধে সরকার যে নীতিমালা করেছে এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এ নীতিমালা বাস্তবায়ন সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।


আর কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?


শিক্ষকদের কাউন্সেলিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষক যখন ভুল করেন তখন অনেক উদীয়মান শিক্ষার্থীর পুরো জীবনই বিফলে চলে যায়, পুরো জাতি তখন দুর্ভোগে পড়ে। তাই শিক্ষককে ভুল করলে চলে না। তাই সরকারকে এমন বেতন কাঠামো ঠিক করতে হবে যেন দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে স্বপ্ন তৈরি করে। মেধাবীরা যদি শিক্ষকতা পেশায় আসে তা হলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার চেহারা পাল্টে যাবে।  


(ঢাকাটাইমস/ ৯আগস্ট/ এমএম)