logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
ভারতে সরকার পরিবর্তনে বিএনপি লাভবান হবে মনে করিনা: রফিকুল
২৪ জুন, ২০১৪ ২২:০৪:৫৯
image


ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তিনি। রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর পদচারণা দীর্ঘ দিনের। প্রতিদিনই চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। আগামী ঈদের পর আন্দোলনে নামার ঘোষণাও দিয়েছেন বিএনপি। এসব নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকাটাইমসের প্রতিনিধি কিরন সেখ।



 





ঢাকাটাইমস: গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে যে সহিংসতা ঘটেছিলো তাতে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। ছাত্রশিবির ঐ সহিংসতার দায়ভার স্বীকারও করেছিলো। বিএনপির আগামী আন্দোলনে আবার যদি এরকম সহিংসতা ঘটে তাহলে এর দায়ভার কে নিবে?



 





রফিকুল ইসলাম মিয়া: বিএনপি সহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন এবং কালশীতে আগুন দিয়ে ৯ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা ও ১ জনকে গুলি করে মারা এসব ঘটনা প্রমাণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের মদদেই এসব সহিংসতা সৃষ্টি করে। কিন্তু এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোন শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়নি। আমি অবিলম্বে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এর দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি তিনবার জেল খেটেছি। গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ হত্যা এবং সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না আমি ঢিল ছুড়ে কারো মাথা ফাটিয়েছি। এখনও আমার নামে মামলা ঝুলছে। এসব সহিংসতার সাথে সরকারের সন্ত্রাসীরা জড়িত। এসব ঘটনা বন্ধ না হলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ধ্বংস হয়ে যাবে।  



 





ঢাকাটাইমস: জামায়াত ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায়ের প্রসঙ্গে বিএনপির প্রতিক্রিয়া কি?



 





রফিকুল ইসলাম মিয়া: এই বিষয়ে বিএনপি অনেক বার বলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে বিএনপির কোন দ্বিমত নেই। দেশের প্রচলিত ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতেই সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বিচারের দাবি আমরা করেছি। যদি সেটা সরকার করে তাহলে এই বিচার নিয়ে কারো মনে প্রশ্ন থাকবে না।



 





ঢাকাটাইমস: স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন- বিএনপিকে আলোচনায় আসতে হলে সরকারকে বৈধতা দিতে হবে। আবার আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপির সাথে কোন সংলাপ নয়। এই বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?



 





রফিকুল ইসলাম মিয়া: তারা নিজেদের মধ্যে যে কথা বলছেন, সেটা তাদেরকেই জিজ্ঞাস করলে ভালো উত্তর পাবেন। তবে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অপহরণ, গুম ও খুনের সাথে যেভাবে জড়িয়ে পড়েছে তাতে নির্বাচন ছাড়া সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।



 





ঢাকাটাইমস: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলেছেন। সরকারি দলের নেতারা এ বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। এর সাংবিধানিক ব্যাখ্যাই বা কী।



 





রফিকুল ইসলাম মিয়া: মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে পারে না। কারণ এটা সংবিধানের কোথাও উল্লেখ নেই এবং সংবিধানেও বলা নেই। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সংসদের মেয়াদ দেড় বছর থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ ইশতেহার দিয়েছিল এবং দাবি করেছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সেই দাবির লক্ষ্যে তারা জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি পালন করেছে। এবং ৯৬ ঘন্টার হরতালের কর্মসূচি দিয়ে তারা মানুষের জীবন হানির চেষ্টা করেছে।



 





তিনি বলেন, ৯৪ সালে আওয়ামী লীগ দেশের সকল প্রকার উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে শ্লোগান দিয়েছে, শিল্প কারখানা চলবে না, গাড়ির চাকা ঘুরবে না। তারা সহিংসতার জন্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বে জনতার মঞ্চ তৈরি করেছিল। তারা সাংবিধানিক সকল রীতি-নীতি সমূলে ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগের এই সকল কর্মকান্ড সংবিধান বিরোধী ছিল।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি এবং করতেও দেয়নি। ঠিক তখন দেশের স্বার্থে ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠির কল্যাণে দেশকে অস্থির অবস্থা থেকে রক্ষা করতে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল সংসদে পাশ করে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ১৫ দিনে মধ্যে নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়।

আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়েছে।

যে নির্বাচনে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং বিনা ভোটে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানের ৬৫ ধারার ২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩ শত আসনে জনগণের প্রত্যেক্ষ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে।

অথচ নির্বাচন ব্যতীত, ভোট ব্যতীত ১৫৪ জনকে সংসদ সদস্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের নামে প্রহসণ বলে আমি আখ্যায়িত করবো। এই ক্ষেত্রে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে বেগম খালেদা জিয়া সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করেছেন। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব হয় তাহলে বর্তমানে কেন হবে না?



 





ঢাকাটাইমস: মোদি সরকার নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপির ভেতর এক ধরণের স্বস্তি লক্ষ করা গেছে এবং বিএনপির বহু নেতা উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি মোদি সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?



 





রফিকুল ইসলাম মিয়া: বাইরের দেশে সরকার পরিবর্তন হলে এতে বিএনপির লাভ হবে এটা আমি মনে করিনা। বাস্তবতা হলো গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে যখন সমগ্র বিশ্ব উৎসাহ দেখায়নি তখন ভারতের কংগ্রেস সরকার সীমাহীন একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনকে সামগ্রিকভাবে সমর্থন দিয়েছিলো। যেটা বাংলাদেশের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বোচ্চ বাধা সৃষ্টি করেছে।  



 





ঢাকাটাইমস: র‌্যাব বিলুপ্তির কথা বলা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে, পুনর্গঠন না করে বিলুপ্তি কেন?



 





রফিকুল ইসলাম মিয়া: র‌্যাবের তিনজন কর্মকর্তা নারায়নগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় র‌্যাব অর্থের বিনিময়ে মানুষ হত্যা করছে। এর ফলে র‌্যাবের উপর থেকে জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণের আস্থা না থাকলে সেই বাহিনী জনগণের কাজ করতে পারে না। তাই র‌্যাবকে পুনর্গঠন নয়, বিলুপ্ত করতে হবে।



 





ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।



 





রফিকুল ইসলাম মিয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ।



 





(ঢাকাটাইমস/ ২৪ জুন/ কেএস/এআর)