পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও এর আগে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির টিকিটে একাধিকবার নির্বাচন করেছেন। সম্প্রতি ঢাকাটাইমস কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
ঢাকাটাইমস: আপনি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির হয়ে একাধিকবার নির্বাচন করেছেন। স্বতন্ত্র হিসেবেও জিতেছেন। এর পেছনে কারণ কী?
রুস্তম আলী ফরাজী: ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে রাজনীতি শুরু। এরপর অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। পরে একসময় চাকরি ছেড়ে এলাকার মানুষের কল্যাণে সমাজসেবামূলক কাজ শুরু করি। এরপর ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলাম। বিজয় মিছিলও হয়েছে। কিন্তু পরে মানুষজন মেরে ওই নির্বাচনের জয় ছিনিয়ে নেয় জাতীয় পার্টি। পরে আলোচিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলাম। কিন্তু বিএনপি আমার ওই জয় ছিনিয়ে নেয়। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হই। ১৯৯৬ সালে এরশাদ যখন কারাগারে তখন আমি জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সাংসদ হয়েছি। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে জয়ী হই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু পরাজিত হই। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংসদ হয়েছি। কোনো দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমি দলে যাইনি। বরং দুই-একবার বিভিন্ন দল আমাকে নিজেদের আসন উদ্ধারের জন্য নিয়েছে। তবে আমার প্রতি জনগণের সমর্থন বরাবরই ছিল।
ঢাকাটাইমস: পেশায় আপনি চিকিৎসক ছিলেন। ওই পেশায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ বেশি না জনপ্রতিনিধি হয়ে সুযোগ বেশি পাচ্ছেন?
রুস্তম আলী ফরাজী: চিকিৎসা পেশায় থেকে একটি বিশেষ শ্রেণি রোগাক্রান্ত মানুষকে সেবা দেওয়া যায়। কিন্তু বড় পরিসরে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ জনপ্রতিনিধিদের আছে। জিয়াউর রহমানের সরকারের সময় চিকিৎসকদের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে আমি চাকরি হারিয়েছিলাম। পরে জনগণের কথা চিন্তা করে চিকিৎসা পেশা ছেড়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি।
ঢাকাটাইমস: সম্প্রতি শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
রুস্তম আলী ফরাজী: এটি মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। যিনি এই পেশায় আসবেন তাকে মনে রাখতে হবে সব পেশার চেয়ে এটি আলাদা। ত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে। কিন্তু এখন চিকিৎসকরা রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেমেছেন। এটা সমর্থনযোগ্য নয়।
ঢাকাটাইমস: আপনি একসময় বিএনপির সাংসদ ছিলেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি যায়নি, আপনি গিয়েছেন।
রুস্তম আলী ফরাজী: আমার আগে গতবার যিনি পিরোজপুর-৩ আসনের সাংসদ ছিলেন তার দুর্নীতির কারণে এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, জেলা পরিষদ সব জায়গার অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেছেন। পরে এলাকার জনগণ আমাকে বললো এভাবে একটি এলাকা শেষ হয়ে যেতে পারে না। তাদের দাবির মুখে আমি নির্বাচনে গিয়েছি। তাছাড়া নির্বাচনের আগে আমি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন পিরোজপুর-৩ আসনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। যদি নিরপেক্ষ না হতো তাহলে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতাম না।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি কি ঠিক করেছে বলে আপনি করেন?
রুস্তম আলী ফরাজী: জাতীয় রাজনীতির মেরুকরণ একেক দলে একের রকম। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিকগুলোর মধ্যে একের অন্যের প্রতি বিশ্বাস নেই। যে কারণে বিএনপি আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তবে আমি মনে করি বিএনপি নির্বাচন করলে ভালো হতো। নির্বাচনে তাদের যাওয়া উচিত ছিল। কারণ নির্বাচনে যাওয়ার পর তারা যদি দেখতো এটি নিরপেক্ষ হয়নি তা হলে এই দাবিতে জোরালো আন্দোলন করতে পারতো। তখন তাদের দাবির পক্ষে শক্ত জনমত গড়ে উঠতো। যা তাদের দাবি আদায়ে সহজ হতো।
ঢাকাটাইমস: এলাকায় দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন। এটি দূর করতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
রুস্তম আলী ফরাজী: গত তিন মাসে আমি এলাকায় অনেকটা দুর্নীতি দূর করতে সক্ষম হয়েছি। আমি স্পষ্ট সবাইকে বলে দিয়েছি টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এসব আমার এলাকায় চলবে না। এখনও সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তবে অনেকে টেন্ডারবাজি করতে চায়। আমি সরকারের মন্ত্রীদের বলেছি এই ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অনলাইনে নিয়ে আসতে। তখন হয়ত এটি পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হবে। আর এলাকার উন্নয়ন ধারাবাহিকভাবেই হবে। এ নিয়ে সমস্যা হবে না।
ঢাকাটাইমস: সংসদে জাতীয় পার্টির একটি অংশ বিরোধীদলে অপর একটি অংশ সরকারে। এতে সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকা কতটুকু পালন করা সম্ভব বলে মনে করেন?
রুস্তম আলী ফরাজী: পৃথিবীর ইতিহাসে এটি বিরল ঘটনা। তবে সংসদকে কার্যকর করতে হলে ১৯ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা প্রথম দিন থেকেই সেই কাজই করছি। আমাদের দেশে যারা ক্ষমতায় যায় তারা মনে করে রাষ্ট্র তাদের নিজেদের সম্পত্তি। বিরোধীদলের সমালোচনা শুনতে চায় না। এ ক্ষেত্রে সংসদ কার্যকর করতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। যদি সরকার এটি করতে ব্যর্থ হয় তবে এই দুর্বল সংসদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমে যাবে। তখন এই সংসদ টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।
রুস্তম আলী ফরাজী: আপনাকেও ধন্যবাদ।