logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
কাজের মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চাই
১৩ মে, ২০১৪ ১১:১৪:১১
image


নতুন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ১০০ দিনের বেশি পার করেছেন শ্রী বীরেন শিকদার। এরই মধ্যে নিজ দক্ষতায় গুছিয়ে নিয়েছেন দাপ্তরিক কাজ। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিন থেকেই জোর দিয়েছেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর। কাজের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে চান তিনি। সম্প্রতি দেশের ক্রীড়াঙ্গন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রমসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। উঠে এসেছে যুবকদের কথাও। বাদ যায়নি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যুব প্রশিক্ষণের অর্জন, যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা। আলাপনে ছিলেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ

ঢাকাটাইমস: যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকা-কে আরও গতিশীল করতে আপনার পরিকল্পনা কী?

শ্রী বীরেন শিকদার: প্রধানমন্ত্রী এবার মন্ত্রিপরিষদে যাদেরকে নিয়েছেন তাদের সবার ব্যাপারেই ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। আমি মনে করি সেই পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। গতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে আমার প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ইতিমধ্যে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমার ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু বিষয় গুছিয়ে নিয়েছি। নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের মন্ত্রিসভায় রেখেছেন চেষ্টা করব সেই উদ্দেশ্য যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে।

ঢাকাটাইমস: এর আগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। সেই জায়গায় থেকে এই দায়িত্ব কী চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন?

 শ্রী বীরেন শিকদার: অবশ্যই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি। এই মন্ত্রণালয়ে আমার কাজের মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চাই। আমার এলাকায় একটা কথা চালু আছে যে, আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। এখানেও ব্যর্থ হব না বলে বিশ্বাস করি। আমার সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চটুকু করার চেষ্টা করব।

ঢাকাটাইমস: জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলো ঠিকভাবে কাজ করে না বলে অভিযোগ আছে। এদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে?

শ্রী বীরেন শিকদার: হয়ত কোনো জায়গায় জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। আর সব ক্রীড়া সংস্থা এক রকম কাজ করবে এটা তো আশা করা যায় না। ক্রীড়া সংস্থাগুলোর সভাপতি পদাধিকার বলে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসক। সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির অন্যরা নির্বাচিত। এখানে সব জায়গার ডিসি তো সমানভাবে ক্রীড়ার প্রতি আগ্রহী নন। সবাই আগ্রহী হবে এমন আশাও করা যায় না। জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলো এনএসসি নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়নের জন্য আমরা এনএসসিকে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করার কথা বলেছি। তারা এজিএম করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া আমরা ক্ষমতায় আসার পর ক্রীড়া সংস্থাগুলো যেন প্রাণবন্ত ও কর্মোদ্দীপনা ফিরে পায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতিটি সংস্থার পক্ষ থেকেই বার্ষিক কয়েকটি টুর্নামেন্ট ও লীগ খেলার আয়োজন করতে হয়। শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। এর বাইরেও ক্রীড়া ও ক্রীড়াবিদ গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে।

ঢাকাটাইমস: জেলার ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কমিটিতে খেলোয়াড় বা ক্রীড়া উদ্যোক্তা ছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের বেশি রাখা হয় বলে অভিযোগ আছে...

শ্রী বীরেন শিকদার: এটা ঠিক নয়। ক্রীড়ার মধ্যে রাজনীতিকে আমরা আনতে চাই না। যেমন সম্প্রতি আমি যশোর থেকে আসলাম। সেখানকার ক্রীড়া সংস্থার কমিটির সভাপতি যিনি তিনি আওয়ামী লীগের লোক নন। তিনি ভালো ক্রীড়া উদ্যোক্তা। আমার জেলা মাগুরার সভাপতিও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আছেন। কিন্তু তিনি খুব ভালো খেলোয়াড়। আমরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোনো পদে লোক বসাইনি।  

ঢাকাটাইমস: প্রায় জেলায়ই ভালো মাঠ নেই। যে কারণে খেলাধুলা ওই অর্থে বিকশিত হচ্ছে না বলে মনে করা হচ্ছে।

শ্রী বীরেন শিকদার: পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা যেন খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে এজন্য সব জায়গায় সজীব ও সবুজ মাঠ তৈরি করা হবে। সবার জন্য সবুজ মাঠ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা আমার মন্ত্রণালয় থেকে করছি। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। ৮৯০টি উপজেলায়ই মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে। যেটা শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবলসহ অন্য সব খেলায় ব্যবহারের উপযোগী থাকবে।  

ঢাকাটাইমস: ঢাকার বাইরে থেকে ক্রিকেট কিংবা ফুটবলে জাতীয় দলে খুব বেশি খেলোয়াড় এখন আসছে না কেন?

শ্রী বীরেন শিকদার: ক্রিকেটে তো মফস্বলের অনেক খেলোয়াড়ই আছে। মাগুরা থেকে সাকিব আল হাসান এসেছেন। নড়াইল থেকে মর্তুজার মতো খেলোয়াড় এসেছেন। এছাড়া অন্য জেলার খেলোয়াড়রাও আছেন।

ঢাকাটাইমস: কিন্তু সাকিব-মর্তুজার পর ওইসব জেলা থেকে নতুন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না কেন?

শ্রী বীরেন শিকদার: তারা যখন এসেছেন, সামনেও হয়ত বা কেউ আসবেন। অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) মাধ্যমে জাতীয় দলে খেলোয়াড় দেওয়া হয়। সারা দেশে বিকেএসপির আরও পাঁচটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খেলোয়াড় বাছাইয়ের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়। খেলোয়াড় হিসেবে এবং খেলার মানের ওপর নির্ভর করে খেলোয়াড় বাছাই করা হয়। অনেক তদবির, সুপারিশ আসে। কিন্তু আমরা এসব কোনো কিছুই আমলে নেই না।

ঢাকাটাইমস: বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মাঝেমধ্যে খেলোয়াড় খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে কি এ ধরনের কোনো উদ্যোগ আছে?

শ্রী বীরেন শিকদার: অবশ্যই আছে। কদিন আগেই আমরা ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি শেষ করলাম। প্রতিটি জেলা থেকে বিভিন্ন বিভাগের ১৪৪ জন খেলোয়াড় বাছাই করে এনে জাতীয় পর্যায়ে দুই মাস ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ভালো খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ফেডারেশনের মাধ্যমে প্রোভাইড করার সুপারিশ করছি। এটা এখনও চলমান আছে।

ঢাকাটাইমস: ক্রিকেটের তুলনায় ফুটবল অনেকটা পিছিয়ে। ফুটবলের উন্নয়নে আপনাদের কী ধরনের পরিকল্পনা আছে?

শ্রী বীরেন শিকদার: এ কথা সত্য যে, ক্রিকেটের তুলনায় ফুটবল ওইভাবে এগোয়নি। ফুটবল আমাদের বাঙালিদের প্রাণের খেলা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশই ফুটবল খেলে। কিন্তু ক্রিকেট সব দেশ খেলে না। তবে আমাদের দেশে ফুটবল অনেক পেছনে চলে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য। পিছিয়ে থাকার কারণ খুঁজে বের করে কাউকে দোষারোপ করার চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। প্রাথমিক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে নতুন খেলোয়াড় বের করে আনার চেষ্টা চলছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলোকেও সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। স্কুল পর্যায়ে টুর্নামেন্ট চালু করা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় আসেন তখনই ক্রীড়ার উন্নয়ন হয়। তিনি না থাকলে ক্রীড়ার কোনো উন্নয়ন হয় না। ক্রিকেটসহ ক্রীড়ায় আমাদের যত সাফল্য সবই শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে।

ঢাকাটাইমস: যুবকদের উন্নয়নে ইতিপূর্বে অনেক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপরও যুব সমাজের বড় একটি অংশ এখনও কর্ম থেকে বঞ্চিত। যে কারণে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। এটাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

শ্রী বীরেন শিকদার: আমাদের দেশে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ যুবক। অন্যান্য দেশে কিন্তু এত যুবক নেই। সেদিক থেকে আমরা কিন্তু সম্ভাবনাময় জায়গায় আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বলেছিলেন প্রতিটি ঘরে ঘরে তিনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কুড়িগ্রাম, বরগুনা এবং গোপালগঞ্জÑ এই তিন জেলায় ৫৬ হাজার ৫৪ যুবককে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আরও সাতটি জেলায় এ কর্মসূচি চলছে। আমরা চেষ্টা করছি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। যুবকদের মাদকাসক্তিসহ অপরাধমূলক কর্মকা- থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন জায়গায় যুব মেলা করছি। সেখানে যুবকদের উদ্যোগে যেসব কাজ হচ্ছে সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস: যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় এ সব প্রশিক্ষণকে সময়োপযোগী করতে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?

শ্রী বীরেন শিকদার: সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুবকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আইসিটি খাতেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। সম্প্রতি মাগুরায় যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে নতুন একটি ট্রেড কোর্স চালু করেছি। সেটি হচ্ছে কবুতর পালন কর্মসূচি। মাগুরায় ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় দেড় শর মতো কবুতরের খামার আছে। খামারিদের এবং এই ব্যবসায় আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে তারা আরো ভালো করবে। তাই এটা করেছি। এছাড়া সম্প্রতি বিজিএমইএর সহযোগিতায় পোশাক খাতের ব্যবস্থাপনা স্তর থেকে কর্মী পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত যারাই প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন সবাই চাকরি পেয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক একটি দিক।

ঢাকাটাইমস: যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অনেক কাজ করছে। কিন্তু অতটা আলোচনায় থাকছে না কেন?

শ্রী বীরেন শিকদার: প্রচার-প্রচারণায় আমাদের মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ আছে। তবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যক্রমের আরও প্রচার-প্রচারণা করা প্রয়োজন। আমরা শিগগির বিষয়টি দেখব। তবে মূল প্রচার-প্রচারণা তো মিডিয়ার কাজ। মিডিয়া আমাদের কাজগুলোকে গুরুত্ব দেবে এটাই আশা করি।

ঢাকাটাইমস: যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের বেশকিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এসব দূর করতে কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?

শ্রী বীরেন শিকদার: আমরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হোস্টেলগুলোকে পাঁচ তলা করে ফেলছি। ইতিমধ্যে প্রতিটি জায়গার কাজ শেষ পর্যায়ে। এটি হয়ে গেলে আবাসন সমস্যার সমাধান হবে। প্রশিক্ষণার্থী বাড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতেও কাজ করছি। এটা আমাদের চিন্তায় আছে।

ঢাকাটাইমস: প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর নিজ নির্বাচনী এলাকায় সময় দিতে গিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না?

শ্রী বীরেন শিকদার: আমাকে একটু বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। প্রতি শুক্রবার আমি এলাকায় চলে যাই। তবে নির্বাচনী এলাকার মানুষকে বলেছি, আমি সারা দেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। আমাকে এখন আগের মতো পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে আমাকে ক্ষমা করতে হবে। তবে এর মধ্য থেকেই আমি সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করব।

ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।

শ্রী বীরেন শিকদার: আপনাকেও ধন্যবাদ।