বড় বিনিয়োগে না গিয়ে ছোট করে শুরু করা ভালো: তানিয়া ওয়াহাব
১৫ এপ্রিল, ২০১৪ ১৯:৩১:৪৬

তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। চামড়া শিল্প খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘কারিগর’-এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার এবং ‘লেদার কেভ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা নারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক। সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকাটাইমসের। বলেছেন নিজের সাফল্যের পেছনের খবর। ‘কারিগর’-এর আগামী দিনের পথ চলা, সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
ঢাকাটাইমস: ‘কারিগর’ গড়ার চিন্তা কোথা থেকে এলো?
তানিয়া ওয়াহাব:আমি সবসময় মনে করতাম আলাদা কিছু করব। ৮টা-৫টা অফিস করতে হবে, এটা ভাবতেই আমার খারাপ লাগত। তাছাড়া প্রতিদিন এক কাজ করতে গিয়ে একঘেয়েমি চলে আসে। তাই আমি চাইতাম প্রতিদিন নতুন কিছু করব। সেই চিন্তা থেকেই ব্যবসায় আসা।
ঢাকাটাইমস: ব্যবসার শুরুতে পরিবারিক ও সামাজিকভাবে কি ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন?
তানিয়া ওয়াহাব: ধার্মিক পরিবারের মেয়ে হয়ে আমি ব্যবসা করব, মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হবে এটা কেউ মেনে নিতে পারছিল না। তখন হাজারীবাগের স্থানীয় মানুষজনও চিন্তা করতে পারেনি একটা মেয়ে এখানে দোকান নিয়ে ব্যবসা করবে। কারণ, হাজারীবাগে এর আগে কোনো মেয়ে ব্যবসায়ী ছিল না। চামড়া শিল্পে তো নেই-ই। তাই দোকান পেতেও সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু পরে দোকানের মালিক আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।
ঢাকাটাইমস: পরিবারের কেউ আগে থেকে ব্যবসায়ী ছিলেন না। নতুন করে শুরু করতে গিয়ে কি ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?
তানিয়া ওয়াহাব: ব্যবসার প্রথম প্রজন্মে একটু বেশিই ধকল পোহাতে হয়। আমি যখন ঠিক করলাম চামড়া শিল্প নিয়ে কাজ করব তখন চামড়াজাত পণ্য তৈরির কারখানাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতাম। কোথায় কাঁচামাল পাওয়া যায় সেটাও নিজে গিয়ে দেখতাম। ছেলেরাও যেসব জায়গায় কখনো যাবে না, মেয়ে হয়ে আমি সেসব জায়গায়ও গিয়েছি। আমার ব্যবসার সব কাগজপত্র আমি নিজে করেছি। কারো ওপর যেন নির্ভরশীল হতে না হয় সেই চেষ্টা করেছি। তাছাড়া নিজের টাকার প্রতি মায়াও ছিল।
ঢাকাটাইমস: শুরুর দিকের বলার মতো এমন কোনো অভিজ্ঞতা কি আছে?
তানিয়া ওয়াহাব: অভিজ্ঞতা তো কম নেই। তবে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে চামড়াজাত দ্রব্য সরবরাহের কাজ পেতে আমাকে দুই বছর ঘুরতে হয়েছে। দিনের পর দিন তাদের অফিসে বসে থাকতে হয়েছে। কিন্তু শেষমেশ কাজটি পেয়েছিলাম। আমার লক্ষ্য ছিল যত কষ্টই হোক আমাকে কাজটি পেতে হবে। এখন আমি বেসিক ব্যাংক, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কাজ করি। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোর ব্যাগ তৈরি করি। সেটা চামড়া বা পাটের হতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাজ করি।
ঢাকাটাইমস:ব্যবসায় কখন থেকে বেশি সাড়া পেতে শুরু করলেন?
তানিয়া ওয়াহাব: ২০০৮ সালে যখন আমি এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে অ্যাওয়ার্ড পাই এরপর থেকে বেশি সাড়া পেতে থাকি। এর আগে একটি দৈনিকে আমাকে নিয়ে ফিচার হয়েছিল।
ঢাকাটাইমস: ব্যবসা নিয়ে খুব ব্যস্ত। কিন্তু পরিবার...
তানিয়া ওয়াহাব: ২০১০ সালের দিকে আমার বিয়ে হয়েছে। বর কলেজে আমার ক্লাসমেট ছিল। পারিবারিকভাবেই আমরা বিয়ে করেছি। আর ও আমার সম্পর্কে আগে থেকেই জানত। বিয়ের আগেও আমার ব্যবসায় ও অনেক সহযোগিতা করেছে। এখন তো করছেই।
ঢাকাটাইমস: আপনার মতো আরও যারা মধ্যম ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তাদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার চিন্তা এলো কোত্থেকে?
তানিয়া ওয়াহাব: আমাদের দেশের বাজারটা কিন্তু অনেক বড়। আমি চিন্তা করলাম বড় একটি কাজ একা করার ক্ষমতা আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের কারো নেই। তাই সবাই মিলে যদি কাজ ভাগ করে নেওয়া যায় তবে কম সময়ে কাজ শেষ করতে পারব। এতে সবাই উপকৃত হবে। আর আপনি যখন অন্যজনকে ওপর থেকে নিচে নামাতে টান দেবেন, এতে কিন্তু আপনিও পেছাবেন। এটা আমরা কেউ ভেবে দেখি না। এই চিন্তা থেকেই এলটিএসই কো-অপারেটিভ সোসাইটি করি।
ঢাকাটাইমস: ‘কারিগর’কে কোথায় নিয়ে যেত চান?
তানিয়া ওয়াহাব: এলটিএসই কো-অপারেটিভ সোসাইটির যারা সদস্য আছি সবাই মিলে সাভার অথবা গাজীপুরে একটি বড় জায়গা নিয়ে ছোট পরিসরে একটি শিল্প এলাকা গড়ে তুলতে চাই। ওখানে সবার কারখানা থাকবে। এছাড়া কর্মীদের জন্যও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা থাকবে। এটা আমাদের একটা স্বপ্ন। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে ‘কারিগর’ও একসময় আরও বড় শিল্পে রূপ নেবে।
ঢাকাটাইমস: আপনাদের এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের কাছে কি চাওয়ার আছে?
তানিয়া ওয়াহাব: সরকার যদি আমাদের জন্য নির্ধারিত একটি জোন করে দিত, যেমনটা ট্যানারি শিল্পের জন্য করা হয়েছে তাহলে আমরা সেখান গিয়ে কারখানা তৈরি করতে পারতাম। এতে ঘন ঘন কারখানার জায়গা পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যেত। আর বিদেশ থেকে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগের সুব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এজন্য ক্রেতাদের নিয়ে মেলাও করা যেতে পারে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্থানীয় বাজার থেকে নির্দেষ্ট পরিমাণ চামড়াজাত দ্রব্য বা পাটজাত দ্রব্য কেনার বাধ্যবাধকতা করে দিলে ক্ষুদ্র শিল্পগুলোর বাজার বাড়ত। কিন্তু এখন আমরা পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভরশীল। উপহার সামগ্রীগুলো চীন থেকেই বেশি আনা হয়। অথচ বাংলাদেশেও এটি করা সম্ভব।
ঢাকাটাইমস: নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
তানিয়া ওয়াহাব: শুরু করার আগে বাজার সম্পর্কে এক বছর ধরে ভালো করে ধারণা নেওয়া উচিত। কোথায় কাঁচামাল পাওয়া যাবে, কীভাবে বানাবে, কোথায় বিক্রি করবে। এ বিষয়গুলোতে ভালোভাবে ধরনা নিয়ে ব্যবসা শুরু করা উচিত। আর শুরুতেই বড় বিনিয়োগ না করে ছোট করে শুরু করা ভালো। এতে ক্ষতি হলেও খুব বেশি হবে না।
(ঢাকাটাইমস/ ১৫ এপ্রিল / এইচএফ/ এআর/ ঘ.)