এক বছরে ২১ খুনে নারায়ণগঞ্জে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। যাদের কোনো শত্রু নেই, বিরোধে জড়ানোর বয়সও যাদের হয়নি, তারা কেন নৃশংসতার শিকার হচ্ছে? তবে এই প্রশ্নের জবাব পেতে ঢাকাটাইমসের মুখোমুখি হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমির হুসাইন স্মিথ
ঢাকাটাইমস: ত্বকী হত্যার পর নারায়ণগঞ্জে একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
সৈয়দ নুরুল ইসলাম: আর্থিক লোভ, জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক কলহসহ নানা কারণে এসব হত্যা হয়েছে। ত্বকী হত্যার সঙ্গে অন্য শিশু হত্যার সম্পর্ক নেই। প্রত্যেকটি ঘটনাই আলাদা। ত্বকী হত্যার ঘটনা র্যাব দেখছে। তারা কিছু রহস্য উদ্ঘাটন করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
ঢাকাটাইমস: এসব কারণে শিশুরাই কেন খুন হচ্ছে?
সৈয়দ নুরুল ইসলাম: শিশুদের অপহরণ করা তুলনামূলক সহজ। তাদেরকে যেকোনো সময় নিয়ে আসা যায়। তাদেরকে হত্যা করতে সময়ও বেশি লাগে না। পারিবারিক বিরোধের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হয়তো তারা শিশু হত্যাকেই অনেকে বেছে নিয়েছে। কারণ তারা পরবর্তী প্রজন্ম। বাবা-মাকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে শিশুদেরকেই তারা আক্রমণ করছে।
ঢাকাটাইমস: শিশু হত্যার ঘটনা তো অন্য কোনো জেলায় হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জে কেন?
সৈয়দ নুরুল ইসলাম: অপরাধীরা কোনো স্থান বেছে অপরাধ করে না। তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে যেই বিষয়টিকে সহজ মনে করে সেই দিকেই অগ্রসর হয়।
ঢাকাটাইমস: তাহলে কী আমরা বলবো যে নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় শিশু হত্যার প্রবণতা বেড়েছে?
সৈয়দ নুরুল ইসলাম: যারা খুনগুলো করেছে তারা নিম্নআয়ের মানুষ। একেবারে নিম্ন শ্রেণি বলতে যা বুঝায় তারা তাই। অতএব তারা অন্ধকারের মধ্যে আছে। ত্বকী হত্যার বিচার হয়নি সে কারণেই এ ঘটনাগুলো ঘটছে, আমি একেবারেই তা মনে করি না। আর্থিক-পারিবারিক দ্বন্দ্ব, মাদকের অর্থ জোগানের জের ধরে এসব খুন হচ্ছে।
ঢাকাটাইমস: এরই মধ্যে অনেক শিশুর মরদেহ শীতলক্ষ্যায় পাওয়া গেছে। এটা কী টহল না থাকায়?
সৈয়দ নুরুল ইসলাম: একটা নদী অনেক বড় ব্যাপার। নদীতে যে নৌযানগুলো চলাচল করে সেগুলো থেকে কেউ যদি একটা মরদেহ নদীতে ফেলে তা পুলিশের নজরদারির মধ্যে আনা খুবই কঠিন একটি কাজ।
ঢাকাটাইমস: শিশু হত্যর মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই এমন অভিযোগ করছে ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি নিয়ে বলুন।
সৈয়দ নুরুল ইসলাম: এ বিষয়টি একেবারেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। নারায়ণগঞ্জে বেশিরভাগ শিশু হত্যার পর পুলিশ দ্রুততার সাথে আসামি গ্রেপ্তার করেছে। সোনারগাঁও শিশু সোয়ায়েব হত্যা, বক্তাবলীর নয় টুকরা করে ইমন হত্যা, মাসদারের সিয়াম হত্যা, রূপগঞ্জে মোসতাক হত্যাসহ অনেক হত্যার আসামিদের আইনের আওতায় এনে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর প্রত্যেকটিতে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। কিছু মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলারগুলোর অভিযোগপত্র দ্রুত আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
ঢাকাটাইমস: ত্বকী হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই এক পক্ষ অপর পক্ষকে হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে কি না।
সৈয়দ নুরুল ইসলাম: সভা-সমাবেশে প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়া ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে না। তবে জনপ্রতিনিধিদের মুখ থেকে এ ধরনের বক্তব্যে জনমনে শঙ্কার সৃষ্টি হয় এবং নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণেই এমনটা ঘটছে। সবাইকেই এ বিষয়ে সচেতনভাবে কথা বলা প্রয়োজন।
ঢাকাটাইমস: সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে সোনারগাঁওয়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নির্বাচনের প্রভাব ফেলবে কি না?
সৈয়দ নুরুল ইসলাম: সম্প্রতি সোনারগাঁওয়ে মেঘনা ঘাটে যে সহিংসতা ঘটেছে তা নির্বাচনকে ঘিরে নয়। সুযোগ সন্ধানীরা এটাকে নির্বাচনী কালার দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা তদন্ত করে জানতে পেরেছি স্থানীয় মিল-কারখানায় মালামাল সাপ্লাই, বালু ভরাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সেই বিরোধেরই জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনা তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।