জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপনা করছেন তিনি। শিক্ষক চাকরি জীবনের শুরু থেকেই রাখছেন কৃতিত্বের সাক্ষর। এবার নিয়োগ পেলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে। তার তাতেই ইতিহাসের পাতায় উঠে গেলো তার নাম। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে কোনো নারী নিয়োগ পাননি এই পদে। ২৮ বছরের শিক্ষকতা পেশায় বিভাগীয় প্রধান, যৌন নিপীড়ন সেলের প্রধান এবং বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবেও রেখেছেন কৃতিত্বের ছাপ। উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ঢাকাটাইমসের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিএইচ রাহাত
ঢাকাটাইমস: শিক্ষকতা পেশায় কোথায় কখন যুক্ত হন?
ফারজানা ইসলাম:১৯৮২সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেই। ১৯৮৬ সালে যোগ দেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
ঢাকাটাইমস:শিক্ষকতা পেশায় মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী?
ফারজানা ইসলাম:শিক্ষার্থীরা কী চায় তা বুঝতে হবে। তারা কি জানে, আর কি জানে না তাও অনুধাবন করতে হবে। আমিও একজন শিক্ষার্থী। শেখার উদ্দেশ্য আমিও তাদের কাছে যাই এবং শিখি।
ঢাকাটাইমস: অনেকদিন ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করেছে। দায়িত্ব পেয়ে আপনার প্রথম পদক্ষেপ কি হবে?
ফারজানা ইসলাম:দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়কে সচল করার উদ্যেগ নেওয়া হবে। আমাদের ক্যাম্পাস সস্পর্কে দেশে এবং দেশের বাইরে যে বিরুপ প্রভাব পড়েছে তা পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হব।
ঢাকাটাইমস: উপাচার্য হিসেবে আপনি কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিবেন?
ফারজানা ইসলাম: প্রথমত শিক্ষার গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিল বৈঠকের ব্যবস্থা করব। দলমত নির্বিশেষে যত দ্রুত সম্ভব সবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করব। একই সঙ্গে বিভাগ, অনুষদ, ইনস্টিটিউট ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেব।
ঢাকাটাইমস: নারী হিসেবে আপনিই প্রথম উপাচার্য, এটাকে আপনি কি ভাবে দেখছেন?
ফারজানা ইসলাম: আমি শুধু নারী কিংবা পুরুষ হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন সময়ে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এক্ষেত্রে মহামান্য আচার্য এবং প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে তারা জাতীর জন্যে বিশেষ করে নারীদের জন্য নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।
ঢাকাটাইমস: ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
ফারজানা ইসলাম: আমাকে কিছু সময় দিন, তারপর বিষয়টা নিয়ে আমি প্রশাসনে সবার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
ঢাকাটাইমস: শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য আপনার পরামর্শ কি?
ফারজানা ইসলাম:পরামর্শ একটাই, পড়াশুনা করতে হবে। পড়াশুনার বাইরে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে জড়িত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে উন্নতি এবং গৌরবময় মর্যাদা ফিরে পাবে সে ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও দায়িত্ব পালনের জন্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
ঢাকাটাইমস: প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার সব পদই এখন নারীদের দখলে। তবু নারীরা অবহেলিত, বৈষম্য শিকার। এর কারণ কি?
ফারজানা ইসলাম: এসব জায়গায় হাতে গোনা কয়েকজন নারী এগিয়ে এসেছেন। তবে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ সব জায়গায় নারীরা পুরুষের তুলনায় বঞ্চিত। তারা ঘরে বাইরে পথে-ঘাটে বঞ্চিত হয়। বঞ্চনা থেকে নারীরা কিভাবে বেরিয়ে আসতে পারে, সে জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নারী-পুরুষ উভয় মানুষ, উভয় বুদ্ধিমান, উভয় মরণশীল, একই দেশের সমান অংশীদার। মূলত বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের ভাবনার পরিবর্তন, কাজের পরিবর্তন, প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তন এবং ভাষার পরিবর্তন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নারীদের আরো এগিয়ে আসতে হবে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করা প্রয়োজন।
ঢাকাটাইমস: নারী অধিকার নিশ্চিত করতে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে আপনার কাছে।
ফারজানা ইসলাম: নারীদের স্বার্থ এক নয়, তাদের মধ্যেও পার্থক্য আছে। সমাজ ভেদে তাদের চাহিদারও পার্থক্য আছে। দলিত নারীরা অর্থাৎ যারা সমাজে নি¤œ শ্রেণী হিসেবে চিহ্নিত সেই নারীদের বিভিন্ন স্বার্থ চিন্তা করতে হবে। সমাজে যে তাদের অভিন্ন চাহিদা আছে তা পূরণ করতে হবে।
ঢাকাটাইমস: বর্তমানে আপনি যৌন নিপিড়িন সেলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা সুবিচার পায় কি না?
ফারজানা ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয় যে এমন একটি যৌন নিপিড়িন সেল আছে, তা অনেকে জানে না। এই সেলে প্রায় চার বছর ধরে আমি দায়িত্ব পালন করছি। চেষ্টা করি নিষ্ঠার সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আবার অনেকে আছে এটাকে অপব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। তবে আমরা সতর্ক আছি। যাতে সবাই ন্যায় বিচার পায়।