প্রতিবারের মতো এবারও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু আলু সংরক্ষণের সেই সমস্যা এখনও রয়েই গেছে। যে কারণে কৃষক বাধ্য হচ্ছেন উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে আলু বিক্রি করতে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারের কী করছে জানতে ঢাকাটাইমসের মুখোমুখী হয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
ঢাকাটাইমস: আলু দাম হঠাৎ পড়ে যাওয়ার কারণ কী?
মতিয়া চৌধুরী: টানা হরতাল-অবরোধের কারণে চাষিরা সময় মতো আলু বিক্রি করতে পারেননি। কিন্তু যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে তখন সবাই একসঙ্গে বাজারে আলু নিয়ে এসেছে। এতে ক্রেতার তুলনায় সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা কমে গেছে। ক্ষেত থেকে সবাই একসঙ্গে আলু না তুললে হয়ত এই পরিস্থিতি দেখা দিত না।
ঢাকাটাইমস: আলুর দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিপুষিয়ে নিতে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে?
মতিয়া চৌধুরী: আলুর ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকরা বিপদে পড়েছেন বলে মনে করা হলেও তা ঠিক নয়। এমওপি সার ব্যবহারের কারণে একটি গাছে দ্বিগুণ হারে আলুর ফলন হচ্ছে। এতে আলু নিয়ে কৃষকরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। তবে আলু নিয়ে কৃষকদের এই সমস্যা সাময়িক। আগামী এক মাস পরেই এ পরিস্থিতি আর থাকবে না। আলুর দাম বেড়ে যাবে।
ঢাকাটাইমস: ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ভর্তূকি দেয়া হবে কি-না?
মতিয়া চৌধুরী: সব কিছুতে ভর্তুকি দিলে অর্থনীতি সামনের দিকে এগুতে পারবে না। সরকার সার, বীজ ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছে। এরপর আর কত ভর্তুকি দেবে?
ঢাকাটাইমস:এভাবে প্রতিবার ক্ষতির মুখে পড়লে কৃষক আলু চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবো না তো?
মোটেও না। কৃষক কখনও অল্পতেই ঘাবড়ে যায় না। ফলন ভাল হলে কেউ তো অখুশী নয়। তবে হ্যাঁ, সাময়িকভাবে দাম কিছুটা পড়ে গেছে। কিন্তু এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে। তাছাড়া সরকার সব সময় কৃষকদের পাশে আছে। প্রয়োজনে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
মতিয়া চৌধুরী: প্রতিবারই আলুর বাম্পার ফলন সামাল দিতে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ কি সরকারের আছে?
প্রত্যেক বছরই আলুর ফলন নিয়ে একই সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা মোকাবিলায় আলু রপ্তানির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিপস বানানোর জন্য বিশেষ জাতের আলুর চাষ এখন দেশে হচ্ছে। যে কারণে চিপস আমদানি কমে গেছে। সরকারের প্রণোদনায় বেসরকারি উদ্যোগে ৭০০ কনটেইনার আলু রাশিয়ায় যাচ্ছে। দিনে দিনে রপ্তানিও বাড়ছে।
ঢাকাটাইমস: আলু সংরক্ষণে হিমাগারে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তার পর আবার লোডশেডিংয়ের কারণে আলু নষ্ট হয়ে যায়...
মতিয়া চৌধুরী: দেশে ৩৮০টি হিমাগার আছে। এসব হিমাগারে সংরক্ষণের পরও অনেক আলু বাইরে থেকে যায়। তবে আগে লোডশেডিংয়ের কারণে হিমাগারে আলু নষ্ট যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এখন দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে। বিদ্যুতের সমস্যা আগের মতো আর নেই। তাই হিমাগারে আলু এখন আর নষ্ট হয় না।
ঢাকাটাইমস: হিমাগারের বাইরে যেসব আলু থাকে এগুলো সংরক্ষণে কী করা যায়?
মতিয়া চৌধুরী: দেশীয় পদ্ধতিতে মাচা তৈরি করে আলু সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে তিন মাস পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করা যায়।
ঢাকাটাইমস: ইতোপূর্বে ভাতের ওপর চাপ কমিয়ে আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। আপনি কী বলবেন?
মতিয়া চৌধুরী: আমি সংসদেও এই কথা বলেছি, ক্ষুধার জ্বালা সইতে রাজি নই, তবে প্রাচুর্যের বিড়ম্বনা সইতে রাজি। জনগণকে ভাতের বদলে আলু খাওয়ার মতো আহম্মকি পরামর্শ দেব না। তবুও আল্লাহর কাছে বলব আল্লাহ আরো আলু দাও।
ঢাকাটাইমস: রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কী ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়...
মতিয়া চৌধুরী: রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বা অর্থনৈতিক কর্মকা-ে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এতে বৈদেশিক ও স্থানীয় উভয় ধরনের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়। তারপরেও গত বছরের শুধু ডিসেম্বরে যে পরিমাণ বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ হয়েছে তা গত পাঁচ বছরের ডিসেম্বর মাসগুলোতে সর্বনিম্ন নয়।