logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
আগামী বর্ষার আগেই সন্দ্বীপে জাহাজ চলাচল করবে: মাহফুজুর রহমান মিতা
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:১৪:৫৩
image


চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের সংসদ সদস্য তিনি। ছাত্রজীবন থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা (উত্তর) আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। সম্প্রতি মুখোমুখি হন ঢাকাটাইমসের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ

ঢাকাটাইমস: আপনার বাবা সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার আপনি হয়েছেন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

মাহফুজুর রহমান মিতা: আমার বাবা প্রয়াত মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে সন্দ্বীপ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এক সময় সন্দ্বীপে পাকা রাস্তা ছিল না। আমার বাবা সংসদ সদস্য থাকতে সন্দ্বীপে পাকা রাস্তা করে দিয়েছেন। তার পর যারা সংসদ সদস্য ছিলেন তাদের সময় এলাকায় নিয়মমাফিক কিছু কাজ হয়েছে। সংসদে সন্দ্বীপের মানুষের জন্য কথা বলার কেউ ছিল না। যার ফলে সন্দ্বীপে যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তার ছিটেফোঁটাও হয়নি। এবার সন্দ্বীপের মানুষ আমার বাবার অবদানের কথা স্মরণ করে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। স্বাভাবিক ভাবে তাদের প্রত্যাশাও আমার কাছে অনেক।

ঢাকাটাইমস: নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কী ছিল?

মাহফুজুর রহমান মিতা: এক সময় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে স্টিমার সার্ভিস ছিল। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর সংসদ সদস্য নিজের ব্যক্তিগত লাভের আশায় স্টিমার সার্ভিস বন্ধ করে দেন। এর পরিবর্তে তার মালিকানায় বেসরকারিভাবে নৌ সার্ভিস চালু করে। যেখানে ফিটনেস বিহীন লঞ্চগুলো দেয়া হয়েছে। এখনও এগুলো চলছে। আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অতিদ্রুত আমি এখানে সরকারি উদ্যোগে জাহাজ সার্ভিস চালু করব। আমি আশা করি আগামী বর্ষার আগেই সন্দ্বীপে জাহাজ চলাচল করবে।

ঢাকাটাইমস: সন্দ্বীপের রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কী?

মাহফুজুর রহমান মিতা: বলতে গেলে গত দশ বছরে সন্দ্বীপে রাস্তাঘাটের খুব একটা উন্নয়ন কাজ হয়নি। এলজিইডির ছোট ছোট কিছু কাজ হয়েছে। আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রাস্তাঘাটের উন্নয়নের কথাও ছিল। ইতিমধ্যে আমি এলজিইডি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। আশা করি সবার সহযোগিতা পাব।

ঢাকাটাইমস: সন্দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয়বহুল বলা হয়; এটা কেন?

মাহফুজুর রহমান মিতা: এটা ঠিক জীবনযাত্রার ব্যয় ঢাকার তুলনায় সন্দ্বীপে বেশি। কারণ হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাছাড়া সন্দ্বীপে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় তা দিয়ে ওই অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মেটে না। চট্টগ্রাম থেকে চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র আমদানি করতে হয়। ফিটনেস বিহীন জাহাজে করে এসব পণ্য আমদানি করতে হয়। এতে খরচও বেশি হয়। তাই সরকারি পর্যায়ে জাহাজ সার্ভিস থাকলে পরিবহন খরচ কমে আসবে।

ঢাকাটাইমস: শিক্ষায় সন্দ্বীপের অবস্থান কোথায়?

মাহফুজুর রহমান মিতা: চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে শিক্ষাখাতে সন্দ্বীপ প্রথম। ছোট্ট একটি উপজেলায় পাঁচটি কলেজ আছে। এর মধ্যে একটি ডিগ্রি কলেজ আছে। এছাড়া সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ও আছে। আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল সন্দ্বীপে অনার্স কোর্স চালু করা। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী সেশনে অন্তত তিনটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করতে পারব বলে আমি আশাবাদী।

ঢাকাটাইমস: সন্দ্বীপে সরকারি চিকিৎসাসেবা অতটা পৌঁছে না বলে অভিযোগ আছে ...

মাহফুজুর রহমান মিতা: স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা নিয়ে আমরা খুব বিপদে আছি। সন্দ্বীপে সাতজন চিকিৎসকের পোস্টিং আছে কাগজপত্রে। বাস্তবে সাতজন সন্দ্বীপে নেই। আমি এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশেষ করে মায়েদের মাতৃত্বকালীন সেবা নিশ্চিতের জন্য একজন গাইনি বিশেষজ্ঞকে দেয়ার দাবি জানিয়েছি। গাছুয়ায় সরকারি হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা করব। এর বাইরে বেসরকারি উদ্যোগে কয়েকটি হাসপাতাল হয়েছে; কিন্তু সব জায়গায় একই সমস্যা, চিকিৎসক নেই। সমুদ্র পরিবেষ্টিত দ্বীপাঞ্চল হওয়ায় চিকিৎসকরা সেখানে থাকতে চান না।

ঢাকাটাইমস: সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কথা বলছে। কিন্তু সন্দ্বীপে এখনও ওইভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। আপনি এ ব্যাপারে কী করবেন?

মাহফুজুর রহমান মিতা: বিদ্যুৎ না পৌঁছায় সন্দ্বীপের মানুষ জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল। মাত্র চারশ’ গ্রাহক সরকারিভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। তবে খুশির বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালে সন্দ্বীপে গিয়ে দুটি জেনারেটর দেয়ার কথা বলেছিলেন। গত সপ্তাহে ওই জেনারেটর দুটি সন্দ্বীপ পৌঁছেছে। এর মাধ্যমে আরও দুই হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে পারব। এছাড়া সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে সন্দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার চিন্তা চলছে।

ঢাকাটাইমস: সন্দ্বীপে জলদস্যুদের উৎপাতের কথা শোনা যায় ...

মাহফুজুর রহমান মিতা: আসলে সন্দ্বীপের জেলেরা জলদস্যুদের কারণে কষ্টে আছেন। তবে জলদস্যুরা সন্দ্বীপে অবস্থান করতে পারে না। জেলেরা যখন মাছ ধরতে সাগরের মাঝে যান তখন এসব জলদস্যু আক্রমণ করে। কারণ, রাজনৈতিকভাবে আমাদের মতপার্থক্য থাকলেও জলদস্যু ও ডাকতদের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সবার দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এদের প্রতিহত করে আসছি এবং ভবিষ্যতেও করব। তবে জলদস্যুদের মোকাবিলা করার জন্য কোস্টগার্ড আছে। কিন্তু তাদের সক্ষমতা সেই তুলনায় নেই।

ঢাকাটাইমস: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, দলকে গুছিয়ে আবার নতুন আন্দোলনের ডাক দেবেন।

মাহফুজুর রহমান মিতা: বিএনপিকে ঘর গোছানোর জন্য পাঁচ বছর সময় তো আমরা দিয়েছি। ঘর গুছিয়ে তারপর তারা আসুক। বিএনপি নেত্রী সরকারকে অবৈধ বলে। অবৈধদের কাছে আবার দাবি কীসের? কোনটা বৈধ কোনটা অবৈধ এটা আগে তাকে বুঝতে হবে।

ঢাকাটাইমস: জাতীয় নির্বাচনে না গেলেও বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

মাহফুজুর রহমান মিতা: বিএনপির জন্ম হয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই আগামীতে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা মনোবল ও ঐকান্তিক সাহসিকতার কারণে আমরা ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। বিএনপি বুঝে গেছে নির্বাচন ছাড়া কোনো উপায় নেই। ক্ষমতা পেতে হলে নির্বাচনের মাধ্যমেই পেতে হবে। তাই তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাচ্ছে।