logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
বিএনপি কাকে নিয়ে রাজনীতি করবে এটা একান্তই নিজস্ব সিদ্ধান্ত: ড. মঈন খান
০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ২২:৩৯:২০
image


তিনি বিএনপির একজন নীতি নির্ধারক, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ দিন। আলোচিত বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক, সরকারবিরোধী আন্দোলন ও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কিরণ সেখ।

ঢাকাটাইমস: বিএনপি যে আওয়ামী লীগের প্রকৃত বিকল্প তার পক্ষে সুনির্দিষ্ট যুক্তি কী?

ড. মঈন খান: একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোন দল কার বিকল্প সেটা চিরদিনের জন্য নির্দিষ্ট না-ও থাকতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রক্রিয়াটি এভাবেই তৈরি করা যেন দেশের জনগণ একটি নির্দিষ্ট সময় পরে পুনরায় বিকল্প খুঁজে নেওয়ার সুযোগ পায়। দেশ পরিচালনার মূল অধিকার হচ্ছে জনগণের। আর সে অধিকারটি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রতিনিধির হাতে তুলে দিতে পারে। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, সেই স্বার্বভৌমত্ব একটি নির্দিষ্ট সময় পরে বারবার জনগণের হাতে ফিরে আসে।

নিকট-অতীতের বিভিন্ন জরিপ ও সমীক্ষার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, দেশের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষের সমর্থন বিএনপির প্রতি। তা সত্ত্বেও একটি প্রহসনমূলক ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছে একটি অপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদের মাধ্যমে। এটা শুধু আমার কথা নয়; বিগত এক মাসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়গুলোই উঠে এসেছে। দেশের জনগণের বিশাল একটি অংশ বর্তমান সরকারের দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, দলীয়করণ, মানুষের অধিকার হরণ, বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, জেল-জুলুম, হত্যা, গুম, খুন থেকে মুক্তি চায়। এজন্য তারা আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিএনপিকে বেছে নিতে চাইছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সবার কাছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠত।

ঢাকাটাইমস: বিদেশি রাষ্ট্রগুলো এই সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

ড. মঈন খান: বহির্বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতায় বলা যাবে না যেÑ তারা এই অপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে, একমাত্র ভারত ছাড়া। এমনকি রাশিয়া সরকারের যে বিবৃতি প্রকাশ হয়েছে তাতে স্পষ্ট বলা আছে যে, তারা ভবিষ্যতে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত একটি সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। অথচ গণমাধ্যমে ওই বিষয়টিকে অনেকটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বেলায় পরবর্তী সময়ে আমরা এই বিষয়টি দেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস একটি সংশোধনী আনতে বাধ্য হয়েছে যে, তারা বর্তমান সরকারকে কোনো সমর্থন জানায়নি। বরং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং রাশিয়া স্পষ্ট ভাষায় বারবার বলেছে যে, বাংলাদেশে অবিলম্বে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অর্থবহ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। যার মাধ্যমে দেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলিত হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

ঢাকাটাইমস: সরকার বলছে বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে আসলে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

ড. মঈন খান: বিএনপি কাকে নিয়ে রাজনীতি করবে এটা একান্তই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। অন্য একটি রাজনৈতিক দল বলে দিতে পারে না বিএনপি কাকে নিয়ে রাজনীতি করবে। কারণ বিএনপি কখনো আওয়ামী লীগকে বলে দেয়নি তারা কোন দলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে রাজনীতি করবে।

১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে একজোট হয়ে রাজনীতি করলে হালাল হয়ে যায়। অথচ বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করলে সেটা হারাম হবে? বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট তৈরি করেছে। যেটা সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের প্রয়োজনে পৃথিবীর সব দেশেই হয়ে থাকে। এই মুহূর্তে ব্রিটেনে এমন দুটি দলের জোট করে সরকার গঠন করা হয়েছে যাদের নীতি ও আদর্শ পরস্পর বিরোধী। এ রকম ভূরিভূরি উদাহরণ আছে। কাজেই আলোচনার পথে এটি কোনো বাধা হতে পারে না। আসল কথা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার তাদের এটা একটা কৌঁসলমাত্র।

ঢাকাটাইমস: জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। এখন এই কমিশনের অধীনেই উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে ...

ড. মঈন খান: জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের সরকার পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটি হয় না। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারের যতটা প্রভাব থাকে তার তুলনায় সংসদ নির্বাচনে বেশি থাকে। এমনটাও হয় যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো জায়গায় সরকারি দল না জিতে মানুষের কাছে এমন একটি মিথ্যা ধারণা সৃষ্টি করতে চায় যে, তারা নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করছেন না। আসলে এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সরকার হেরে যাওয়ার ভয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর এই নির্বাচন স্থগিত করে রেখেছে। আর উপজেলা নির্বাচনে কোনো দলীয় মনোনীত প্রার্থী থাকবে না। বরং স্থানীয় নেতৃত্বের অংশগ্রহণে এটি অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকাটাইমস: মন্ত্রীরা বলছেন সরকার পাঁচ বছর মেয়াদকাল পূর্ণ করবে। সেক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে যে আলোচনা তা পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।

ড. মঈন খান: বর্তমান সরকার আদৌ জনগণের প্রতিনিধি নয়। এক্ষেত্রে ৫ বছর তো দূরের কথা বর্তমান সরকার আর এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকতে পারে কি না, এই প্রশ্ন দেশের বিবেকবান মানুষের। এছাড়া বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোও বলেছে, সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তারা বারবার সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে। এক্ষেত্রে সরকারের সাংবিধানিক সর্বোচ্চ মেয়াদের প্রশ্নটি একেবারেই অবান্তর।

ঢাকাটাইমস: বিএনপি ইতিপূর্বে যত আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তাতে নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা খুব একটা দেখা যায়নি। কেন?

ড. মঈন খান: রাজনীতির বাস্তবতা সত্যিকার অর্থে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীদের শতভাগ সম্পৃক্ততা ছিল। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে এই বিরোধীদলীয় জোট। সরকার সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও বিনা নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে বাধ্য হয়েছে। পাশাপাশি বাকি আসনগুলোতেও ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছে। কাজেই এই অবস্থায় আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীরা তথা সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না বলে পত্রপত্রিকায়, টকশো ও মিডিয়াতে যে ধোঁয়া তোলা হচ্ছে তা স্পষ্ট সরকারি দল নিয়ন্ত্রিত কুশীলবদের চাপাবাজি মাত্র।

ঢাকাটাইমস: আপনাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়বে এরকম কী কী কর্মসূচি দিতে পারেন?

ড. মঈন খান: বিএনপি বিগত ৫ বছর যে আন্দোলন করেছে তার মূল উপজিব্য ছিল জনগণ। আমরা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী যার প্রমাণ রেখেছি সারাদেশে সমাবেশ-র‌্যালি, জনসংযোগ, মিছিল, মিটিং, মহাসমাবেশ, রোডমার্চ, মানববন্ধন, সেমিনার এবং ওয়ার্কশপের মধ্য দিয়ে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সারাদেশের পথে-প্রান্তরে, জেলা, বিভাগীয় শহরে ও রাজধানীতে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ করেছেন। কিন্তু কোথাও শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত হয়নি। কিন্তু সরকার গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভিন্নমতের মুখ স্তব্ধ করে দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে কোনো সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ আর অবশিষ্ট নেই। তার পরও আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপি যে কোনো আন্দোলনের ডাক দিক না কেন দলের নেতাকর্মী ও জনগণের তাতে পূর্ণ সম্পৃক্ততা থাকবে।