ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহিদ আকতার হোসাইন। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজন উপ-উপাচার্য নিয়োগের পর তাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে রাজনীতি থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা, সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে।
ঢাকাটাইমস: বিএনপির কি জামায়াতকে ছেড়ে নতুন করে রাজনীতি করা উচিত বলে মনে করেন?
শহিদ আকতার হোসাইন: বিএনপি যদি সুষ্ঠ ধারার রাজনীতি করতে চায়। তাহলে অবশ্যই জামায়াতকে ছেড়ে রাজনীতি করতে হবে। গণতন্ত্রের রাজনীতি করতে হলে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তেই হবে।
ঢাকাটাইমস: অনেকে বলছেন, সরকার ইচ্ছা করলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। তাহলে কেন তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না?
শহিদ আকতার হোসাইন: আইন করে নিষিদ্ধ করলে একটা ভয় থেকে যায়। তারা হয়তো প্রকাশ্যে রাজনীতি করবে না। কিন্তু ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন সহিংসতা করতে পারে। এক্ষেত্রে অন্য দলগুলো যদি তাদেরকে আশ্রয় না দেয় তাহলে তাদেরকে থামিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। আমি মনে করি সরকারও হয়তো সেভাবেই চিন্তা করছে। সরকারের সামনে যদি কোনো পথ খোলা না থাকে তাহলে হয়তো সরকার আইন করেই নিষিদ্ধ করবে।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনের পর সরকার আন্তর্জাতিক সমর্থন পাচ্ছে। আপনি কি মনে করেন সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে?
শহিদ আকতার হোসাইন: স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতির সাথে সরকারের টিকে থাকার কোন সম্পর্ক নেই বলে মনে করি। সরকার যদি জনকল্যাণমূলক কাজ করে, তারা যদি তাদের ওয়াদা ঠিক রাখতে পারে, দুর্নীতিমূক্ত সরকার গঠন করতে পারে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে, দেশে সহিংসতা বন্ধ করতে পারে তাহলেই সরকার টিকে থাকতে পারবে। জনগণ কিন্তু উগ্র রাজনীতি চায় না। তারা চায় অর্থনৈতিক উন্নয়ণ, শান্তিতে বসবাসের নিশ্চয়তা। এই নিশ্চয়তা যদি সরকার দিতে পারে। তাহলে তারা টিকে থাকতে পারবে।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করেনি বলে দাবি করা হচ্ছে। এভাবে সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করলে কি গণতন্ত্র বিপন্ন হবে বলে আপনি মনে করেন?
শহিদ আকতার হোসাইন: নির্বাচনে যদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না হতো, সহিংসতা না হতো তাহলে অনেকে ভোট কেন্দ্রে আসতো। পরিস্থিতি শান্ত থাকার পরও যদি মানুষ ভোটকেন্দ্রে না আসতো তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন এ কথাটা বলা যেতো। জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসতেই দেয়া হয়নি। অনেকে ভয়ে আসেনি। এরকম পরিস্থিতির কারণে মানুষ রাজনীতি বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। সরকার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। বিরোধীদল প্রতিহত করতেই পারে। তাই বলে জ্বালাও পোড়াও আর সহিংসতা করলে নিরাপদে ভোট দেয়া অসম্ভব। এসব কারণে ভোটের কম হয়েছে। ভোট দেয়ার চেয়েতো জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই বলে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে বলে মনে করি না।
ঢাকাটাইমস: অতীতে জামায়াতের সাথে জোট করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছে। তাহলে এখন কেন নিষিদ্ধের দাবি করা হচ্ছে?
শহিদ আকতার হোসাইন: সেই সময়ের আন্দোলনটা দেশের জন্য হয়েছিল। যখন ভাল একটি আন্দোলনে কেউ অংশগ্রহণ করতে চায় তখনতো তাকে নিতে হয়। তখনতো বলা যায় না যে তুমি এসো না। উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয় যে কেউ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে। জনকল্যাণে জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যে কেউ আসতে পারে। আন্দোলন করা আর বিতর্কিত একটি দলকে মন্ত্রীত্ব দেয়া এক কথা নয়।
ঢাকাটাইমস: সংকট সমাধানে সবাই আলোচনার কথা বলছে কিন্তু আলোচনায় কেউ বসছে না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের ভবিষৎ কি হবে বলে মনে করেন?
শহিদ আকতার হোসাইন: আলোচনা হওয়া উচিত। দেশতো আর এভাবে চলতে পারে না। দুই মেরু দুই দিকে। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যদিও সরকার দেশ শাসনের ভার নিয়েছে। তাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে আলোচনা শুরু করার। কিভাবে পরবর্তী নির্বাচন হবে। শান্তি বজায় থাকবে। সেটা সবার সাথে আলোচনা করতে হবে। যেহেতু বিএনপি একটি বড় দল। তাদের সাথে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার দরকার।
ঢাকাটাইমস: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শহিদ আকতার হোসাইন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন: মানিক মোহাম্মদ।