ঢাকাটাইমস: বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে নতুন সরকারের সামনে অনেক কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো কী এবং সেগুলো মোকাবিলায় আপনি কী করবেন?
শাহরিয়ার আলম: আন্তর্জাতিক কূটনীতি এখন সরাসরি অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেহেতু টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেছে তাই এখন আমেরিকার কাছ থেকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। পোশাক শিল্প নিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদি একটা সমস্যায় পড়তে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তড়িৎ সিদ্ধান্তের কারণে সেই সমস্যা থেকে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছি। তাছাড়া শ্রমিকদের জন্য নতুন যে মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করাও এখন মূল চ্যালেঞ্জ। তবে গত চার বছর ধরে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি।
ঢাকাটাইমস: এই চ্যালেঞ্জটা কী?
শাহরিয়ার আলম: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা শেষ করা। রায় বাস্তবায়নে যেন কোনো বাধা না থাকে। কয়েকজন কূটনীতিকের সঙ্গে আমরা কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, ‘তোমরা জামায়াত নিষিদ্ধ চাইছ। কিন্তু তোমরা তো ৮৬, ৮৮, ৯৬ জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা করেছো।’ আমি তাদের দৃঢ়ভাবে বলেছি, এ ধরনের তথ্য তোমাদের কাছে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তোমরা যদি স্ব স্ব দূতাবাসে তৎকালীন রেকর্ড ঘেটে দেখ তবে সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।
ঢাকাটাইমস: সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। যেখানে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
শাহরিয়ার আলম: বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। পরবর্তী নির্বাচন কিভাবে হবে, সেজন্য আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। জাতি হিসেবে প্রতিটি নির্বাচনের আগে আমরা সহিংসতা তো মেনে নিতে পারি না। আলোচনার জন্য সরকার বরাবরই বলে আসছে। এজন্য বিএনপিকে জামায়াতের সখ্যতা ত্যাগ করতে হবে। ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি বাদ দিতে হবে।
ঢাকাটাইমস: ইইউ পার্লামেন্টের অনেকে সদস্যই বলেছেন বাংলাদেশ ক্রমে গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে আসছে...।
শাহরিয়ার আলম: একটা মতামত যখন সংসদে পাস হয় তখন আলাদা মতামত আসতেই পারে। যেমন হাউজ অব কমন্সে গত ১৭ জানুয়ারি একটা রেজুলেশন হয়েছে। সেটা পেছনের সারির নেতাদের রেজুলশন। সেখানে সামনের সারির কেউ ছিলেন না। তাই এ বিষয়গুলো আমলে নেয়ার কোনো কারণ নেই।
ঢাকাটাইমস: বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছেন। কিছুদিন আগে আপনার সঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে আপনাদের ওপর কোনো চাপ আছে কিনা?
শাহরিয়ার আলম: রাষ্ট্রদূতরা যা বলেছেন আর নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন সেটার মধ্যে খুব বেশি দূরত্ব নেই। খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগের দিন এক কথা বলেছেন। আবার তার ছেলে তারেক রহমান আরেক কথা বলেছেন। এসবই প্রমাণ করে সত্যিকার অর্থে বিএনপি আলোচনা চায় কিনা। তবে দু’-একজন রাষ্ট্রদূত চেষ্টা করেছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা নির্বাচন দেয়ার কথা বলছেন। এ ক্ষেত্রে চাপ আছে তা আমি বলব না। তবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে বিএনপি সন্ত্রাস এবং জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করবে।
ঢাকাটাইমস: ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়। যদিও সেটা পাস হয়নি। সাবেক কূটনীতিকরা এটাকে দেশের জন্য অপমানজনক বলছেন। আপনি কী মনে করেন?
শাহরিয়ার আলম: এক্ষেত্রে আমি কিছুটা সম্মতি দেব। গত তিন চার মাস এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা গেছি, যেখানে সরকার ও মন্ত্রিসভা পরিবর্তন হয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এত প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়েছে। এমন সময়ে এরকম একটা রেজুলেশন আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এই জায়গায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ত সক্রিয়, তবে কোনো সমস্যা আছে কি-না সেটা আমি খতিয়ে দেখব। এমন একটা আলোচনাই বা আসবে কেন! আমাদের গ্রাউন্ড রিয়েলিটি তো এতটা খারাপ না। হয়ত আমরা সেই জায়গাটিতে ঠিকমতো যোগাযোগ বজায় রাখতে পারিনি।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি-জামায়াত কূটনৈতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ আছে।
শাহরিয়ার আলম: আমরা হয়ত গত কয়েক বছরে সব বিষয়ে সঠিক তথ্য বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারিনি। এখন আমাদের চেষ্টা থাকবে বিএনপি বা জামায়াতের এসব প্রোপাগান্ডাগুলোর জবাব সঙ্গে সঙ্গে দেয়া।
ঢাকাটাইমস: ড. ইউনূস ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা অবনতি হয়ে বলে মনে করা হয়। আপনি কী মনে করেন?
শাহরিয়ার আলম: মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন যে, গত দুই-তিন মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে তারা আলাদা করে শুভেচ্ছা জানালেন কি, জানালেন না, তার ওপর কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্ভর করে না। এর বাইরেও অনেক বিষয় আছে। সেই বিষয়গুলোর অনেক উন্নতি হয়েছে।
ঢাকাটাইমস: বাংলাদেশের মতো একটা রাষ্ট্রে একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজের ক্ষেত্রে কি কি চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন?
শাহরিয়ার আলম: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে তাদের সমর্থন হারিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দেন। এসব সামলাতে গিয়ে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। বিভিন্ন অপপ্রচারের উত্তর দিতে হয়। অতীতে বাংলাদেশের বাজেট বাস্তবায়নের সময় বিদেশি শক্তিগুলোকে বাড়তি সমাদর করা হত। কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রগুলো আর দশটা দেশের সঙ্গে যেভাবে সম্পর্ক বজায় রাখে, সেভাবে বাংলাদেশের পক্ষেও সম্ভব।
ঢাকাটাইমস: অতীতে দেখা গেছে বাংলাদেশের কূটনীতি মূলত পশ্চিমমুখী ছিল। পশ্চিমমুখী-পূর্বমুখী এই দুটোর মধ্য সমন্বয় করা বা কোথায় গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করেন?
শাহরিয়ার আলম: আমাদের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিষ্কারভাবে অঞ্চলিক কূটনীতির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। দেখে থাকবেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একযোগে কথা বলার চেষ্টা করে। তাদের নিজেদের মধ্যে অনেক টানাপড়েন থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে একসঙ্গে কথা বলেন। আঞ্চলিক কূটনীতির জায়গা থেকে সার্ক গঠিত হলো। কিন্তু এর ফলাফল আমরা এখনো পাইনি। এখন বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে।
(ঢাকাটাইমস/২০জানুয়ারি/জেডএ.)