logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
বিচার ব্যবস্থায় আনহ্যাপি পরিবেশ বিরাজ করছে
১০ জানুয়ারি, ২০১৪ ২০:৪৭:০১
image

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নজিরবিহীন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আদালতের নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থায় এর প্রভাবসহ নানা দিক নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ


ঢাকাটাইমস: সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে যে তা-ব চালানো হয়েছে তাতে দেশের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থায় কী প্রভাব পড়বে?

বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী: ওই ঘটনার পর মাননীয় প্রধান বিচারপতি দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। বলা হয়েছিল কিছুটা সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু আবার সেটা অস্বীকার করা হলো। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার ব্যবস্থায় একটা ‘আনহ্যাপি’ অবস্থা বিরাজ করছে।

ঢাকাটাইমস:গত ২৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ঢুকে একজন নারী আইনজীবীকে নির্মমভাবে পিটানো হলো। অথচ তিনি সেখানে আইন চর্চা করেন। এটা কেমন হলো?

আমিরুল কবির চৌধুরী: নারী আইনজীবীর ওপর সম্প্রতি যে হামলা হয়েছে এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমার মনে হয় সারা বাংলাদেশের আইনজীবীদের এটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে। তাছাড়া তিনি শুধু আইনজীবী নন, তিনি একজন নারী, দ্বিতীয়ত একজন মানুষ। তার ওপর এই অমানবিক নির্যাতন কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না।

ঢাকাটাইমস:২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল-সমাবেশ না করতে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিল।

আমিরুল কবির চৌধুরী: আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল না করার জন্য নির্দেশ না থাকলেও আদালত এলাকায় কোন দলেরই মিছিল বা স্লোগান দেয়া উচিত নয়। অবশ্য বার অ্যাসোসিয়েশনের হলের ভেতরে নিজ দলের বা পক্ষের সভা-সমিতি করা যেতে পারে। কিন্তু মাঠে মিছিল বা বিক্ষোভ প্রদর্শন করা উচিত বলে আমি মনে করি না। বিশেষত এ ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি নির্দেশ থাকার পরও এগুলো করা ঠিক না।

ঢাকাটাইমস:সুপ্রিম কোর্ট এলাকা কতটা সুরক্ষিত, কতটা নিরাপদ?

আমিরুল কবির চৌধুরী: আপনি দেখেছেন আদালতের গেট খুলে কীভাবে বহিরাগতরা ঢুকেছে, এখন কি আদালত প্রাঙ্গণকে সুরক্ষিত বলা যায়?

ঢাকাটাইমস:এখানে সরকারের কি কিছু করণীয় ছিল?

আমিরুল কবির চৌধুরী: অবশ্যই সরকারের করণীয় আছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যথাযথ ব্যবহার করে সরকার নিশ্চয়ই আদালতকে সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা নিতে পারে।

ঢাকাটাইমস:আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেখা গেছে বিক্ষোভরত আইনজীবীদের সরিয়ে দিতে জলকামান ব্যবহার করেছে?

আমিরুল কবির চৌধুরী: সংবাদপত্রে যা দেখলাম তা দুর্ভাগ্যজনক।

ঢাকাটাইমস:আদালত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে?

আমিরুল কবির চৌধুরী: একজন আইনজীবীর ওপর এমন হামলার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে বলে আমি মনে করি।

ঢাকাটাইমস:রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে আইনজীবীদের মধ্যে যে বিভক্তি সেটিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

আমিরুল কবির চৌধুরী: আমি ১৯৬২ সালে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করি। তখন থেকে ’৭২/৭৩ সাল পর্যন্ত আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবীদের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে কথা বলতে দেখেছি বলে আমার মনে হয় না। আইনজীবীরা অবশ্যই রাজনীতি করতে পারেন। কিন্তু আদালতের ভেতরে অথবা বার অ্যাসোসিয়েশনে রাজনৈতিক দলাদলি না করাই শ্রেয়। বর্তমানে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় বিভিন্ন পেশাস্থলে রাজনৈতিক দলাদলি বেড়েছে। এটা শুভ বলে আমি মনে করি না।

ঢাকাটাইমস:বিচারপতি নিয়োগে দলীয় বিবেচনার বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

আমিরুল কবির চৌধুরী: অতীতে বিচারপতি নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার কোনো অভিযোগ আমরা শুনিনি। ১৯৬২ সালে আমি বারে যোগদান করি। পরে দীর্ঘদিন বেঞ্চে ছিলাম। আমাদের সময় এসবের কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে অনেক দিন থেকেই কিছু বিচারপতি নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার কথা শোনা যাচ্ছে, এটা দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য এবং সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

ঢাকাটাইমস:বিচার ব্যবস্থার মান নিয়ে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?

আমিরুল কবির চৌধুরী: বিচার ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। বিচার ব্যবস্থা সব সময়ই ভালো। তবে আমি আশা করি, বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় যারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি আছেন তারা এটার সচ্ছতা রক্ষার জন্য চেষ্টা করছেন, করবেন।

ঢাকাটাইমস:কোনো রায়ের পরে আইনজীবীদের পক্ষে-বিপক্ষে বক্তৃতা-সেøাগান দেয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এ ব্যাপারে কি বলবেন?

আমিরুল কবির চৌধুরী: রায় দেয়ার পরে পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলা উচিত বলে আমি মনে করি না। কারণ, রায়ে সংক্ষুব্ধদের আপিল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিছু বলতে হলে তারা সেখানে গিয়ে বলতে পারেন।


(ঢাকাটাইমস/ ১০ জানুয়ারি/ এআর/ ঘ.)