জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের অনিয়ম ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে।
সাক্ষাতকারটি ঢাকাটাইমস পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:
ঢাকাটাইমস: বিরোধীদল ছাড়াই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে কি?
ড. মীজানুর রহমান: বিরোধীদল ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা কম হবে এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা বলেছেন। এজন্য তিনি নির্বাচনের পর আলোচনায় বসায় কথা বলেছেন। তবে আমরা মনে করি এভাবে নির্বাচন হওয়া উচিত না। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে অনেক ভাল হতো। এই সংকটের জন্য কে দায়ী সেই সমালোচনা করে এখন কোন লাভ নেই। যেখানে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছিলো। রাজনৈতিক কারনে আমরা এই খাত থেকে অনেক পিছিয়ে গিয়েছি।
ঢাকাটাইমস: বিরোধীদলের আন্দোলন কি শুধুই তত্ত্বাবধায়ক বা একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ?
ড. মীজানুর রহমান: তত্ত্বাবধায়কের জন্য বিএনপির আন্দোলনকে মেনে নেয়া যায়। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত সারাদেশে যে তান্ডব চালাচ্ছে এটা নিয়ে। পাশাপাশি বিভিন্ন জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর আক্রমনাত্বক কর্মকান্ড সহসাই নিয়ন্ত্রন করা যাবে কিনা এটা নিয়েও চিন্তা বাড়ছে। আমাদেরকে কিন্তু গুরুত্ব সহকারে এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। দেশে জামায়াত বড় একটা শক্তি । সেই জামায়াতের লক্ষ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন নয়। দেশে গণতান্ত্রিক শক্তির মাঝে ঐক্য তৈরি হলে হয়তো অন্য শক্তিগুলোকে দুর্বল করা সম্ভব হবে।
ঢাকাটাইমস: ধ্বসাংস্তক কর্মসূচি না দিয়ে বিরোধীদলের পক্ষে কি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সম্ভব ছিল?
ড. মীজানুর রহমান: যখন কোন গণ-আন্দোলন হয়। তখন হাজার হাজার লোক চারদিক থেকে আসে। শিল্পি, সাহিত্যিক, বার কাউন্সিল সদস্য, নাট্যাভিনেতা, চারুকলা, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা দিক থেকে মানুষ এসে জড়ো হয়। এরকম চিত্রই অতীতে দেখে এসেছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও অন্য যে কোন আন্দোলনে এমনই ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিরোধীদল যে আন্দোলন করছে এটাকে জনবিচ্ছিন্ন আন্দোলন বলা যায়।
কতগুলো লোককে আউটসোর্সিং করে দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্য। একদিক দিয়ে ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলতে হবে। অন্যদিক দিয়ে গাড়ি ভাংচুর করতে হবে। কাউকে ককটেল ফাটাতে হবে। এরূপ করায় এটা জনসম্পৃক্ততাহীন একটা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। যেসব এলাকা জামায়াত নিয়ন্ত্রিত সেসব এলাকাকে তারা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বাকি এলাকা ভালই চলছে। ঢাকা শহরের কথাই যদি বলি, অবরোধের মধ্যে প্রায় জ্যামে বসে থাকতে হয়।
ঢাকাটাইমস: বিরোধীদল মাঠে নামলেই পুলিশ গুলি করছে, তাহলে আন্দোলন করবে কিভাবে? আর এভাবে গুলি করা কি ঠিক?
ড. মীজানুর রহমান: আমরা যখন আন্দোলন করেছি তখনও পুলিশ বাঁধা দিয়েছে। আমরা সেই সময় বসে গিয়েছিলাম। পুলিশের সামনে বসে শ্লোগান দিয়েছি। মাঝে মাঝে শুয়ে পড়েছি। কিন্তু বিরোধীদলের আন্দোলনতো এরকম না। তারা চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। পুলিশকে আটক রেখে মাথা থেতলে দিচ্ছে। বোমা মেরে পুলিশের কবজি উড়িয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পুলিশের বাঁধা দেয়ার ইতিহাস আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। আন্দোলন করতে গিয়ে মিছিল করতে গিয়ে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মতিয়া চৌধুরী অনেকবার পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন। এসময় তারা পাল্টা পুলিশের উপর বোমা মেরেছেন বা হামলা চালিয়েছেন এরকম ইতিহাস নেই। তবে পুলিশের এই কাজগুলোও সমর্থনযোগ্য না। পুলিশের দিক থেকে যে বক্তব্য তাদের উপর পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। আগে যেখানে ঢিল মারা হতো। এসব কারনে হয়তো পুলিশ আক্রমনাত্মক হয়ে এসব করছে। এজন্য উভয় পক্ষই দায়ী। আগের আন্দোলনে পুলিশ ব্যারিকেট দিলে সেখানেই বসে যেতাম। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হলে চলে আসতাম। কিন্তু এখন পুলিশের উপর পাল্টা হামলা হচ্ছে।
ঢাকাটাইমস: একটি নির্বাচনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
ড. মীজানুর রহমান: ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতবর্ষে গত ৪০ বছর যাবত নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু সেখানে কখনোই বিদেশী পর্যবেক্ষক আমন্ত্রণ করা হয় না বা কেউ আসার আগ্রহও দেখায় না। তার মানে এই নয় যে এখন আমাদেরও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন নেই। তবে প্রার্থীবিহীন যেই নির্বাচন হচ্ছে এটাও ভাল কাজ হচ্ছে না। সরকার হয়তো বাধ্য হয়েছেন এটা করার জন্য। একতরফা যে নির্বাচন হচ্ছে এটার জন্য সমানভাবে দুই দলই দায়ী। কারণ কেউ যদি ছাড় না দেয়, কেই যদি আপোস না করে। তাহলে এরকম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। অন্যকোন উপায়ও নেই।
ঢাকাটাইমস: ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে কি নির্বাচন করা সম্ভব হবে?
ড. মীজানুর রহমান: ৫ জানুয়ারী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কিনা এটা নির্বাচনের দিনই বলা যাবে। আমার মনে হয় যেখানে যেখানে নির্বাচন হবে সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। হয়তো ভোটাররাও আসবে। এর পরে অবস্থা শান্তিপূর্ণ থাকবে কিনা বা রাজনৈতিক অঙ্গণে শান্তি ফিরে আসবে কিনা সেটা সময়ই বলে দিবে।
ঢাকাটাইমস: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ড. মীজানুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন: মানিক মোহাম্মদ।