দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে নির্বাচনে আসা ছাড়া বিএনপির সামনে কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর পরামর্শে বিএনপি দেশজুড়ে যে সহিংসতা চালাচ্ছে তা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। বিএনপি মুখেমুখে জনগণের কল্যাণের কথা বলে। কিন্তু তাদের কার্মকাণ্ডে কেউ জনগণের কল্যাণ খুঁজে পাবে না। হরতাল ডেকে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো এসব করে কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের সমর্থন আদায় করতে পারবে না। বরং জনগণের সমর্থন অর্জন করতে হলে নির্বাচন করতে হবে।
ঢাকাটাইমস: সরকার এক তরফা নির্বাচন করার জন্য নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা মেনে নিচ্ছে না বলে বিএনপি অভিযোগ করছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু: বিএনপি যেসব অভিযোগ করছে তা পুরোটাই সংবিধান বহির্ভূত। নির্দলীয় সরকারের কোনো সুযোগ সংবিধানে নেই। কোনো অনির্বাচিত সরকার দেশের ক্ষমতায় যেন আসতে না পারে সেজন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। সরকার সব সময়ই বলছে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের কথা বলছেন। এখন পর্যন্ত সরকার নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়নি। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। বরং বিএনপি ছাড়া সব দলের অংশগ্রহণে গঠিত সর্বদলীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সহযোগিতা করে যাবে। তাই এখনও সময় আছে বিএনপি চাইলে সর্বদলীয় সরকার ও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।
ঢাকাটাইমস: নির্দলীয় সরকার ছাড়া তফসিল ঘোষণা করা হলে দেশ অচল করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর...
রাজিউদ্দিন আহমেদ: এটা নতুন কিছু নয়। তারা এর আগেও বিভিন্ন সময় এসব হুমকি-ধমকি দিয়ে এসেছেন। সহিংসতাও চালিয়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সম্প্রতি সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকু- এলাকায় নির্বিচারে গাড়িতে আগুন, লুটপাট, ভাঙচুর এসব তো তারই নমুনা। জামায়াত নেতারাও এসবের দায় স্বীকার করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে ভালবাসে না। দেশের মানুষ তাদের দরকার নেই। তাদের দরকার ক্ষমতা। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রয়োজনে দেশের মানুষের বিরুদ্ধেও তারা আন্দোলন করবে।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হলে তা আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিভিন্ন মহলে বলা হচ্ছে। আপনি কী মনে করেন?
রাজিউদ্দিন আহমেদ: আমরা তো বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে বলছি না। বারবার তাদের নির্বাচনে ডাকছি। তাছাড়া বিএনপি আসলো কি না আসলো তার ওপর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য নির্ভর করবে বলে আমি মনে করি না। ভোটাররা ভোট দিলেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচন হয়েছে। বরং বিএনপি নির্বাচনে না গেলে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু থাকবে সেটাই দেখার বিষয়। তাছাড়া বিএনপির অনেক নেতাও নির্বাচনে আসার পক্ষে। কিন্তু জোট শরিক জামায়াতের বিরোধিতার মুখে তারা নির্বাচনে আসতে পারছে না এমনটাও শোনা যাচ্ছে।
ঢাকাটাইমস: পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হলে আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে...
রাজিউদ্দিন আহমেদ: দেশে বিশেষজ্ঞ বা বিশ্লেষকের অভাব নেই। তারা একসময় একেক কথা বলেন। তাদের কথার কোনো ভিত্তি আছে বলে আমার মনে হয় না। তাছাড়া বৈদেশিক সহায়তা বা দাতা গোষ্ঠী তো বিএনপির দিকে চেয়ে নেই। তারা এদেশের উন্নয়নের জন্যই সবকিছু করে। তাই কে কী বললো তার ওপর নির্ভর করে বৈদেশিক সাহায্য-সহযোগিতা নির্ধারণ হবে বলে আমি মনে করি না।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচন প্রসঙ্গে আসা যাক। প্রায় আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চান। এদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হবে বলে আপনি মনে করেন?
রাজিউদ্দিন আহমেদ: আওয়ামী লীগের মতো এতবড় একটি দলে বিভিন্ন আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মনোনয়ন যার ইচ্ছে তিনি চাইতে পারেন। কিন্তু উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন করবে দল। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। মনোনয়ন নিয়ে মত পার্থক্য থাকলেও দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।
ঢাকাটাইমস: দল থেকে আপনি এবারও মনোনয়ন চেয়েছেন...
রাজিউদ্দিন আহমেদ: গতবার দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল আমি তার মর্যাদা রক্ষা করতে পেরেছি। এবারও আমি মনোনয়ন চেয়েছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। মন্ত্রী হওয়ার পরও নিয়মিত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। দলের নেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এবারও যদি মনোনয়ন পাই তবে আমি বিজয়ী হতে পারবো, এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে।
ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।
রাজিউদ্দিন আহমেদ: ঢাকাটাইমকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: হাবিবুল্লাহ ফাহাদ।