সহিদুর রহমান খান মুক্তি। টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। একাধারে টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলার ব্যবসায়ী ঐক্যজোটের প্রধান উপদেষ্টাও তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। মেধা, প্রজ্ঞা আর বিচক্ষণতা দিয়ে একসময় টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন সহিদুর রহমান মুক্তি। শুধু রাজনীতিই নয়, সমাজকল্যাণমূলক নানা কর্মকাণ্ডে সমানভাবে সক্রিয় তিনি। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, রাইফেলস ক্লাব, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন দীর্ঘদিন ধরে। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে সহিদুর রহমান মুক্তি কথা বলেছেন জাতীয় রাজনীতি, বিরোধীদলের আন্দোলন, আগামী নির্বাচন এবং নিজ পৌর এলাকার নানা দিক নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ।
ঢাকাটাইমস: বিরোধীদল ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন?
সহিদুর রহমান খান মুক্তি: সরকার একবারও বলেনি বিরোধীদল ছাড়া তারা নির্বাচন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও বিরোধীদলকে সর্বদলীয় সরকারে অংশ নিয়ে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু তারপরও বিএনপি যদি সাড়া না দেয় তবে নির্বাচন থেমে থাকবে না। নির্বাচন যথা সময়েই হবে। আর নির্বাচন হলে তার গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করবে ভোটারদের অংশগ্রহণের ওপর। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিলেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি মনে করি।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি দাবি করছে সরকার এক তরফা নির্বাচন করলে ২৫ শতাংশ ভোটারও কেন্দ্রে যাবেন না...
সহিদুর রহমান খান মুক্তি: বিএনপি যা বলছে এটি তাদের একান্তই রাজনৈতিক বক্তব্য। এর কোনো যোক্তিক ভিত্তি নেই। এর আগে এই সরকারের উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ যত নির্বাচনই হয়েছে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে জনগণও তাতে অংশ নিয়েছে। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। ওইসব নির্বাচন নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল বা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। এ থেকে কি প্রমাণ হয় না শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব? বিরোধীদলের অবস্থা হচ্ছে একমুখী। নির্বাচনে জয়ী হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আর হেরে গেলে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের আদর্শ বা সংস্কৃতি হতে পারে না।
ঢাকাটাইমস: বিরোধীদল নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। এক সময় আওয়ামী লীগও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। দুই আন্দোলনের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পান কি?
সহিদুর রহমান খান মুক্তি: মোটেও না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিকে একসঙ্গে মানদণ্ডে তুলনা করার সুযোগ নেই। বিএনপি যে দাবিতে আন্দোলন করছে তা একান্তই তাদের রাজনৈতিক দাবি। এটি গণদাবি নয়। কারণ, তারা আন্দোলনের নামে হরতাল ডেকে মানুষের গায়ে আগুন দিয়ে মারছে। বোমা হামলা করছে। ভাঙচুর করছে। জনগণের জন্যই যদি আন্দোলন হবে তবে কেন জনগণের ওপর এসব হামলা হচ্ছে? এসবের কোনো সদোত্তর কি আছে বিএনপির কাছে? হ্যাঁ, আওয়ামী লীগও আন্দোলন করেছে, কিন্তু এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারার কোনো নজির নেই। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শান্তিপ্রিয় দল। জনগণই আমাদের শক্তি। তাই জনগণের ক্ষতি করে আওয়ামী লীগ কখনো কিছু করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি নেতারা তো বলছেন সরকারের এজেন্টরাই এসব করে বিএনপিকে দোষারোপ করছে...
সহিদুর রহমান খান মুক্তি: বললেই তো আর সব হয়ে যায় না। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া হরতালের যেসব ভিডিও ফুটেজ ও ছবি তুলেছে তার কোথাও কি সরকারের এজেন্টদের দেখা গেছে? বরং বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের ছবিই জনগণ দেখেছে। অবাধ তথ্য-প্রযুক্তি যুগে আপনি চাইলেই মানুষকে ধোকা দিতে পারবেন না। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের পরে জামায়াত-শিবিরের যেসব সহিংসতা দেশবাসী দেখেছে তা থেকেই বোঝা যায় এসব কারা করতে পারে। তাই বিএনপির এসব খোঁড়া যুক্তি মানুষ বিশ্বাস করবে না।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীরা পার পেয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি কোনো দিকে যেতে পারে?
সহিদুর রহমান খান মুক্তি: আপনি যথার্থই বলেছেন। মানুষ এখন শঙ্কিত। বিএনপি-জামায়াত জোট যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীরা আবার বেরিয়ে আসবে। মানুষের এই দুশ্চিন্তার জন্য বিএনপি নেত্রীই দায়ী। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। কিন্তু তারপরও কীভাবে জনসভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের পক্ষে কথা বলেন আমি জানি না। তিনি জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের রাজবন্দি বলছেন। ক্ষমতায় এলে তাদের মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। আমি ভাবতে পারি না একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়ে তিনি কীভাবে এসব বলেন। তার দলেও তো অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে; আমি মনে করি এখনও সময় আছে, তিনি ঘাতক-দালালদের সঙ্গ ত্যাগ করে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসতে পারেন।
ঢাকাটাইমস: আগামী নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইছেন। টাঙ্গাইলের আটটি আসনেও একই অবস্থা। এগুলো মিটিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া কতটুকু সহজ হবে?
সহিদুর রহমান খান মুক্তি: এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। তাই বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও নৌকা মার্কার ব্যাপারে কারো মতপার্থক্য আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। একাধিকজন মনোনয়ন চাইতেই পারেন। নিজের চোখে অনেক সময় নিজেকে যোগ্য মনে হয়। কিন্তু নেত্রী ও দল জানে আসলে কে কোথায় যোগ্য প্রার্থী হতে পারেন। তাই এনিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধিতা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। নৌকা মার্কার জন্য নেত্রী যাদেরকেই যোগ্য মনে করবেন দল ও নেতাকর্মীরা তাদের পক্ষেই কাজ করবেন। বর্তমানে টাঙ্গাইলের সাতটি আসনই আওয়ামী লীগের। একটি আসন মহাজোটের। আগামী নির্বাচনেও টাঙ্গাইলের সবকটি আসন নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো বলে আমি ও দলের নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করেন।
ঢাকাটাইমস: টাঙ্গাইল পৌর এলাকার প্রসঙ্গে ফেরা যাক। পৌর মেয়র হিসেবে আপনার অনেক সুনাম রয়েছে। কম সময়ে আপনি অনেকের মন জয় করেছেন। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
সহিদুর রহমান খান মুক্তি: সুনাম-সাফল্য যাই বলুন, আমি বলবো আমি পুরোপুরি তৃপ্ত নই। কারণ, আমি এখনও টাঙ্গাইল নগরবাসীকে ভাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দিতে পারিনি। স্ট্রিট ল্যাম্প বসাতে পারিনি। এক কথায় ১২৭ বছরের টাঙ্গাইল পৌর নগরবাসীর জন্য গ্যাস, পানিসহ পুরো নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারিনি। তবে জনগণ আমার পাশে থাকলে আগামী দিনগুলোতে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করার। জনগণকে আমি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার সবগুলোই কাজের মাধ্যমে পূরণ করাই আমার স্বপ্ন।
ঢাকাটাইমস: আপনি একদিকে দল-মত নির্বিশেষে পৌরবাসীর প্রতিনিধি, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা। দুই জায়গা থেকে নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সহিদুর রহমান খান মুক্তি: আমি যখন পৌর কার্যালয়ে বসি তখন আমি একজন মেয়র। আমি পুরো টাঙ্গাইল পৌর এলাকার মানুষের প্রতিনিধি। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই সবার সঙ্গে কথা বলি। এখানে দলীয় কোনো বিবেচনা কাজ করে না। সবার জন্যই সমান-সুবিধা নিশ্চিতের জন্য চেষ্টা করি। তবে যখন আমি রাজনীতির মঞ্চে উঠি, তখন আমি নিজেকে আওয়ামী লীগ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী বলে মনে করি। তখন আমার কথাবার্তা থেকে শুরু করে সবকিছুই দলীয় প্রেক্ষাপটেই বিবেচনা করি। এপর্যন্ত এসব নিয়ে কোনো বিপাকে পড়তে হয়নি আমাকে। পৌরবাসী আমাকে অনেক ভালবাসেন। আমি তাদের ভালবাসার মর্যাদা দিতে চাই।
ঢাকাটাইমস: মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সহিদুর রহমান খান মুক্তি: ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।
(ঢাকাটাইমস/২০ নভেম্বর/এইচএফ/জেডএ.)