logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভা সাজানো নাটক: জিয়াউল হক শাহীন
২০ নভেম্বর, ২০১৩ ১১:১১:৪৬
image


ঢাকা: সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভা পুরোটাই সাজানো নাটক। মহাজোট সরকারের ‘মিনি কেবিনেট’ বললেও ভুল হবে না। শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা; ওইদিন বিকালেই সর্বদলীয় সরকারে যোগদান ও নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা সবই আওয়ামী লীগ সরকারের নীল নকশারই অংশ। বলছিলেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি জিয়াউল হক শাহীন



 





ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। জিয়াউল হক শাহীন ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কও হন তিনি। একই বছর স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এবং ২০১১ সালে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হন তিনি।



 





ঢাকাটাইমস: সরকার বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করে ফেললে কী করার থাকবে?



 





জিয়াউল হক শাহীন: বিএনপিকে ছাড়া সরকার চাইলেও নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা এত সহজ নয়। সরকার হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে একতরফা নির্বাচন করতে পারে কিন্তু সেটি গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ ওই নির্বাচনে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পারে। কিন্তু এত কম সংখ্যক জনসমর্থন নিয়ে কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না।



 





ঢাকাটাইমস:  নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন সফল হবে বলে কি আপনি মনে করেন?



 





জিয়াউল হক শাহীন: আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এ পর্যন্ত যত অর্জনই এসেছে তা এমনি এমনি আসেনি। রাজপথের কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমেই তা এসেছে। এটি সত্যি যে, সরকার জনগণের করের টাকায় বেতন-ভাতা দেয়া পুলিশবাহিনীকে ব্যবহার করে একচ্ছত্রভাবে বিরোধীদলকে দমন করে যাচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না। কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের নামে নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক জীবন থেকে মূল্যবান সময়গুলো কেড়ে নিচ্ছে। এসব করে সরকার তাদের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ করছে। কিন্তু এসব জুলুম নির্যাতন চালিয়ে অতীতে কেউ ক্ষমতায় টিকতে পারেনি। আওয়ামী লীগেরও বিদায়ের সময় হয়েছে। সরকারি দলের যদি এতই ক্ষমতা থাকে তবে বিরোধীদলকে প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে দেখুক জনগণ তাদের কী জবাব দেয়।



 





ঢাকাটাইমস: আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকতে বিএনপি সরকারও তাদের আন্দোলনকে একইভাবে প্রতিহত করেছিল বলে অভিযোগ করেন দলটির নেতারা। আপনি কী বলবেন?



 





জিয়াউল হক: বিএনপি সরকারে থাকতে কখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এভাবে অপব্যবহার করেনি। আমাদের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বা কেন্দ্রীয় নেতাদের গণহারে গ্রেপ্তারের ঘটনারও কোনো নজির নেই। বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বিএনপি পুরোপুরি একটি গণতান্ত্রিক দল এবং সবার মত প্রকাশে বিশ্বাস করে। অতীতেও আমরা কারও ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালাইনি। ভবিষ্যতেও প্রতিহিংসা পরায়ণ হবো না।



 





ঢাকাটাইমস: হরতালের নামে বিরোধীদল ভাঙচুর, আগুন নিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বোমা বিস্ফোরণ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে...



 





জিয়াউল হক: আমি আগেই বলেছি, ভাঙচুর, বিস্ফোরণ, হত্যাকাণ্ডে বিএনপি বিশ্বাস করে না। সরকারই হত্যাকা-, গুমের রাজনীতি করে। বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলীকে সরকারের এজেন্টরা যেভাবে গুম করেছে- ঠিক একইভাবে বিরোধীদলের ঘাড়ে দোষ চাপাতে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোসহ নানা সহিংসতা চালাচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণই বিএনপির আন্দোলনের মূল শক্তি। জনগণ বিগত হরতাল কর্মসূচিতে মাঠে নেমে এসেছে।  



 





ঢাকাটাইমস:  বলা হচ্ছে, বিএনপির হরতাল কখনও সফল হয়নি...



 





জিয়াউল হক: হরতাল সফল হয়নি বা জনগণ হরতাল মানেনি এসব বলে সরকার আত্মতুষ্টিতে ভোগার চেষ্টা করছে। আপনি মফস্বলের দিকে তাকান তাহলেই দেখবেন জনগণ মাঠে ছিল কি ছিল না। এক রাজধানী  দিয়ে সব বিবেচনা করলে ভুল হবে। সরকার পরিকল্পিতভাবে ঢাকায় বিরোধীদলের আন্দোলনকে দুর্বল করে দিতে দলের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি পোড়ানো মামলায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের আসামি করা হয়েছে। এগুলো কি বিশ্বাসযোগ্য? একজন দলের মহাসচিব কি কখনো ময়লা গাড়ি পোড়াতে পারেন? কিন্তু সরকার এমন অবিশ্বাসও কাজও করেছে।



 





ঢাকাটাইমস: নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন সংগ্রাম কমিটি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর কাজ কতটুকু এগিয়েছে?



 





জিয়াউল হক: বিএনপি নেত্রী ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের তিনশটি কেন্দ্রে সংগ্রাম কমিটি করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকাতেও সংগ্রাম কমিটি গঠনের কাজ শেষ। যদি নির্দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যায় তবে এই সংগ্রাম কমিটিই পরবর্তীতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হিসেবে কাজ করবে।



 





ঢাকাটাইমস: বিএনপি যদি এই মুহূর্তে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কতটুকু প্রস্তুত আছে বলে আপনি মনে করেন?



 





জিয়াউল হক: বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি গণতান্ত্রিক দল। আন্দোলন এবং নির্বাচন দুটোরই প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। দল যখনই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তখন থেকেই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বে। অন্যদের চেয়ে এক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকবো বলে আমার মনে হয় না।



 





ঢাকাটাইমস: আওয়ামী লীগ তো ইতিমধ্যে মনোনয়ন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে...



 





জিয়াউল হক: বিএনপিও আরও আগে মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করে রেখেছে। এটা ঠিক বড় দল হিসেবে প্রত্যেকটি আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রার্থী রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে দলে কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করি না। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসেই এসব বিষয়ে প্রস্তুতি গুছিয়ে রেখেছেন। বিএনপি পরিকল্পিত দল তাই এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে- শেষ মুহূর্তে বিএনপি এসব নিয়ে বিপাকে পড়বে।



 





ঢাকাটাইমস: বিএনপিকে ছাড়াই সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?



 





জিয়াউল হক: সর্বদলীয় সরকারের নামে যা হয়েছে এটি সর্বদলীয় নয়, মহাজোট সরকারের ‘মিনি কেবেনিট’। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই নাটকের মূল নায়ক। আপনি দেখুন নতুন মন্ত্রিসভার কারা আছেন? সবাই মহাজোটের শরিক। সরকার নিজেরা নিজেরাই সর্বদলের মন্ত্রিসভার নামে নাটক সাজিয়েছে। এসব নাটক করে পাতানো নির্বাচন করলে জনগণ তা মেনে নেবে না।    



 





ঢাকাটাইমস: বিএনপি নির্বাচনে গেলে আপনি টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে...



 





জিয়াউল হক: বিএনপি নির্বাচনে গেলে আমি মনোনয়ন চাইবো। গত ৩২ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আছি। আমার বিশ্বাস বিগত সময়গুলোতে দলে আমার অবদানের কথা বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। মনোনয়ন পেলে বিপুল সমর্থন নিয়ে আমি বিজয়ী হবো।  



 



   

ঢাকাটাইমস: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।



 





জিয়াউল হক: ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।



 





সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: হাবিবুল্লাহ ফাহাদ ও মো. রেজাউল করিম।