ঢাকা: শফী আহমেদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি এক সময় কেন্দ্রীয় জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ’৯০-এর গণআন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আলোচিত নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত গণআদালতের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন শফী আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। সম্প্রতি রাজনৈতিক সঙ্কট ও আগামী নির্বাচন নিয়ে তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকাটাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার মোছাদ্দেক বশির।
ঢাকাটাইমস: বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় কি কিছু দেখছেন?
শফী আহমেদ: রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতাকে টেলিফোনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ওই আমন্ত্রণে বিরোধীদলীয় নেতার অংশ নেয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তিনি ওই দিন খোড়া অজুহাতে সংলাপ থেকে দুরে থাকলেন। তবে এখনও সুযোগ আছে। সঙ্কট নিরসনে বিরোধীদলের ইচ্ছা থাকলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে ফোন দেয়া উচিৎ। তাঁরা দুইজনে সময় ও স্থান নির্ধারণ করে সংলাপে অংশ নিতে পারেন। বল এখন বিরোধীদলের কোর্টে। তাই এই উদ্যোগ তাদেরকেই নিতে হবে। যদি উদ্যোগ না নেন তাহলে তাঁরাই সঙ্কট সমাধান না হওয়ার জন্য দায়ী থাকবেন।
ঢাকাটাইমস: বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের কারণে সংলাপ বসা নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে কি?
শফী আহমেদ: তাঁদের গ্রেপ্তারের কারণে সংলাপে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আমি মনে করি না। সিদ্ধান্ত নেয়ার মত বিএনপিতে এখনও অনেক নেতা আছেন। বিরোধীদলীয় নেতার একটু সদিচ্ছা থাকলেই সংলাপ হতে পারে।
ঢাকাটাইমস: হরতালের মত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন কি?
শফী আহমেদ: হরতাল কর্মসূচি পালন করা রাজনৈতিক অধিকার। তবে এই হরতাল হতে হবে শান্তিপূর্ণ। হরতাল ডেকে নেতারা ঘরে বসে থাকবেন আর কিছু ভাড়াটিয়া দিয়ে জ্বালাও পোড়াও ও বোমা মরবেন তা কিছুতে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অতীতে অনেক হরতাল পালিত হয়েছে। এটিতে আমরা অংশ নিয়েছি। আমরা রাস্তায় পিকেটিং করেছি। কিন্তু কাউকে পুড়িয়ে মারিনি।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে এখনও পরিস্কার কিছু বলা হয়নি। এটি আগে থেকে পরিস্কার করা হলে সঙ্কট তৈরি নাও হতে পারতো। আগে থেকে এ বিষয়ে পরিস্কার কিছু না বলার কারণ কি হতে পারে?
শফী আহমেদ: সর্বদলীয় সরকারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এই সরকারের বিষয়ে অনেক কিছু বলেছেন। কিছু বিষয় অস্পষ্ট আছে বলে অনেকের কাছ থেকে বলা হচ্ছে। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী সেটুকুও খব দ্রুত পরিস্কার করবেন।
ঢাকাটাইমস: সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করতে নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী বলে মনে করেন কি?
শফী আহমেদ: বর্তমান নির্বাচন কমিশন সার্স কমিটির মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তারা অনেকগুলো নির্বাচন পরিচালনা করেছে। এই নির্বাচন নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠেনি। এতে বলা যায়, সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করতে বর্তমান কমিশন সক্ষম। তবে কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে। এটি কাটিয়ে উঠতে বিরোধীদল পরামর্শ দিতে পারে। আচরণবিধিতে সমস্যা মনে হলে সেই বিষয়ে তারা অভিযোগ দিতে পারে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
ঢাকাটাইমস: বিরোধীদল আন্দোলন করে তাদের দাবি আদায় করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন কি?
শফী আহমেদ: বিরোধীদল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচনের কথা বললেও তাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি। তারা মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই আন্দোলন করছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি তাদের থাকলে তারা আন্দোলন না করে সংলাপে যেত। আর যেটি উচ্চ আদালত থেকে বাতিল করে দিয়েছে সেটি আবার কিভাবে হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। বিরোধীদল কিন্তু সেটি বলছে না। এতেই বুঝা যায় তাদের আন্দোলন অন্য কারণে। বিএনপি মূলত জামায়াত-শিবিরের উপর ভর করে আন্দোলন করছে। সময় থাকতে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে দলটি জামায়াতের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে।
ঢাকাটাইমস: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আপনারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। আগে ছাত্রদের ভিতর থেকেই রাজনৈতিক নেতা বেরিয়ে আসতেন। এখন তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ হিসাবে আপনি কি মনে করেন?
শফী আহমেদ: ডাকসুকে বলা হতো মিনি পার্লামেন্ট। সেখান থেকে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতো। সেই ডাকসু এখন অকেজো। দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন হয় না। এজন্য ছাত্রদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। এছাড়া বর্তমানে যারা রাজনীতি করেন তাঁরা রাজনীতিকে পেশা হিসাবে নিতে পারেন না। নেতারা ব্যবসা রক্ষা ও অবসর কাটানোর জন্য রাজনীতি করেন। এজন্য দেশের কল্যাণে ভাল কোনো সিদ্ধান্ত আসে না।
ঢাকাটাইমস: আপনি আগামী নির্বাচনে এমপি হলে আপনি এলাকার জন্য কি করবেন?
শফী আহমেদ: আমার নির্বাচনী এলাকা নেত্রকোনা-৪ আসন (মদন-মহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি)। এই এলাকাটি হাওর এলাকা। হওয়ার এলাকা হওয়ায় এখানে বছরের অর্ধেক সময় পানির নিচে থাকে। এজন্য এই এলাকায় তেমন রাস্তা নেই। তাই দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। হাওরের গ্রামগুলো পানির তোড়ে ভেঙে যায়। গ্রামগুলো বাঁচানোর জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া ভারত থেকে অকাল বৃষ্টিতে যে বন্যা হয় তা প্রতিহত করার জন্য পানির গতি পাল্টে দিতে হবে। এতে ওই এলাকার জমির ফসল বাঁচানো যাবে। এলাকার উন্নয়নের জন্য ওই এলাকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে যার যোগাযোগ আছে তাদেরকে সংসদ সদস্য হিসাবে আসতে হবে।
ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ
শফী আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ
(ঢাকাটাইমস/০৯/নভেম্বর/এমএবি/এএসএ)