logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
হরতালে সহিংসতার দায় বিএনপির ওপর চাপানো হচ্ছে: রফিকুল ইসলাম হিলালী
১৬ নভেম্বর, ২০১৩ ১৪:০৯:২৬
image


নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোণা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে বিএনপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এবারও দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় তিনি। তাই আগামীতে দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদীও তিনি। জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী কমিটির এই সদস্য ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সরকার দেশে এক নায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। বিরোধীদল নামে কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাখতে চাইছে না। তাই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডে নামে নির্যাতন চালাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি কখনওই জ্বালাও-পোড়াওয়ে বিশ্বাস করে না। হরতালে সহিংসতা সৃষ্টি করে একটি গোষ্ঠী বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে।’   

রফিকুল ইসলাম হিলালী ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত আছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিরও নেতা ছিলেন তিনি।   

ঢাকাটাইমস:  এই পর্যন্ত বিরোধীদলের ডাকা কোনো হরতাল সফল হয়নি বলে দাবি করছে সরকার। আপনি কী বলবেন?

রফিকুল ইসলাম হিলালী: সরকারের এ দাবি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। এসব বলে সরকার আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। কারণ, শুধু ঢাকার দিকে তাকালে আপনি হরতালের সঠিক চিত্র পাবেন না। রাজধানীর বাইরের জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়মগুলোতে হরতাল শান্তিপূর্ণ ও সফল হয়েছে। স্বাধীনতার পর এমন হরতাল মানুষ খুব কমই দেখেছে। শুধু বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থকরাই নয় মানুষ স্বেচ্ছায় মাঠে নেমে এসেছে। মানুষ পরিবর্তন চায়।

ঢাকাটাইমস: বিএনপি হরতাল ডেকে জ্বালাও-পোড়াও করছে বলে অভিযোগ করছে সরকারি দল...

রফিকুল ইসলাম হিলালী: বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসাত্মক, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। হরতালের যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারছে তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব সহিংসতা ছড়াচ্ছে। দোষ চাপাচ্ছে বিএনপির ঘাড়ে। এর আগেও সরকারি দল কোনো প্রমাণ ছাড়াই অনেক ঘটনার দায় বিরোধীদলের ওপর চাপিয়েছে। এগুলো তারই অংশ বলে আমি মনে করি। এর মাধ্যমে সরকার জনগণের সামনে বিএনপির ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণকে এত সহজে ধোকা দেয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ, হরতাল মানুষের জন্য কিছুটা কষ্টের কারণ হয়। কিন্তু দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জনগণ এতটুকু ছাড় দিতে প্রস্তুত আছে বলে বিগত হরতালে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জনগণ এ আন্দোলন মেনে নিয়েছে। 

ঢাকাটাইমস: কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের কারণে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে  কি হতাশা দেখা দিতে পারে? 

রফিকুল ইসলাম হিলালী: দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের হতাশার কোনো কারণ নেই। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বিএনপি হাইকমান্ড বেগম খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এ নিয়ে দ্বিধাদণ্ডের কিছু নেই। 



ঢাকাটাইমস: বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলনের মুখে সরকার নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে বাধ্য হবে বলে কি আপনি মনে করেন?

রফিকুল ইসলাম হিলালী: এ পর্যন্ত রাজনীতি কিংবা সরকার ব্যবস্থায় যত পরিবর্তনই এসেছে তা আন্দোলনের মাধ্যমেই। আজকে আমরা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানাচ্ছি এতো এক সময় আওয়ামী লীগেরই দাবি ছিল। কিন্তু তারাই উচ্চ আদালতের দোহাই দিয়ে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়েছে। এ থেকে বুঝতে বাকি নেই তারা ক্ষমতায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতেই এটি করেছে। তবে আমার বিশ্বাস সরকারের সময় ঘনিয়ে এসেছে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে তাদের ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে এবং দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নেবে। কারণ, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এক তরফা কেউ কখনও জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। আওয়ামী লীগও পারবে না।  

ঢাকাটাইমস: সরকার নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন হয়ে গেলে তখন বিএনপি তখন কী করবে?

রফিকুল ইসলাম হিলালী: বললেই নির্বাচন করা যায় না। নির্বাচনের জন্য অনেক প্রস্তুতি রয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলো ব্যালট, বক্সসহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র পৌঁছাতে হবে। ভোট কেন্দ্র প্রস্তুত করতে হবে। তার পর জনগণ সেই নির্বাচনে ভোট দেবে কি দেবে না তা দেখতে হবে। আমার মনে হয় সরকার মুখে যাই বলুক নির্বাচন করা এত সহজ হবে না। মফস্বলে খবর নিলে আপনি দেখবেন। সরকার নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে কিন্তু ভোটার পাবে না। তাই ওই নির্বাচনের কোনো ভিত্তি থাকবে বলে আমি মনে করি না।

ঢাকাটাইমস: নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে সংগ্রাম কমিটি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি নেত্রী। ওই প্রস্তুতি কতদূর এগিয়েছে?

রফিকুল ইসলাম হিলালী: নেত্রীর ঘোষণা পাওয়ার পর থেকেই সংগ্রাম কমিটির গঠনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে আমাকে আহ্বায়ক করে কেন্দুয়া উপজেলার ২১৭ টি কেন্দ্রে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিই পরবর্তীতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া সরকার যদি এক তরফা নির্বাচন সফল করতে সেনাবাহিনী ব্যবহারের পরিকল্পনা করে থাকে তবে সেই উদ্দেশ্য কখনই সফল হবে না। সেনাবাহিনী দেশের মানুষের ভাষা বোঝে। তারা কখনই নিজেদেরকে জনগণের মুখোমুখি করবে না।

ঢাকাটাইমস: রাজনৈতিক পরিস্থিতি আসলে কোন পথে যাচ্ছে...

রফিকুল ইসলাম হিলালী: দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে এ থেকে উত্তরণে দুই দলকেই ভূমিকা রাখতে হবে। ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। আমাদের নেত্রী  (খালেদা জিয়া) বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের নাম তত্ত্বাবধায়ক হতে হবে তা নয়, এটাকে নির্দলীয় সরকারও বলা যেতে পারে। তিনি দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠকের কথা বলেছেন। কিন্তু সরকার গো ধরে বসে আছে। তারা সর্বদলীয় সরকারের নামে নিজেদের অধীনেই নির্বাচন করতে চাইছে। শেখ হাসিনাই যদি সর্বদলীয় সরকারের প্রধান হন তাহলে তো আর নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।  

ঢাকাটাইমস: নেত্রকোণায় বিএনপির অবস্থান...

রফিকুল ইসলাম হিলালী: মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেত্রকোণা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনে চলছেই। কেন্দুয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। কিছু কিছু ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থকদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। বর্তমান সাংসদ মঞ্জুর কাদের কোরাইশী বিষয়গুলো জানেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ থেকেই প্রমাণ হয় এর পেছনে সাংসদ ও সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদ আছে।

ঢাকাটাইমস: আপনি আগামীতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনের জন্য কি আপনি প্রস্তুত?

রফিকুল ইসলাম হিলালী: বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট যদি নির্বাচনে যায় তবে আমি দল থেকে মনোনয়ন চাইবো। আমি সব সময়ই এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে আছি। নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচিও পালন করছি। ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। গত নির্বাচনে নেত্রকোণার সবগুলো আসনে বিএনপি যেসব প্রার্থী ছিলেন তাদের মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছি। তাই আগামীতে দল থেকে আমি মনোনয়ন পাবো বলে আশা রাখি।

ঢাকাটাইমস: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

রফিকুল ইসলাম হিলালী: ঢাকাটাইমকেও ধন্যবাদ।

 



সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: হাবিবুল্লাহ ফাহাদ