logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
সংকট নিরসনে আলোচনার বিকল্প নেই
১২ নভেম্বর, ২০১৩ ১৫:৩৯:৫৪
image

বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউটিএবি) সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ.ফ.ম. ইউসুফ হায়দার। তিনি বলেন, দেশের মানুষের মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দিয়ে বিদ্যমান সংকট আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে এমন কোনো সমস্যা থাকতে পারে না যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে না।


দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ড. আ.ফ.ম. ইউসূফ হায়দারের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক মহিউদ্দিন মাহী। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। 


ঢাকাটাইমস: বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?            


আ.ফ.ম. ইউসূফ হায়দার: বর্তমান সরকার দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে। বিরোধীদলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আর সরকার দলে নির্বাচন নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সরকার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলছে মনোনয়ন ফরম বিক্রির মহোৎসব। আর বিরোধীদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করে দেশব্যাপী গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সরকার।চলছে গণগ্রেপ্তার। শুধু তাই নয়, কয়েক দিন আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল।


বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম- স্থায়ী কমিটির শীর্ষ তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এখন কারাগারে রয়েছেন। এভাবে বিরোধী শিবিরকে গ্রেপ্তার-হামলা-মামলা-নির্যাতন করে কখনই সমস্যা সমাধান করা যায় না। সমস্যা আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। অতীতের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা সেটাই দেখতো পাবো।


ঢাকাটাইমস: সরকার যদি একদলীয় নির্বাচন করে তাহলে সেটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে?


আ.ফ.ম. ইউসূফ হায়দার: একদলীয় নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।দেশে-বিদেশে কোনো জায়গায়ই একদলীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। জনগণ তা মেনে নেবে না। বাংলাদেশ সৃষ্টির শুরু দিকে থেকে তাকালে দেখা যাবে, একতরফা নির্বাচনের ইতিহাস কোনোভাবেই সুখকর নয়। তা শান্তি বয়ে আনে না। সংঘাত-সংঘর্ষ-রক্তপাত ঘটায়। দেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে কিন্তু জনগণই জয়লাভ করে। স্বাধীনতার পর প্রথম একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ‘৮৬ সালে। সেসময় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এরপর ১৯৮৮ সালে একতরফা নির্বাচন হয়েছিল। ‘৯৬ সালেও একতরফা নির্বাচন হয়েছিল। এসব নির্বাচনের পরবর্তী ফলাফল আমাদের সকলেরই জানা আছে। তাই সরকারের একতরফা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হবে সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত।  


ঢাকাটাইমস: শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করবে বলে মনে করেন?


আ.ফ.ম. ইউসূফ হায়দার: আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সেটা করবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী গত রবিবার এক সভায় বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। শান্তি চাই।’ তার এই বক্তব্য মনে হয় তিনি শেষ পর্যন্ত ছাড় দেবেন এবং বিরোধীদলকেও নির্বাচনে নিয়ে আসবেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি। তাকেই সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে।


ঢাকাটাইমস: প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সর্বদলীয় সরকারে বিএনপিসহ বিরোধীদলের আসা উচিত কিনা?   


আ.ফ.ম. ইউসূফ হায়দার: বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধীদল গেলে নির্বাচনে সমতা হবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। সেক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিরোধীদল নির্বাচনে গেলে কারচুপি বা পক্ষপাতিত্বের একটা আশঙ্কা থাকে। সেজন্য বিরোধীদলের সমতা বিধান না করে নির্বাচনে যাওয়াটা আমি সমর্থন করি না। এছাড়া বর্তমান সময় যদি আমরা নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকাই। তাহলে দেখবো তারা কিন্তু সিইসি এম এ আজিজের পথেই হাটছে। তারা একদলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে আর অন্য দলকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও কিন্তু সরকারের নির্দেশেই কাজ করছে। তাহলে এ অবস্থায় বিরোধীদল তো নির্বাচনে যেতে পারে না। নির্বাচন কমিশন দূরভিসন্ধিমূলকভাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করেছে। মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিন বছরের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ৯০ দিন আগ থেকেই লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা দরকার ছিল নির্বাচন কমিশনের। এজন্য গত ২৭ অক্টোবর থেকেই এটি করার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটা এখনও করতে পারেনি। এর দায়-দায়িত্ব তো তারা এড়াতে পারে না।


ঢাকাটাইমস: বর্তমান সমস্যা সমাধানে আপনার পরামর্শ কী?


আ.ফ.ম. ইউসূফ হায়দার: বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।দেশের মানুষের মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সংকট আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে এমন কোনো সমস্যা থাকতে পারে না যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে না।তাই সংকট নিরসনে গ্রেপ্তার বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দিয়ে আলোচনার পরিবেশ সরকারকেই তৈরী করতে হবে। এছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের নেতাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুকূল পরিবেশ তৈরী সুযোগ দিতে হবে। তাহলে সমস্যা সমাধান খুবই সহজ বলে মনে করি।