logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা এখন নিষ্প্রয়োজন: মোহাম্মদ এ আরাফাত

১১ ডিসেম্বর, ২০১৩ ১২:৫৩:১৪
image

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন সামাজিক উন্নয়ন ও গবেষণামূলক সংগঠন ‘সুচিন্তা ফাউন্ডেশন’ এর নির্বাহী পরিচালক ও ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার মোছাদ্দেক বশির


ঢাকাটাইমস: তরুণ প্রজন্মের একটি দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বিচার নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশেরই একটি দাবি ছিল। এরা কি করেছে আমরা কম বেশি জানি। এরা আত্মস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী। কিন্তু পরবর্তীতে অস্বীকার করায় বিচার করে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।


ঢাকাটাইমস: কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে আইনি জটিলতা শুরু হয়েছে। আপনি কি মনে করেন?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমরা ফৌজদারি মামলা ও যুদ্ধাপরাধীদের মামলা গুলিয়ে ফেলি। রিভিউ করার বিষয়টি যুদ্ধাপরাধের বিচারের কোথাও নেই।এসব মামলায় বিশ্বে আপিল করার বিষয়টিই নেই। কিন্তু বাংলাদেশে আপিল করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।


ঢাকাটাইমস: যুদ্ধাপরাধের বিচার ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কি প্রভাব ফেলতে পারে?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: রাজনীতি মানে...। এই বিচারটি হওয়া উচিত ছিল। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সমাধান না করে জিইয়ে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। অতীতের কিছু বড় বড় অনিষ্পন্ন বিষয় নিষ্পন্ন না হলে সহিংসতা, সংঘাতের রাজনীতে থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।


ঢাকাটাইমস: বিচারের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে জাতি কি মুক্তি পাবে?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: জন্ম ও অস্তিত্বের জন্য বিচারটি বাংলাদেশেরই দাবি ছিল। অন্য কোনো কারণে যদি বিপ্লব হয়, সে বিপ্লবে যদি বিজয় হয় তাহলে তারা নতুনভাবে বাংলাদেশ গড়তে পারে। কিন্তু এটা মুক্তিযুদ্ধেরই বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী যারা তারা এই বিচারটি করবে, তারা বিচারটি করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক অনিষ্পন্ন বিষয় নিষ্পন্ন হয়ে যাবে। এগুলো হয়ে গেলে আমরা দেশের অর্থনীতির উন্নতিসহ অন্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারবো।


ঢাকাটাইমস: যুদ্ধাপরাধের বিচারের সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধেরও একটি দাবি ছিল। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছেন আদালত।কিন্তু সাংগঠনিকভাবে তারা এখনও কাজ করছে। দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি দেখছেন?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়াতে এখন পর্য‌্যন্ত তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।তবে রাজনৈতিক দল হিসাবে তারা নিষিদ্ধ হয়নি।রাজনৈতিক দল হিসাবে তারা নিষিদ্ধ হবে। তার অনেক আলামত কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে উঠে এসেছে। যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায়ে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে বলা হয়েছে। এখন ভাববার সময় এসেছে জামায়াতের যে রাজনীতি, সেই রাজনীতি গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে যায় কিনা? গণতান্ত্রিক দল হিসেবে দলটিকে আমরা গ্রহণ করবো কিনা? গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটি বিকৃত করে সবকিছু জায়েজ করা অপরাধ। কিন্তু গণতন্ত্র সবকিছুকে জায়েজ করে না।সবকিছু যদি জায়েজ হয় তা হলে যারা পেট্রল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারছে তাদেরকে কেন প্রটেকশন দিতে হবে।


ঢাকাটাইমস:নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারায় সরকারবিরোধীরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাচ্ছে।এ বিষয়ে কি বলবেন ?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিরোধী দলের দাবি সঠিক নয়।সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিরোধীদল সমাবেশ করেছে। এখানে সরকার বাধা দেয়নি। বিরোধী দল নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি না করে তারা হঠাৎ ঝটিকা মিছিল থেকে পুলিশের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করছে। পুলিশ কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। ককটেল মারা, গাড়ি পুড়ানো, মানুষ মারাতো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হতে পারে না।


ঢাকাটাইমস: বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কি বলবেন?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা হচ্ছে।অনেক জায়গায় রেলের ফিসপ্লেট তুলে ফেলা হচ্ছে।গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এসব নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীদেরকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই লোকগুলো কি স্বতঃস্ফূর্তভাবে করছে। এর উপরে কেউ নেই, তার উপরে কেউ নেই, তার উপরে কেউ নেই। অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে, অর্থ দিচ্ছে ও নির্দেশ দিচ্ছে। এরা কারা? কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ ছাড়া কি এমনি এমনি সব ঘটছে? এর দায় কি নেতাদের উপর যায় না?


ঢাকাটাইমস: বিরোধী কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে কী?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: সমস্যার সমাধান এক জিনিস। আর আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের ব্যবস্থা নেয়া অন্য জিনিস। সাধারণ জনগণ কি নিরাপত্তা চায় না? নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে বলা হচ্ছে সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে বলা হচ্ছে গণতন্ত্র যায় যায়। নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস এই দুটির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে। নিরাপত্তা চাইবেন আবার নিরাপত্তা বিঘ্নিতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না তা হতে পারে না।


ঢাকাটাইমস: তারানকোর চেষ্টায় সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন কী?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। ভাল একটি নির্বাচনের মাধ্যমে কেউ যদি বিরোধী দলে যায় তাও ভাল।


ঢাকাটাইমস: বর্তমান সঙ্কটের পেছনে মূল কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা। কিন্তু এ ব্যবস্থা বাতিল করার প্রধান কারণ কি?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়নি। হাইকোর্ট থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার পর সরকার সংবিধান থেকে এটি তুলে দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মূল রায় আর অবজারভেশন সাংঘর্ষিক হতে পারে না। সরকার কিন্তু সংবিধানের মধ্যে থেকে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের কথা বলছে। তারা সর্বদলীয় সরকার গঠন না করে যেভাবে আছে সেভাবেই নির্বাচন আয়োজন করতে পারতো। তারপরও তারা সর্বদলীয় সরকারের কথা বলছে।


ঢাকাটাইমস: সব সরকার ক্ষমতায় গিয়ে দলীয়করণ শুরু করে। এ জন্য নির্বাচনে কারচুপির একটি আশঙ্কা থেকে যায়। এই প্রশাসনের অধীনে কিভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নিজের পছন্দের লোক লাগে। যে নিজের ভিশন-মিশন বুঝে না তাদের দিয়ে দেশ পরিচালনা করবে। তাই প্রশাসনে নিজের পছন্দের লোক বসায়। কিন্তু নির্বাচনকালীন সময়ে এই বিষয়টি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আলোচনায় বসে সমাধান করে ফেলতে পারতো। প্রশাসনের অমুক অমুককে সমস্যা মনে হয়।তাকে পরিবর্তন করা যেত। কিন্তু বিরোধী দলকে আলোচনার জন্য আহ্বান করা হলেও তারা যায়নি।


ঢাকাটাইমস: ১৯৯৬ সালে কমনওয়েলথ সর্বদলীয় সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন শেখ হাসিনা ওই পদ্ধতি মেনে নেয়নি।এখন তিনি সেই কথায় বলছেন। কেন?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: তখন মাগুরার মতো একটি কারচুপির নির্বাচন হয়েছিল। স্থানীয় সরকারের প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছিল।এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা ছিল। বর্তমানে কিন্তু সেই পরিস্থিতি নেই।


ওই সময় একটি টেলিভিশন চ্যানেল ছিল। এখন প্রচুর পরিমাণে টেলিভিশন চ্যানেলসহ গণমাধ্যম আছে। ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড আছে। এখন নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।


ঢাকাটাইমস: গণজাগরণ মঞ্চের ভবিষ্যৎ কি দেখছেন?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: গণজাগরণ মঞ্চ জাতির একটি আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এটি গঠিত হয়েছিল। গণজাগরণ মঞ্চ তার দাবি নিয়ে বেঁচে থাকবে।


ঢাকাটাইমস: রাজনীতিতে সজিব ওয়াজেদ জয়ের আগমনকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: সজিব ওয়াজেদ জয় বড় একটি রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নিয়েছেন। তিনি শিক্ষিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবশ্যেই ভাল করার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। তিনি রাজনীতিতে আসলে দেশও অনেক কিছু পাবে।


ঢাকাটাইমস: সজিব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমানের মধ্যে কীভাবে তুলনা করেন?


মোহাম্মদ এ আরাফাত: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়াউর রহমানের তুলনা হয় না। শেখ হাসিনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার তুলনা হয় না।জয়ের সঙ্গে তারেক রহমানের তুলনা চলে না।


ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ


মোহাম্মদ এ আরাফাত: আপনাকেও ধন্যবাদ