logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
সুস্থ হয়েই কঠিন সিদ্ধান্ত: কাজী জাফর আহমেদ
২৫ নভেম্বর, ২০১৩ ২২:২৭:২৪
image


 



 



 



 



 



 



 



 



সুস্থ হয়েই ‘কঠিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ নেবেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকবিদের কখনো পূর্বাপর বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু বলে দিতে নেই। তবে আমি শিগগির সুস্থ হয়ে ফিরে হাজার হাজার শুভানুুধ্যায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্তের কথা জানাবো।’ সোমবার রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আলাপচারিতায় ছিলেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ।  

সম্প্রতি সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনার আছেন কাজী জাফর। সর্বদলীয় সরকারে জাতীয় পার্টির অংশ নেয়ার পর এক বিবৃতিতে দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিয়ে এরশাদ জাতির সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে নেমে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন আলোচিত এই জাপা নেতা।

দলে থেকে দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তার বিবৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী জাফর আহমেদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের নির্দেশেই আমি বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করার কাজ করেছি। গত একবছর ধরে বিএনপির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এরশাদ সাহেব নিজেও একাধিকবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের নির্ভুল প্রমাণ আমার কাছে আছে।’

আক্ষেপ প্রকাশ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান নিজে একাধিবার বলেছেন, সর্বদলীয় সরকার অসাংবিধানিক। এই সরকারের অধীনে তিনি নির্বাচনে যাবেন না বলেছেন। প্রয়োজনে কারাগারে জীবনের শেষবেলা কাটাবেন। কিন্তু তিনি শেষ মুহূর্তে এসে পুরোপুরি উল্টে গেলেন। অসাংবিধানিক সরকারে সাতজন মন্ত্রী দিলেন। গত ৫৮ বছর ধরে আমি রাজনীতি করছি। কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যানের এই আচরণে আমি অবাক হয়েছি। এমন ঘটনা আমি কখনো দেখিনি।’

কাজী জাফর অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনার প্রয়োজন আছে। এটাই নিয়ম। কিন্তু সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেয়ার মতো এতবড় একটি সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান একাই নিলেন। কোনো প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন মনে করলেন না। আমি তো এটা সহ্য করতে পারি না। এটা প্রতিবাদ করা আমার পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।’

নিজের রাজনৈতিক জীবনের কথা টেনে তিনি বলেন, ‘আমি দেশের প্রধানমন্ত্রীও হয়েছি। সব সময় রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে কাজ করেছি। কখনো কাউকে ক্ষতি করিনি। অনেক যতœসহকারে আমার পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছি।’      

তবে হাসপাতালে তাকে দেখতে যাওয়ার জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেননি। বললেন, ‘এরশাদ সাহেব আমাকে হাসপাতালে তিনবার দেখতে এসেছেন। তার এই সৌজন্যতাবোধের জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি যে ভদ্রতা দেখিয়েছেন তা না বললেই নয়।’

দেখা করতে এলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে কাজী জাফর বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার রাজনীতি নিয়ে কোনো কথাই হয়নি।’

একসময় বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কাজী জাফর আহমেদ। এজন্য পরিবারিকভাবেও বেশ ধকল পোহাতে হয়েছে তাকে। সেইসব সময়ের কথা তুলে তিনি বলেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে বিদ্রোহ করে আমি বাম রাজনীতি করেছি। আমার বাবা চাইতেন না আমি বাম রাজনীতি করি। একসময় বাবা আমাকে ত্যাজ্য করেছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি উইলের মাধ্যমে তার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমার ভাই-বোনকে যেন আমি নিজে সম্পত্তি ভাগ করে দেই। একই ভাবে উনি (এরশাদ) যা করেছেন তা নীতি বহির্ভূত। নীতির সঙ্গে কোনো আপস করবো না।’

নিজের অবস্থানে এখনও অটল আছেন জানিয়েছে কাজী জাফর বলেন, ‘আমি কখনো নীতির বরখেলাপ করেনি। করবোও না। তিনি (এরশাদ) চাইলে সব রাজনৈতিক নীতি পরিবর্তন করবে পারেন। কিন্তু নেড়া বেল তলায় একবার যায়, দুইবার যায় কিন্তু তিনবার যেতে পারে না।’

এরশাদের বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতি তিনি নিজে অনেকবার লিখে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে বিবৃতি আমি দিয়েছিলাম তা জেনেবুঝেই দিয়েছি। এনিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই।’

বিবৃতির পর তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে মুচকি হেসে জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে তা আপনারাই (সাংবাদিক) চিন্তা করে বের করুন। আমাকে বলতে হবে কেন?’