জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের চলমান সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় কী হতে পারে এই নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মানিক মোহাম্মদ।
পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:
ঢাকাটাইমস: দেশে চলমান বিরোধী জোটের কর্মসূচি নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
ড. হারুন-অর-রশিদ: বিরোধী জোটের এসব কর্মসূচির কোন প্রয়োজন ছিল না। এসব ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির কারণে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে। বিরোধী জোটের উচিত ছিল সরকারের সাথে আলোচনা বা সমঝোতা করে নির্বাচনে যাওয়া। কেননা নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের জয়লাভের সম্ভাবনা ছিল।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের জন্য নিজেদের লোক বসিয়েছেন বলে অভিযোগ করছে ১৮ দল। তাহলে বিরোধীদল কিভাবে জয়ী হবে?
ড. হারুন-অর-রশিদ: জনস্রোত যেদিকে যায় সেখানে যত বাঁধাই আসুক না কেন তা ঠেকানো মুশকিল। দেখুন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয় লাভ করেছে। সেই সময়তো মহাজোট সরকার ক্ষমতায় ছিল। সর্বশেষ গাজীপুরের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিরা প্রচার প্রচারণা করার পরও নির্বাচনে হেরে যেতে হয়েছে। এগুলো হয়েছে জনস্রোতের কারণে। জনগণের জনস্রোত এখনো বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের দিকে রয়েছে। তারা নির্বাচনে অংশ নিলে জয়লাভ করবে। অন্যদিকে সরকার যতই নিজেদের লোক নিয়োগ করুক না কেন, কোনভাবেই কিন্তু জনসমর্থন আটকে রাখা যায় না।
ঢাকাটাইমস: তাহলে বিরোধী জোটের করণীয় কী?
ড. হারুন-অর-রশিদ: বিরোধীজোটের উচিত নির্বাচনে অংশ নেয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের তাদেরকে দেয়া হবে এই আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাাচনে না গিয়ে এভাবে সহিংসতা অব্যাহত রাখলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক রাজনীতিতেও আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি বলছে- আন্দোলনের বিকল্প নেই, সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলছে। তাহলে চলমান এই সংকটের সমাধান উপায় কী?
ড. হারুন-অর-রশিদ: আমার কাছে মনে হয় বিএনপি পলিটিক্যাল গেমে ভুল করেছে। তারা আরো আগে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার দরকার ছিল। তারা যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতো তাহলে দেশের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। তাই তাদের উচিত হবে সরকারের সাথে আলোচনা বা সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চলমান সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসা।
ঢাকাটাইমস: বিরোধীজোট ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে?
ড. হারুন-অর-রশিদ: একটি রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি হলো সংবিধান। সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করছে। সুতরাং নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হওয়ার তো কারণ দেখছি না।
ঢাকাটাইমস: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপকে কিভাবে দেখেন?
ড. হারুন-অর-রশিদ: একটি গণতান্ত্রিক দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ইতিবাচন নয়। দেশের সমস্যা দেশের রাজনীতিবিদদেরকেই সমাধান করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে নানা কারণে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সুতরাং বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে।
ঢাকাটাইমস: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ড. হারুন-অর-রশিদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।