ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। গবেষণার পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক রাজনীতি নিয়ে বিশ্লেষণ করে থাকেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশে বিদেশীদেও আগমন বেশ লক্ষণীয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন নিয়ে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির সুযোগে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ নিয়ে তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে কথা বলেছেন। নিচে তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
ঢাকাটাইমস: দেশের রাজনীতিতে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ কিভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন: বিদেশীরা এসে কি আলোচনা করছেন বা কি ধরণের বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন তা অনেকক্ষেত্রে অজানা থেকে যায়। সব জানার সুযোগ হলে বিষয়টি ইতিবাচক না নেতিবাচক তা নিয়ে আলোচনা করা যেতো। তবে বিদেশীদের তৎপরতায় মনে হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। চেষ্টাটা খুব একটা ফলপ্রসুও হচ্ছে না আর দ্বিতীয়ত দেশের ভিতরে পক্ষ বিপক্ষ শক্তি তৈরী হচ্ছে।
ঢাকাটাইমস: বিদেশীরা কি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান করতে পারবে?
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন: দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের কথা বিবেচনা না করেই আমরা অনেক বেশি উৎসাহ আর আবেগ প্রকাশ করছি বিদেশীদের কাছে। আর বিদেশীরাতো যুক্ত হচ্ছে তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই। দেখুন বিদেশীরা কখনোই তাদের স্বার্থের বাহিরে কিছু করবে না। যেমন ধরুন, বাংলাদেশকে যদি ব্রিটেন কোন কাজ করার সুযোগ পায়। তখন কিন্তু প্রথমে নিজেদের স্বার্থের কথাই চিন্তা করবে। বিদেশীরা আমাদেরকে দু’শবছর শাসন করেছে। আমেরিকা ৪৫ সালের পর সারা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। বিদেশিরাতো বসেই থাকে যে কখন কোন দেশে য্ক্তু হওয়া যায়। সুযোগ সুবিধা নেয়া যায়। সুতরাং আমরা যদি দরজা খুলে তাদেরকে বলি আসো। তারাতো আসবেই। তারাতো কখনো নিজের স্বার্থের বাহিরে যাবে না।
ঢাকাটাইমস: বিদেশীদের প্রতি এত বেশি নির্ভরশীলতা কেন?
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন: দেশের ভিতর কোন কোন শক্তি বাইরের শক্তির উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। এজন্য তারাও সুযোগের সৎ ব্যবহার করা চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতিসংঘ যেভাবে য্ক্তু হতে চাচ্ছে। এরকম হলে এটার ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবটাই বেশি হবে। অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানে দেশের রাজনৈতিক নেতারা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন বিদেশীরা।
ঢাকাটাইমস: সরকার গঠনে বিদেশীরা এভাবে হস্তক্ষেপ করলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কার্যক্রম নিয়ে কি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে না ?
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন: ইউরোপ, আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত গণতন্ত্র আমাদের দেশে নেই। আমাদের দেশের গণতন্ত্রে অনেক ভুলক্রটি আছে। অনেক সমস্যা আছে। এগুলো নিয়েই আমাদেরকে সামনে যেতে হবে। আবার দেশের যে বাস্তবতা তাও মেনে নিতে হবে।
ঢাকাটাইমস: বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন না হলে দেশের ভবিষৎ কি হবে?
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন: দেশের অর্থনীতির খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। হয়তো আরো খারাপ হবে। গার্মেণ্টস শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশের অবস্থা দেখে দাতাদেশগুলো অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যেটা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা সরকারকে মোকাবেলা করতে হবে না। সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে সাধারণ মানুষকে। আজকে গার্মেন্টস শিল্প ক্ষতি হলে কোন রাজনীতিবিদের ক্ষতি হবে না। হবে সাধারণ জনগণের। ক্ষতি হবে আমাদের শ্রমজীবী মানুষদেরকে।
ঢাকাটাইমস: চলমান সংকট সমাধানে করণীয় কি?
অধ্যাপক ড. দেলায়ার হোসেন: রাজনৈতিক দলগুলো অনেক অপরিপক্কতার পরিচয় দিচ্ছে। সমস্যা নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে। তা সংলাপের মাধ্যমে হতে পারে আবার আলোচনার করেও হতে পারে। বাইরের কোন শক্তি এসে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না। কোনো কোনো দলের জন্য একধরণের নির্ভরশীলতা তৈরি করছে। যেটা দেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই সংকট সমাধানে দুই দলকে আলোচনা করতে হবে। ছাড়া দেয়ার মন মানসিকতা তৈরী করতে হবে।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন: মানিক মোহাম্মদ।