তৃতীয় বারের মতো গাজীপুর-২ (টঙ্গী-গাজীপুর সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বাবা আহসান উল্লাহ মাস্টারও একই আসনের এমপি ছিলেন। নির্বাচনী এলাকার নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকাটাইমসের প্রতিবেদক হাবিবুল্লাহ ফাহাদের সঙ্গে।
ঢাকাটাইমস: টঙ্গী শিল্প এলাকায় বেশকিছু কলকারখানা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। সরকারি দু-একটি প্রতিষ্ঠানও এর মধ্যে আছে। এগুলোকে চালুর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেবেন?
জাহিদ আহসান রাসেল: আমি তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। এর আগে আমি বিভিন্ন সময় বন্ধ কলকারখানা চালু করে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের প্রতি জোর দিয়েছি। বেসরকারি বেশ ক’টি কারখানা ইতিমধ্যে চালু করেছি। হাজার হাজার বেকার যুবক কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। এখনো যেসব কলকারখানা বন্ধ আছে সেগুলো যদি মালিকপক্ষ চালুর উদ্যোগ নেয় তবে আমরা তাদের পাশে থাকবো।
ঢাকাটাইমস: সরকারি কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল চালুর কোনো উদ্যোগ কি নেয়া হয়েছিল?
জাহিদ আহসান রাসেল: মিলটি বিএনপি সরকারের সময় বন্ধ হয়। আমরা ক্ষমতায় আসার পর কয়েকবার বেসরকারি পর্যায়ে মিলটি চালুর ব্যাপারে দরপত্র ডেকেছিলাম। আশানরূপ সাড়া মেলেনি। আবারও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এখানে আশার আহ্বান জানানো হবে। যদি তারপরও কোনো সাড়া না মেলে তবে বিকল্পভাবে সরকার এটি চালুর উদ্যোগ নিতে পারে।
ঢাকাটাইমস: বিসিক এলাকার রাস্তাঘাটের দুরাবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে...।
জাহিদ আহসান রাসেল: এটি ঠিক। স্বাধীনতার পরবর্তী ৪০ বছরে বিসিকের রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়নি। গতবার ক্ষমতায় থাকতে বিসিকে রাস্তাঘাটের চেহারা পাল্টে দিয়েছি। শিল্প মালিকদের সহায়তা নিয়ে সবাই মিলে বিসিকের প্রত্যেকটি রাস্তা কার্পেটিং করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কোথাও শিল্প এলাকায় এত সুন্দর রাস্তা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
ঢাকাটাইমস: সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এর আওতায় টঙ্গীকে কতটুকু ডিজিটালাইজড করতে পেরেছেন?
জাহিদ আহসান রাসেল: সজীব ওয়াজেদ জয় টঙ্গীতে এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক্স খাতের বিনিয়োগকারীদের এখানে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য তিনি সরকারের পক্ষ থেকে সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসসহ প্রতিটি হাইস্কুলে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সমিতিতেও কম্পিউটার বিতরণ করেছি। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা পৌঁছানোর যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এর সবচেয়ে বেশি সুফল পাচ্ছে টঙ্গীর শিল্প এলাকার শ্রমিকরা।
ঢাকাটাইমস: টঙ্গীতে মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় কীভাবে?
জাহিদ আহসান রাসেল: ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি অনুরোধ করেছি এখানে কিছু ডরমেটরি নির্মাণ করে দেয়ার জন্য। যেখানে শ্রমিকরা অল্প টাকায় থাকার সুযোগ পাবেন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা, যারা অনেক সময় নিরাপত্তাহীনতা ভোগেন। সরকার শিগগির এব্যাপারে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
ঢাকাটাইমস: টঙ্গীতে মাদকদ্রব্যের ব্যবসা নির্মূল করার জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
জাহিদ আহসান রাসেল: আমার বাবা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার বেঁচে থাকতে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এজন্য তার ওপর বারবার আঘাত এসেছে। তারপরও তিনি পিছু হটেননি। আমাদের অবস্থানও মাদকের বিরুদ্ধে। মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া ও মাদক নির্মূল করার জন্য চেষ্টা চলছে। এজন্য প্রশাসনেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে এটি কষ্টসাধ্য কাজ। তারপরও আমরা গাজীপুরকে মাদকমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যা অন্যদের জন্য মডেল হবে।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেশব্যাপি যে সহিংসতা হয়েছে টঙ্গী তার আঁচ থেকে অনেকটাই মুক্ত ছিল। বিষয়টিকে কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?
জাহিদ আহসান রাসেল: হরতাল-অবরোধে স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়া হতো। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পুলিশবাহিনীর পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীরাও সজাগ ছিল।
ঢাকাটাইমস: উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
জাহিদ আহসান রাসেল: টঙ্গীর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার অনুমোদন হয়েছে। কাজও শুরু হয়ে গেছে। গাজীপুর সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সাড়ে ১১ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। বাকি টাকারও ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এছাড়া গাজীপুরে একটি মেডিকেল কলেজও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৫০ জন্য শিক্ষার্থী নিয়ে এবছরের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে।
ঢাকাটাইমস: আপনি যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সমস্যা ও সম্ভাবনা কী।
জাহিদ আহসান রাসেল: গত পাঁচ বছরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপ, সাউথ এশিয়ান গেমস ও বাংলাদেশ গেমস দেশের মাটিতে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর পাশাপাশি হা-ডু-ডু, গোল্লাছুটের মতো গ্রামীণ খেলাগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে। বিশ্বকাপের সময় অনেকগুলো স্টেডিয়াম করা হয়েছে। সিলেটে, গোপালগঞ্জে ও কক্সবাজারে স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া টঙ্গীতে আমার বাবার নামে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করবেন। ইতিমধ্যে এজন্য প্রি-একনেক পাস হয়েছে। খুব কম সময়ের মধ্যেই এ কাজ শুরু হবে।