তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বিরোধী আন্দোলন করে আসছে। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী। এরই সূত্র ধরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ঘটে। ৫ জানুয়ারির ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নতুন করে সরকার গঠন করে। উপজেলা নির্বাচনের কারণে সে আন্দোলন থেমে আছে।
সরকার বিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে বিএনপির তৃণমূল থেকে দল পুনর্গঠনের কথা জোরেশোরে উচ্চারিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর বিএনপিকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর জন্য বৈঠক করেন এবং কিছু নির্দেশনা দেন। ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই দফা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলকে পুনর্গঠনের জন্য আবারো বৈঠক করেন। কিন্তু পুনর্গঠন ধীর গতিতে হওয়ায় এরই মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে তৃণমূলে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, উপজেলা নির্বাচন, ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা এবং বিএনপির সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠন বিষয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন কিরণ সেখ।
ঢাকাটাইমস: বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির আন্দোলন কোন পথে পরিচালিত হচ্ছে? আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি কবে ঘোষণা হবে?
রিজভী: স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দলের আন্দোলন সব সময় এক হয়। সব রাজনৈতিক দলের ন্যায় বিএনপির আন্দোলনও একই পথে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে নতুন আন্দোলনের ঘোষণা কবে আসবে সেটা শুধুই খালেদা জিয়া জানেন। তবে উপজেলা নির্বাচনের পরপর সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হতে পারে।
ঢাকাটাইমস: আন্দোলনের প্রকৃতি কেমন হতে পারে?
রিজভী: পঞ্চম দফায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে কোন ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে উপজেলা নির্বাচনের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ঢাকাটাইমস: বিগত দিনের হরতাল ও অবরোধে যে সহিংসতা হয় এর দায়ভার আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর চাপায়। এবারো কী সে রকম সহিংসতার আশংকা করছেন? এই দায়ভার থেকে মুক্ত হতে আপনারা কী করবেন?
রিজভী: যখন কোনো গণতান্ত্রিক সংগ্রাম হয় তখন অনেক ঘটনাই ঘটে। আমাদের আন্দোলনেও তেমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এমন ঘটনা ঘটতেই পাবে। নৈরাজ্য, সহিংসতা, গাড়িতে আগুন ও মানুষ হত্যা আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করেছে। সহিংসতার দায়ভার বিএনপির ওপর চাপানোর জন্য স্বৈরাচার সরকার এসব ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে।
ঢাকাটাইমস: উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি কেন অংশ নিয়েছে? আপনারা তো বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) স্বীকার করেন না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ আপনাদের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে কি না?
রিজভী: আমরা সব সময় বলে আসছি, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন এক নয়। কারণ স্থানীয় নির্বাচনে সরকার পরিবর্তিত হয় না। আর আমরা বর্তমান ইসিকে অস্বীকার করিনি। আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) কমিশনের কয়েকজন্যকে অস্বীকার করেছি এবং তাদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি।
ঢাকাটাইমস: পুনর্গঠিত ঢাকা মহানগর কমিটি কবে ঘোষিত হতে পারে? সাদেক হোসেন খোকা পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন কিন্তু পদত্যাগ করেননি, এতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
রিজভী: ভাই আমি খুব বড় নেতা না। একজন অতি সাধারণ মানের নেতা। ফলে ঢাকা মহানগর কমিটি কবে নাগাদ হবে তা বলতে পারি না। এটা শুধুই খালেদা জিয়া জানেন। কেবলমাত্র তিনিই বলতে পারবেন, কবে ঢাকা মহানগরের কমিটি ঘোষণা করা হবে। আর ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা অব্যাহতি চেয়েছেন কিন্ত তিনি পদত্যাগ করেননি, এটা তিনি কেন করেননি সেটা তার বিষয়। এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
ঢাকাটাইমস: বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে কতোটা সহায়ক ছিলো বলে আপনি মনে করেন?
রিজভী: বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সরকার বিরোধী আন্দোলনে যথার্থ ভূমিকা রেখেছেন। যদি যথার্থ ভূমিকা না রাখতেন তাহলে সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বন্দুকের নলের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করতো না। তাদের ওপর জুলুম, গুম, নির্যাতন করতো না, তাদের হাত-পা ভেঙে দিতো না।
ঢাকাটাইমস: গুম-খুন-নির্যাতনের কথা আপনারা বারবার বলছেন, তাহলে আপনারা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা কেন করছেন না?
রিজভী: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির নেতাসহ সাধারণ মানুষকে গুম ও নির্যাতন করছে এটা দেশের মানুষ যেমন জানে তেমন আমরাও জানি। আর এটাই হচ্ছে সত্য। যারা গুম এবং খুন করছে তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা করতে যাবে তাকেই তারা হয়তো গুম করে ফেলবে।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও কী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকবে?
রিজভী: স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত যেটা, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সেটা অবশ্যই থাকবে। যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে সেটাই সত্য এবং সে বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করছি।
ঢাকাটাইমসকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যাবাদ
রিজভী: আপনাকে এবং ঢাকাটাইমসের সব পাঠককে আমার ধন্যবাদ।