logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
যথাযথ পন্থায় অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেই: মো. জাবেদ আলী
১১ মার্চ, ২০১৪ ১০:৫০:৪৭
image


ইতিমধ্যে দুই দফায় ২১৩টি উপজেলায় ভোট হয়েছে। বেশিরভাগ এলাকায় ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে হলেও সহিংসতা একেবারে হয়নি এমন নয়। সহিংসতার কারণে দুই দফায় সাতটি উপজেলার অন্তত ৫০টি আসনে ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। একটি উপজেলায় ভোটই হয়নি। এই নির্বাচনে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা জায়গায় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল। দুই দফায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত অন্তত ১৬ জন প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের ঘটনা ঘটেছে। এসব নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. জাবেদ আলীর মুখোমুখি হয়েছিল ঢাকাটাইমসকের। কথা বলেছেন বিলকিছ ইরানি।

ঢাকাটাইমস: উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা হচ্ছে। অথচ সারা দেশে একসঙ্গে নির্বাচন না হওয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক কঠোর করার সুযোগ ছিল। কেন এমন হচ্ছে?

জাবেদ আলী: কয়েক দফায় নির্বাচন করায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত করা যাচ্ছে। একবারে সব জায়গায় নির্বাচন করতে গেলে এ পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা সম্ভব হতো না। আর একসঙ্গে সব নির্বাচন হলে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় কোনো বিঘœ ঘটতো না, এটা বলা যাবে না। তাছাড়া শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আরও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি একমাত্র নিয়ামক নয়। প্রার্থীদের অবস্থান, সমর্থকদের অবস্থান এবং নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ সবকিছুই এর সঙ্গে জড়িত।

ঢাকাটাইমস:প্রথম দফার ভোটের আলোকে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন আরও শান্তিপূর্ণ করার কথা বলেছিলেন আপনারা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দ্বিতীয় দফায় সহিংসতা হয়েছে বেশি। তাহলে নির্বাচন কমিশন আসলে কী শিক্ষা নিলো?

জাবেদ আলী: আমরা চাই নির্বাচন সব সময়ই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হোক। পিছনে যেসব ত্রুটি- বিচ্যুতি হয়েছে সেগুলোর প্রতি খেয়াল রেখে অবশ্যই পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হয় যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কিছু আর না ঘটে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। নিজেরাও বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। যেসব জায়গায় নির্বাচনী পরিবেশ কিছুটা বিঘিœত হয়েছে সেসব জায়গায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস: দুই দফায় মিলিয়ে ১৬ উপজেলায় কারচুপির অভিযোগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেছেন। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

জাবেদ আলী: যদিও কাগজে-কলমে উপজেলা নির্বাচনকে দলীয় সমর্থনের নির্বাচন বলতে পারছি না। তবে এটুকু বলব, যেকোনো প্রার্থীর যেকোনো ধরনের অভিযোগ আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নেই। যদি সেটা যথাযথ পন্থায় আসে। অবশ্যই তা প্রাতিষ্ঠানিক হতে হবে। কেউ যদি আমাকে টেলিফোন করে সহিংসতা বা অনিয়মের অভিযোগ করেন তবে ব্যবস্থা নেয়া তো খুব কঠিন হবে। আইনে বলা আছে যে, নির্বাচন চলাকালীন যদি ভোট গণনা বন্ধ করতে হলে প্রিজাইডিং অফিসার তা বন্ধ করবে। তিনি যদি মনে করেন পরিবেশ এমন হয়েছে যে, কোনো কেন্দ্র পরিচালনা করা যাচ্ছে না, তবে তিনি সেখানে ভোট কার্যক্রম বন্ধ করতে পারেন। সে ক্ষমতা তার আছে। তাছাড়া ভোট চলাকালীন সময়ে কমিশন ঢাকায় বসে হাজার হাজার ভোট কেন্দ্রে সশরীরে নজরদারি করতে পারবে না। টেলিফোন বা অন্য মাধ্যমে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেয়া হয়। তাছাড়া প্রার্থী বা অন্য কেউ অভিযোগ করলে সেটা সত্য নাও হতে পারে। যেমন গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে মেহেরপুর সদরের চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী মো. মারুফ আহমদ বিজন কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এমনকি হরতালেরও ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে তিনিই জয়ী হয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায় কোন অভিযোগ আমলে নিতে পারবো বা নেয়া উচিত।

ঢাকাটাইমস: নানা সময় ভোটের সময় দুই পক্ষ থেকেই ঢালাও অভিযোগ পাওয়া যায়। কমিশন তদন্ত করে এসব অভিযোগের সুনির্দিষ্ট জবাব দেয় না কেন?

জাবেদ আলী: যেহেতু অভিযোগগুলোর কোন সত্যতা, যথার্থতা বা তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত নয় তাই সব গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কমিশনের অনেক কাজ। এর আগে একটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা ৩৯২টি অভিযোগ পেয়েছিলাম। এর মধ্যে মাত্র ১১টি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাকিগুলো গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কারণ গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে তাতে সেগুলোর সত্যতা মেলেনি।

ঢাকাটাইমস: কোনো প্রার্থী বা দল অভিযোগ না করলেও নির্বাচন কমিশন তো নিজেই উদ্যোগী হয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এবার কোথাও এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়ার নজির আছে কি?

জাবেদ আলী: অভিযোগ না আসলে আমরা আগ বাড়িয়ে কোথাও কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলে সেটা প্রার্থীর অনুকূল কিংবা প্রতিকূলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠতে পারে। তাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে  সেটা যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা ব্যবস্থা নেই। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে কমিশন মনে করলে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থাই নেয়া হয়।

তবে ইতিমধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে অভিযোগ আসলো সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দলীয় লোক। তাকে বাদ দেয়া প্রয়োজন। আমরা তাকে বাদ দিয়েছি। প্রতি উপজেলায় একটি নির্বাচনী প্যানেল তৈরি করা হয়। প্যানেলটি জেলা প্রশাসক অফিসে করা হয়। আমাদের নির্বাচনী কর্মকর্তারা এতে সহায়তা করেন। এখানে সরকারি-আধাসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটা জেলা প্রশাসকই করেন। আইনেই আছে দলীয় কোনো প্রার্থী বা সক্রিয় কোনো ব্যক্তি এই প্যানেলভুক্ত হতে পারবে না। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে নিতে পারেন। তারপরও ভুলে দুই-একটি নাম আসতে পারে। তবে জানা মাত্রই ব্যবস্থা নেব।

ঢাকাটাইমস: নানা সময় সহিংসতা হলে নির্বাচন কমিশন কিছু কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে কেবল। কিন্তু যাদের কারণে এই ভোট স্থগিত হলো তাদের বিরুদ্ধে কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এতে করে কি নির্বাচনী সহিংসতাকে উৎসাহ দেয়া হয় না?

জাবেদ আলী: ব্যবস্থা নেয়া হয় না, এটা ঠিক নয়। স্থগিত হতে পারে শুধুমাত্র ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। যেটা শুধুমাত্র আচরণবিধির মধ্যেই হবে। আর আচরণবিধির মধ্যেই এর দ-ের ব্যবস্থা আছে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট আছে, তারা এসবের ব্যবস্থা নেন। নির্বাচন স্থগিত করার কারণ, ভবিষ্যতে যাতে ওই এলাকায় সুষ্ঠুভাবে ভোট করা যায় আর যাদের কারণে ভোট স্থগিত করতে হয়েছে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে।



ঢাকাটাইমস: কাগজে-কলমে নির্দলীয় নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?

জাবেদ আলী: কাগজে-কলমে নির্বাচন অদলীয় তা এখনো বলবৎ আছে। আইনেই বলা আছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনো দলীয় নির্বাচন নয়। আমরা কোনো প্রার্থী সম্পর্কে কোনো দলের কাছে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করতে পারে। বলতে পারে এটা তাদের প্রার্থী নয়। গণমাধ্যম বলছে কে কোন দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছে। কিন্তু দল কখনই এটা স্বীকার করবে না। কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলেও তারা সহযোগিতা করবে বলে আমার মনে হয় না। তবে এনিয়ে কোনো পক্ষ ক্ষুব্ধ হলে তারা আদালতে যেতে পারে। আদালতেই এটা সুরাহা হবে।

ঢাকাটাইমস: ভারতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন তো দলীয়ভাবেই হয়। স্থানীয় সরকারে দলীয় জবাবহিদিতা না থাকলে সুশাসন নিশ্চিত করা তো কঠিন। আপনারা এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি?

জাবেদ আলী: ভারতের বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। একেকটি দেশের হিসেব একেক রকম। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই রকম বিষয় থাকতে পারে। তারপরও ভারতে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আছে কিন্তু আমাদের দেশে তো নেই। এটা আমার বলা ঠিক হবে না। তবে আমি এটুকু বলতে পারি যে, আমাদের দেশে কখনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি দলীয়ভাবে হয়, সে উদ্যোগ সংসদ থেকেই আসতে হবে। সংসদেই এ নিয়ে আইন করতে হবে। এ জন্য আইন-কানুন সামান্য পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধনের প্রয়োজন হতে পারে। আইন পরিবর্তন হলে সেই অনুযায়ী আমরা হয়তো নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবো। আইন যতক্ষণ না আসে ততক্ষণ আমাদের বক্তব্য নেই। কমিশন তো আইন তৈরি করে না। তবে সব দলের পরামর্শ থাকলে কমিশন স্থানীয় সরকারকে বিষয়টি জানাতে পারে। এর বেশি কিছু নয়।

ঢাকাটাইমস:প্রধান নির্বাচন কমিশনার এক মাসের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। এতে নির্বাচন পরিচালনায় কী কমিশনের কোনো সমস্যা হবে না?

জাবেদ আলী: না। এ ব্যাপারে কোনো অসুবিধা নেই। নির্বাচনের কাজগুলো আগেই শেষ হয়েছে। এখন যে কাজ আছে সেগুলো হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রয়োজনে মুঠোফোন কিংবা ইন্টারনেটে যোগাযোগের সুযোগ তো থাকছেই। উনি দূরে গেলেও কাছেই থাকবেন।



ঢাকাটাইমস: নির্বাচন আরও শান্তিপূর্ণ এবং বিতর্কমুক্ত রাখতে আপনার কী কী পরামর্শ আছে...

জাবেদ আলী: নির্বাচন আরও শান্তিপূর্ণ এবং বিতর্কমুক্ত রাখতে বড় সহায়ক শক্তি হচ্ছে ভোটার। যেখানে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানের জনগণ যদি কোনো প্রয়োজনে এগিয়ে আসে তবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা সম্ভব হবে। কারণ, আমরা বলতে পারি ভোট ভোটারদের একটা আমানত। এই আমানত তারা আমাদের কাছে দিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে তাদের আমানত ফেরত দেয়া হবে।

আর আমার পরামর্শ থাকবে, অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি এবং জনগণের প্রতি তাদের কোনো নির্দেশনা থাকলে তা মানা উচিত। তাছাড়া ভোটাররা কখনোই গোলযোগ বা সংঘর্ষ চায় না। কমিশনের পক্ষ থেকেও সহিংসতা কাম্য নয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে তারা যেন চোখকান সবসময় খোলা রাখেন এবং যেকোনো বিষয়ে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেন।

(ঢাকাটাইমস/ ১১মার্চ/বিআই/ এআর/ ঘ.)