তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আগামী দিনে ১৮ দলের আন্দোলন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম- এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
ঢাকাটাইমস: ১৮ দলীয় জোট রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলেছিল। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে দেখা গেছে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এখন কী বলবেন?
আন্দালিব পার্থ: ১৮ দল কখনোই তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। আমরা বলেছি, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে যাব না। আমি মনে করি এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। আর জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে ক্ষমতা পালাবদলের নির্বাচন। কিন্তু এখন যেটা হয়ে গেছে সেটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখানে স্থানীয় জনগণের অনেক হিসাব-নিকাশ থাকে। আর জাতীয় নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগের অবৈধ প্রভাবের আশঙ্কা করেছিলাম। ওই নির্বাচনে এটার আশঙ্কা বেশি ছিল। কিন্তু এখন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেষমেশ যা করল তা আমাদের জন্য ভালোই হলো। আমরা যে অভিযোগ করে আসছিলাম এরা তারই প্রমাণ দিল। আওয়ামী লীগ তাদের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে যে চায় না, তারা যে জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় উপজেলা নির্বাচনই এর প্রমাণ।
ঢাকাটাইমস: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল যেভাবে হস্তক্ষেপ করছে তাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আন্দালিব পার্থ: নির্বাচিত স্বৈরাচার সামরিক স্বৈরাচারের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ানক হয়। কারণ, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে যারা স্বৈরাচারী শাসক প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের কিন্তু সাংগঠনিক একটা অবস্থান থাকে। ওই সংগঠনও কিন্তু এর সুযোগ ভোগ করে। যার প্রমাণ পুলিশ, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ আর জনগণের ভোটের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু আমরা করি। চিন্তা করি এখন হরতাল দিলে জনগণের কষ্ট হবে। মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাবে। এজন্য অনেক কর্মসূচি পরিবর্তন করি। আওয়ামী লীগ এগুলোর থোরাই কেয়ার করে। আর যতই বেহায়াপনা বা নির্লজ্জের মতো নির্বাচন করুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন মুখপাত্র বসে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে একটা বিবৃতি দিয়ে দেবেন। আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে এখন অনেক দূরে। এটা কাটিয়ে উঠতে অনেক বছর লাগবে। ইচ্ছা করলেও আর কোনোদিন তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না।
ঢাকাটাইমস: উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আবার আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এবারের আন্দোলনের ইস্যু কী থাকবে?
আন্দালিব পার্থ: আন্দোলন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে। এর বাইরে অন্য কোনো ইস্যুতে আন্দোলন করা উচিত হবে বলে আমার মনে হয় না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন লাগবে। এখানে নির্বাচন কমিশন পরিবর্তনের কথা আসবে। এর বাইরে উপজেলা আন্দোলনের ইস্যু হবে না। এটা আমাদের জন্য একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে, এতটুকুই।
ঢাকাটাইমস: আপনারা উপজেলা নির্বাচনে পুলিশ, প্রশাসন বা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু জেল-জরিমানার ভয়ে বিএনপি বা ১৮ দলের প্রার্থীরাও এলাকায় থাকেনি। রাজনীতি করতে এসে এসব ভয় করা কতটুকু যৌক্তিক?
আন্দালিব পার্থ: এখানে একের রাজনৈতিক ধারণা একেক রকম। আপনি মিছিলে যেতে বললেও সবাই মিছিলে যাবে না। সবাই রক্ত দিয়ে রাজনীতি করে না। অনেকে মেধা দিয়ে রাজনীতি করে। আর ভৌগোলিকভাবে একেক এলাকার অবস্থা একেক রকম। সব জায়গায় মানুষ প্রতিবাদী হয় না। আবার অনেক জায়গায় মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকাটাইমস: জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রতিহত করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট প্রতিরোধ কমিটি করার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু সেখানেও কী ১৮ দলের নেতাকর্মীরা সফল?
আন্দালিব পার্থ: অবশ্যই সফল। তা না হলে ১৫৩টি জায়গায় নির্বাচন হলো না কেন? যেখানে আমাদের শক্ত অবস্থান আছে, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হতে পারে সেসব জায়গায় আওয়ামী লীগ নির্বাচন করেনি। বাকি জায়গাগুলোতে কে বা কাকে মনোনয়ন দিয়েছে তা অনেকে জানত না। এগুলো ছিল লোক দেখানোর জন্য। সেখানেও কোনো নির্বাচন হয়নি। আমরা যদি সক্রিয় না থাকতাম তবে তো এসব হতো না।
ঢাকাটাইমস: তত্ত্বাবধায়কের দাবি প্রতিষ্ঠা না হলে পরবর্তী নির্বাচনে আপনাদের অবস্থান কী হবে?
আন্দালিব পার্থ: তত্ত্বাবধায়ক নয়, আমরা করছি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের আন্দোলন। নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন করার তো প্রশ্নই ওঠে না। এই নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে আন্দোলন থাকবে। সারা বিশ্বই তো বলছে এভাবে নির্বাচন হতে পারে না। এটা তো নির্বাচনের উদ্দেশ্যকে নষ্ট করে দিয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করব যত তাড়াতাড়ি হোক এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছতা বেশি বজায় থাকবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি না হলে আমরা তো কোনো দিনও নির্বাচনে যাব না।
ঢাকাটাইমস: সরকারের দুর্নীতি নিয়ে আপনি কথা বলেছেন। কিন্তু যাদের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট সেই বিএনপির বিরুদ্ধেও তো একই অভিযোগ ছিল।
আন্দালিব পার্থ: দুর্নীতিবাজরা কোনো দলের লোক নয়। তারা যেন দুর্নীতি করে কোনোভাবেই পার পেতে না পারে, এটাই হচ্ছে আইনের শাসন। যদি বিএনপির কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ গত পাঁচ বছরে কী কাজ করল? দুর্নীতিবাজদের বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণসহ ধরা হচ্ছে না কেন? তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি কেন? আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পার্থক্য হলো আওয়ামী লীগ স্বঘোষিত দুর্নীতিগ্রস্ত দল। কারণ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নতুন কেবিনেটে আগের মন্ত্রিসভার অনেকে বাদ পড়েছেন। এর মানে হচ্ছে আগের মন্ত্রিসভার ওই সদস্যরা ব্যর্থ এবং সরকার ব্যর্থ ছিল। তাদের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছিল প্রধানমন্ত্রী তাদের বাদ দিয়ে সেই বিষয়টিই প্রমাণ করেছেন। তাছাড়া কয়েকজনের সম্পদের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তো অনুসন্ধানও করছে। কিন্তু আমরা যখন দুই বছর আগে এসব কথা বলতাম তখন তাদের প্রোটেকশন দেয়া হতো।
ঢাকাটাইমস: দুদক তো বেশ কয়েকজনের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে। যেটা আপনিও বলেছেন।
আন্দালিব পার্থ: একেক জনের হলফনামায় দেখা গেছে, যাদের বছরে ১০ লাখ টাকা আয় ছিল না, তারা বছরে ১২ কোটি টাকা আয় করছে। এখনো দুদক যা করছে তা লোক দেখানো। কারণ, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির বড় বড় হোতারা কোথায়? হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যেসব মন্ত্রী-উপদেষ্টারা জড়িত থাকার খবর এসেছে তাদের ধরা হচ্ছে না কেন? পত্রিকায় যাদের নামে মৎস্য চাষ করে কোটি কোটি আয়ের কথা এসেছে এদের ব্যাপারে কী কোনো তদন্ত হচ্ছে? তাদের মধ্যে দুয়েকজনের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। তাও যারা সবার কাছে অপরাধী হিসেবে পরিচিত তারাও আছে। কিন্তু এর বাইরে যাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান কোথায়? এখন যা হচ্ছে সবই লোক দেখানো। আওয়ামী লীগ তো খুব ভালো করেই জানে কীভাবে ইস্যু পরিবর্তন করতে হয়। এগুলো আওয়ামী লীগের একটা চাল।
ঢাকাটাইমস: বাদ পড়া মন্ত্রীদের অনেককে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এতে মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতার বিষয়টি কতটুকু রক্ষা হবে?
আন্দালিব পার্থ: আসলে সংসদীয় কমিটিগুলোর কোনো ভূমিকাই থাকে না। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র এখনো ওইভাবে শক্তিশালী হয়নি। প্রথমে দুই আড়াই বছর অনেক ধরনের চেতনা থাকে। এরপর সব এক হয়ে যায়। এটি একটা কোরাম ও আঁতাতের জায়গা হয়ে যায়। যদি কোথাও মন্ত্রীর সঙ্গে সভাপতির দ্বন্দ্ব থাকে সেই ক্ষেত্রে একটু আধটু কথাবার্তা শোনা যায়। আর যে ব্যক্তি মন্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ হয়েছেন সে লোক সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে সফল হয় কীভাবে? আর অতীতে দেখা গেছে, যিনি গৃহায়ণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাকে বানানো হয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি। আবার জাহাজ মালিককে দেওয়া হয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে।
ঢাকাটাইমস: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আপনারা কখনোই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেননি। এতে কী বিভিন্ন মহলে ভুল বার্তা যাচ্ছে না?
আন্দালিব পার্থ: আমরা চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভালোভাবে হোক। তবে সেটা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়।
ঢাকাটাইমস: যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের অভিযোগ আছে তাদের নিয়ে আপনারা রাজনীতি করছেন।
আন্দালিব পার্থ: আওয়ামী লীগ তো এরশাদ সাহেবের সঙ্গে ঐক্য করেছে। আওয়ামী লীগ তো তার দুর্নীতির দায়-দায়িত্ব নেয় না। ওটা যেভাবে হয়েছে আমরাও জামায়াতের সঙ্গে কিছু ইস্যুতে ঐক্য করেছি। এর মানে এই নয় যে, তাদের কোনো অপরাধের দায়-দায়িত্ব আমরা নেব বা জামায়াতের সব কিছুর সঙ্গে আমাদের একমত হতে হবে। আমরা জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করেছি বলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই না, এটা ঠিক নয়।
ঢাকাটাইমস: প্রশাসন ও পুলিশকে সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে বলে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। একই অভিযোগ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ করেছিল। এই সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার উপায় কী?
আন্দালিব পার্থ: এই অভিযোগটা এখন শুধু দলীয় পর্যায়ে নেই। এটি সাধারণ মানুষের অভিযোগ। আওয়ামী লীগ যতই মনে করুক দেশের উন্নয়ন করে জনগণকে খুশি করবে, তা হবে না। হাজার উন্নয়ন করে জনগণকে খুশি করা সম্ভব নয়। জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়াকে জনগণ কখনোই মেনে নিতে পারবে না। সব জায়গায় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। তখন আপনি না থাকলেও উন্নয়ন হবে। আর হাতিরঝিলে বাতি জ্বালিয়ে টিকে থাকা যাবে না। প্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেই এরশাদ সরকারের সময় থেকে দলীয়করণের মোড়কে ঘিরে ফেলা হয়েছে। এখানে পরিবর্তন আনা সম্ভব না হলে কোনো ধরনের উন্নয়নই সম্ভব নয়। তবে এখন মানুষ আগের চেয়ে চিন্তা-চেতনায় অনেক গণতান্ত্রিক। এখন আর মানুষের বাক স্বাধীনতা চাইলেও কেড়ে নেওয়া যাবে না।
ঢাকাটাইমস: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কী গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা আছে বলে আপনি মনে করেন?
আন্দালিব পার্থ: আমি মনে করি না রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের মানসিকতাতেই এটা নেই। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমি বিজেপির চেয়ারম্যান হয়ে গেছি। যেমন করে কোনো শিল্পপতি মারা গেলে তার নাবালক ছেলেকে কোম্পানির চেয়ারম্যান বানিয়ে দেওয়া হয়। এটা গেল একটা উদাহরণ। এর বাইরেও অনেক বিষয় আছে। আমাদের রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের মানসিকতার মধ্যে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার বিকাশ না হলে এর থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
ঢাকাটাইমস: সংবিধানে রাষ্ট্রের সব নাগরিককে সমানভাবে দেখার কথা বলা আছে। কিন্তু মন্ত্রী, সাংসদরা যেভাবে প্লট বরাদ্দসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
আন্দালিব পার্থ: প্রয়োজনীয়তা আর বিলাসিতা দুটি জিনিস আলাদা। কিছু কিছু মন্ত্রী, সাংসদ আছেন যারা এসবের জন্য তাকিয়ে থাকেন। এর থেকে কিন্তু তাদের মন্ত্রী, সাংসদ হওয়ার অভিপ্রায়টা প্রকাশ পায়। তবে অনেকে আছেন সুবিধা আছে বলেই এসব নেন। সরকার এখন সাংসদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার সুযোগ দিচ্ছে। এমন হতে পারত সরকার নিজেই গ্রামে যাওয়ার জন্য তাদের একটা করে গাড়ি দিতে পারত। যেটার মালিক সরকারই থাকত। আর থাকার জন্য ঢাকায় ফ্ল্যাট তো আছেই। এটার প্রয়োজন আছে অনেকের ক্ষেত্রে, যাদের ঢাকায় থাকার জায়গা নেই। তবে রাজউকের প্লট নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার লাইসেন্স নেন। এটা তো ঠিক নয়।
ঢাকাটাইমস: নবম সংসদের সদস্য ছিলেন। কিন্তু এখন সংসদের বাইরে। কেমন লাগছে?
আন্দালিব পার্থ: আমরা তো আমাদের কাজ করেই যাচ্ছি। এখন তো মিডিয়াও ফোরাম। এখানেও যেটা মনে করছি বলা উচিত, সেটা বলছি। কিন্তু সংসদ অবশ্যই একটা বড় জায়গা। এই সংসদে না যাওয়াতে আমার দুঃখ নেই। কারণ, এই সংসদকে মানুষ এমনিতেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না। যখন জাতীয় পার্টির কেউ সংসদে দাঁড়িয়ে কথা বলে এর চেয়ে আমি এখন যে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি এটা মানুষ গুরুত্বের সঙ্গে পড়বে। কারণ, মানুষ জানে এটা গৃহপালিত আঁতাতের একটা সংসদ। সেখানে জাতির ইচ্ছার প্রতিফলন এমনিই ঘটবে না। তাই এ সংসদে না যেতে পেরে আমার তেমন কোনো আক্ষেপ নেই। সংসদ একটা ফোরাম। যেখানে আপনি কথা বলতে পারেন।
ঢাকাটাইমস: বিএনপির সঙ্গে আপনার দলের রাজনৈতিক জোট। কিন্তু ওই দলের সাংসদরাও তো সংসদে অকথ্য ভাষায় বক্তৃতা দিয়েছেন। আপনি কী কখনো বিষয়টি তাদের নজরে এনেছেন?
আন্দালিব পার্থ: আসলে এখানে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে বলার কিছু নেই। আমি নাম নিয়ে বলব না। যখন কেউ সংসদে কথা বলে তখন সেটা অনেক কিছুকে নির্দেশ করে। তার চিন্তা-চেতনা সবকিছুরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আমার মরহুম বাবাকে নিয়েও সংসদে কথা হয়েছে। আমি কিন্তু তার জবাব দেইনি। কারণ, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা, অবস্থান ওসব কথার জবাব দেওয়াটাকে সমর্থন করে না।
ঢাকাটাইমস: সংসদে প্রায়ই বলতেন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ বা সাংসদের কাছ থেকে কিছু শিখতে এসেছিলেন। কিন্তু পারেননি কেন?
আন্দালিব পার্থ: এটা তো সত্যি কথা। অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ জীবনের শেষ দিকে এসে ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজেদের অর্জনকে ধ্বংস করে সেটার কবরের ওপর পা দিয়ে যেভাবে দলের নেতা-নেত্রীকে খুশি করতে বক্তৃতা-বিবৃতি দেন তা থেকে শেখার কি আছে। তারা যখন বুঝে গেছেন একটা ভালো নীতি দেওয়ার বদলে এসব বললে দলীয় প্রধান খুশি হন, তখন তারা তাই করছেন। আমাদের দুটি রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক এমন জায়গায় চলে গেছে যে, ঝগড়া-ঝাটি বা ব্যক্তিগত আক্রমণ ছাড়া শেখার কিছু নেই।
ঢাকাটাইমস: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আন্দালিব পার্থ: আপনাকেও ধন্যবাদ।