ঢাকা: তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে গত ২২ ও ২৩ এপ্রিল তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচিকে সফল বলা হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী এমনকি খোদ বিএনপিরই একটি অংশ বলেছেন, এই লংমার্চ সফল হয়েনি। এরই প্রেক্ষিতে লংমার্চ, জেলা কমিটির ভাঙ্গন, পরবর্তী আন্দোলন, নতুন কর্মসূচি, তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্ব ও বিদ্যুৎ সমস্যাসহ নানা বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমস টুয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে একান্তে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কিরণ সেখ।
ঢাকাটাইমস: বিএনপির লংমার্চের সফলতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি? লংমার্চে কেন্দ্রীয় অনেক নেতাকেই দেখা যায়নি, তাহলে কি অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল রয়েছে দলে নাকি সমন্বয়ের ঘাটতি ছিলো?
মাহবুবুর: দেশের প্রতিটি কোনা থেকে লংমার্চে জনগণ অংশ নিয়েছে। ফলে লংমার্চে আমাদের সফলতাই বেশি। দেশের ৫৪টির মধ্য ৫৩টি নদীতে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাঁধ দিয়েছে। যার ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি, ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত লংমার্চে লোক সমাগম কম হলেও তিস্তা অভিমুখি ডালিয়ার সমাবেশে লোক সমাগম দেখার মত ছিল। তবে জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক দুর্বলতায় কারণে ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত লোক সমাগম কম ছিল এবং সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল যা প্রতিটি বড় কর্মসূচিতেই হয়ে থাকে।
ঢাকাটাইমস: আমরা জেনেছি বিএনপির জেলা কমিটিগুলো ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। এর কারণ কি? পাশাপাশি আপনারা এখন ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের কথা বলছেন, সেই ইস্যুগুলো মূলত কি হবে?
মাহবুবুর: আমরা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের মধ্যে রয়েছি। তিস্তার পানি ন্যায্য হিস্যার দাবিতে আমরা লংমার্চ করেছি। সারাদেশের গুম ও অপহরণের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে।
ঢাকাটাইমস: শোনা যাচ্ছে আপনাদের পরবর্তী কর্মসূচি আসবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে। কর্মসূচি কবে নাগাদ ঘোষণা করা হবে? তিস্তা নিয়ে আপনাদের পরবর্তী কর্মসূচি আছে কি?
মাহবুবুর: রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার ফলে সুন্দরবনসহ আশেপাশের এলাকা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। আর সেই কারণে আমরা রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে লংমার্চ করবো। রামপালে লংমার্চ খুব শিগগির ঘোষণা করা হবে। এই বিষয়ে নিয়ে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।
ঢাকাটাইমস: হঠাৎ করেই বিএনপি আন্দোলনে ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে করে রাজনৈতিক বোদ্ধারা। আপনি কি মনে করেন?
মাহবুবুর: প্রতিটি আন্দোলনের পর্যায়, অধ্যায় ও ধাপ থাকে। আমরা সেই অনুয়ায়ী আন্দোলনের মধ্যে আছি। ফলে আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েছে কথাটা সত্য নয়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও অহিংস। জনগণকে সাথে নিয়েই আমরা আন্দোলনের পথে আছি। এই আন্দোলন আমাদের পরিকল্পনার একটি অংশ। তবে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের কারণে আমাদের আন্দোলনে কিছু দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
ঢাকাটাইমস: সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আপনাদের উপর নির্যাতন করছে বলে অভিযোগ করছে বিএনপি। তাহলে দলের পক্ষ থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছেন না কেন?
মাহবুবুর: সরকার বিরোধী দল নির্মূল করতে সারাদেশে গুম ও অপহরণের পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন ও হেনস্থা করছে। এই বিষয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছি এবং আইনের দরজায় নকও করেছি। কিন্তু আশানুরূপ কোনো সাড়া পাইনি।
ঢাকাটাইমস: তৃণমূলে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা কেন্দ্রকে দোষারোপ করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। দল পুনর্গঠনের কথা ছিল। কিন্তু কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আপনি কি বলবেন?
মাহবুবুর: তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জনগণের স্বৈরাচার বিরোধী মনোভাবের কথা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে বলেই গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করেনি। এক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় নেতারা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে শীর্ষ নেতাদের প্রতি তৃণমূলের ক্ষোভ থাকাটা স্বাভাবিক। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপির দুর্বলতা ছিল এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। এই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া দলের পূর্ণগঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সে প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগির প্রতিটি কমিটি নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানো হবে।
ঢাকাটাইমস: একইসাথে ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু এখানেও নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেন?
মাহবুবুর: কোনো নিস্ক্রিয়তা নেই। সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতা ছিল। সেটা আমরা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি এবং খুব শিগগির সেটা দূর হবে।
ঢাকাটাইমস: আপনারা সবসময় যুদ্ধাপরাধীর বিচারে স্বচ্ছতার কথা বলেছেন। বিচার বন্ধের কথা বলেন নি। তাহলে সরকার পরিবর্তন হলেও কি বিচার কাজ চলবে? জামায়াত আপনাদের জোটেই রয়েছে। আপনাদের মূল্যায়ন কি?
মাহবুবুর: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নীতিতে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এই বিচারের বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধী অপরাধ একটি জঘণ্যতম অপরাধ। তবে আমরা দাবি করেছি এই বিচার সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও ন্যায় হতে হবে। যাতে এই রায়ে কেউ আঙ্গুল তুলে কথা বলতে না পারে ও প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এবং বিচার যাতে উচ্চ ও আন্তর্জাতিক মানের হয়। জামায়ত ও বিএনপিকে এক করে দেখায় বিষয় নেই। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের ধারক ও বাহক। আমরা যে গণতান্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি জামায়াত সেই আন্দোলনের একটি অংশ এবং ১৯ দলীয় জোটের একটি শরীক দল। এর বাইরে আর কিছু নয়।
ঢাকাটাইমস: সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, সুশীল সমাজ কুইক রেন্টাল বন্ধের কথাও বলেছে, আপনারা কি এই প্রস্তাবে সমর্থন দিবেন? বিদ্যুৎ নিয়ে আপনাদের কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে?
মাহবুবুর: সরকার কুইক রেন্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। বিএনপি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিপক্ষে এবং খুব শিগগির বিদ্যুৎতের দামা বাড়ানোর প্রতিবাদে কর্মসূচি দেবে। কুইক রেন্টালের নামে সরকারের মন্ত্রী-এমপি যে টাকা লুট করেছে আমরা ক্ষমতায় এসে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করবো।
ঢাকাটাইমস: আগামীতে আপনাদের আন্দোলন কেমন হবে? কি কর্মসূচি আসছে?
মাহবুবুর: আমরা প্রতিটি সমস্যার সমাধান শান্তিপূর্ণভাবে চাই। নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নয়। আগামী দিনে আমরা যে কর্মসূচি দেবো সেটাও হবে শান্তিপূর্ণ।আগামী দিনে রামপালে লংমার্চ, অনশন, হরতাল, অবরোধ, সমাবেশ ও সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হবে।