logo ২০ এপ্রিল ২০২৫
প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাব
০৮ জুন, ২০১৪ ১৩:২৮:০৫
image


বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১৯৯৯ সালে কার্যক্রম শুরু করে। তৃতীয় প্রজন্মের এ ব্যাংকটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এম আমানউল্লাহ। তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের অন্যতম উদ্যোক্তাও। দেশের বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আমান গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। দৈনিক আমাদের সময়-এর স্বত্বাধিকারী ও নতুন ভিশন লিমিটেডের অন্যতম পরিচালক। এছাড়া আমান স্পিনিং মিলস, অ্যারিনা এইচ আর আই, অ্যারিনা সিকিউরিটিজ, অ্যারিনা কনজুমার প্রোডাক্টস এবং মৌসুমী এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মকা-ের সঙ্গেও জড়িত। তিনি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি এবং ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সার্বিক বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী

কার্যক্রম শুরুর দিন থেকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সঙ্গে আছেন, আপনার অভিজ্ঞতা বলুন।

১৯৯৯ সালের ২ জুন ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। মরহুম আবদুল জলিলের নেতৃত্বে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংকটি উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই  ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত আছি। শুরু থেকে আমি ছিলাম ব্যাংকের পরিচালক। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি। দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হওয়ার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। ব্যাংকটি ১৫ বছর পার করতে যাচ্ছে। এ সময়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কিংবা কোনো পরিচালকের সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়নি।

গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিতে ব্যাংকের নতুন কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?

মার্কেন্টাইল ব্যাংক সবসময়ই নতুন পরিকল্পনার আলোকে গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, পেপারলেস ব্যাংকিং, গ্রিন ব্যাংকিং, এনআরবি ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম কার্ড, এসএমএস ও এসএমই ব্যাংকিং, ব্রোকারেজ হাউসসহ নানা ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা দিয়ে আসছে। এর বাইরেও যখন যে সুবিধা দেওয়ার সুযোগ আসবে ব্যাংকে তা চালু করা হবে। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আর এক বছর পরই দেড় যুগ পার করবে ব্যাংকটি। এ নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

সময় ও গ্রাহকের চাহিদার আলোকে যখন যে সেবা প্রয়োজন ব্যাংক তা চালু করবে। এ জন্য দেড় যুগপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে মার্কেন্টাইল ব্যাংক সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।  

ব্যাংকের ঋণ ও আমানত প্রবৃদ্ধি কেমন? এখন যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে পরিচালনা পর্ষদ সন্তুষ্ট কি না?

ঋণ আমানত অনুপাতও ভালো অবস্থানে রয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্ষদ সন্তুষ্ট। কারণ ২০১৩ সালে বিরোধী দলের হরতাল, অবরোধ ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে অনেক ব্যাংক ভালো করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের ব্যাংকটি ভালো ব্যবসা করেছে। গত বছর ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ট দেওয়া হয়েছে। এ বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে আমরা ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ট দেব। যেটা আগামী ১২ জুন বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রকাশ করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপকদের দায়-দায়িত্ব আলাদাভাবে বণ্টন করে দিয়েছে। আপনাদের ব্যাংক সে অনুযায়ী পরিচালিত হয় কি?

মার্কেন্টাইল ব্যাংক সবসময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ব্যাংকিং করছে। এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য নিজের কাজের বাইরে গিয়ে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর যেমন হস্তক্ষেপ করে না, আবার প্রয়োজনীয় দায়িত্বে অবহেলাও করে না। এ কারণে পর্ষদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কখনো সমস্যা দেখা দেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক নতুনভাবে নয়টি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। এতে কি আপনাদের ব্যাংকের ওপর কোনো প্রভাব পড়েছে?

সমস্যা হওয়ার কথা ছিল আমানত সংগ্রহে। কিন্তু আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ দক্ষ ব্যবস্থাপনায় আমরা সেটাকে সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি। তবে অনেক সময় লোক চলে যায় আবার আসে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। কোনো জায়গায় যদি কোনো সমস্যা থাকে সেখানে আমরা লোক নিয়ে নেই। আমাদের ব্যাংকের ওপর এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এর পেছনে আরেকটি বিশেষ কারণ হচ্ছে আমাদের টিম ওয়ার্ক। টিম ওয়ার্ক এতটাই ভালো যে, কোনো  সমস্যা হলে সেটাকে খুব অল্প সময়ই সামাল দেওয়া যায়।

ব্যাংকিং খাতকে আরও আকর্ষণীয় এবং ব্যবসা বান্ধব করতে আপনার পরামর্শ কী?

ব্যাংকিং খাতকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও লাভজনক করতে হলে দক্ষ ব্যবস্থাপনা যেমন দরকার, তেমনি পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিও ভালো থাকা দরকার। বিশেষ করে মালিক পক্ষ এবং রাজনৈতিক কোনো চাপ যদি ব্যবস্থাপনার ওপর না থাকে তাহলে ব্যাংকিং খাতের চেয়ে এত বেশি লাভজনক ব্যবসা আর নেই। কারণ তখন দেখেশুনে লোন দেওয়া যায়। আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে শিল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদের হার কমাতে হবে। আমাদের দেশে এই ঋণের সুদের হার এত বেশি যেটা বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই। তাই আমি আশা করব সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়টিতে বিশেষ নজর দেবে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সিএসআর কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলুন?

ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয়ের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশন করা হয়েছে। যেখানে প্রতি বছরের মুনাফার আড়াই শতাংশ আমরা আলাদা করে রাখি। এ বছর রানা প্লাজায় দুই কোটি টাকা দিয়েছি। সিডরে আক্রান্তদের এক কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চারটি পরিবারের ১২ বছরের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। শীতের সময় শীতবস্ত্র দেওয়া হয়। এছাড়া ওই ফাউন্ডেশনের আওতায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি চালু করা হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থীর শিক্ষা চালিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য তাদের জন্য এক লাখ টাকা বৃত্তি দেওয়া হয়। যে টাকা ওই শিক্ষার্থীর নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে রাখা হয়। সেখান থেকে যে সুদ আসে প্রতি মাসে তাকে তা দেওয়া হয়। শিক্ষাজীবন শেষে আবার এই অর্থ তাকে দিয়ে দেওয়া হয়। সিএসআরের আওতায় লেবার ফাউন্ডেশনকে ২০ লাখ, কিডনি ফাউন্ডেশনকে ৫০ লাখ, বারডেম হাসপাতালে একটি রুম, পিজি হাসপাতালে একটি গাড়ি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি গাড়ি, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী হাসপাতালের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডায়বেটিক সমিতি এবং যেসব দরিদ্র ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে পারছে না এমন অসংখ্য লোককে প্রতিনিয়ত ব্যাংকের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হচ্ছে।

আগামী ১০ বছর পর মার্কেন্টাইল ব্যাংকটিকে কোন পর্যায়ে দেখতে চান?

আগামী ১০ বছর পর মার্কেন্টাইল ব্যাংককে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের নামিদামি ব্যাংকের মধ্যে এটি জায়গা করে নেবে। আমরা আধুনিক সব ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংকটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষের ভালোবাসা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।