সেলিনা হায়াৎ আইভী। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র। আওয়ামীপরিবারের সন্তান। সম্প্রতি ঢাকাটাইমসের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতি, ওসমান পরিবারের সঙ্গে বিরোধসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
সেদিন একাত্তর টিভির টক শোতে অনএয়ারের বাইরে কী ঘটেছিল?
অনএয়ারের বাইরে কী হয়েছিল, তা ইউটিউবের মাধ্যমে অনেকেই দেখেছেন। তবে এর বাইরেও কিছু ঘটনা আছে। কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে অব দ্য রেকর্ডের যেসব কথাবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে তা মোটেও নৈতিক হয়নি। এর পেছনে উদ্দেশ্য আছে।
কী ধরনের উদ্দেশ্য থাকতে পারে?
যে বা যারাই করুক তারা বিষয়টিকে অনেক দূর টেনে নিয়ে যেতে চাইছে।
ইউটিউবের প্রকাশিত অংশের বাইরে কী ঘটেছিল?
ওই রকম আহামরি কিছু হয়নি। যেটুকু ইউটিউবে দেখেছেন সে রকমই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। কথার পিঠে কথা নিয়ে সব হয়েছে।
ওই দিন শামীম ওসমান বলেছেন তিনি জানতেন না আপনি টক শোতে যাবেন।
আগের দিন ১২ আগস্ট টক শোতে শামীম ওসমানই তো বলেছেন, ‘নিয়ে আসেন আইভীকে।’ তিনি তো আমার মুখোমুখি হতে চেয়েছিলেন। তিনি যদি না-ই জানতেন তবে আমার বিরুদ্ধে দেখানোর জন্য কাগজপত্র নিয়ে গেলেন কীভাবে? মূলত আমিই রাজি ছিলাম না সেখানে যেতে।
রাজি ছিলেন না কেন?
বুঝতে পেরেছিলাম শামীম ওসমান এলে একটা ঝামেলার সৃষ্টি হবে। সেখানে কিছুতেই যেতে চাইনি। কিন্তু আমাকে একাত্তর টিভি থেকে একাধিকবার ফোন করা হয়। শেষে ওই দিন (১৩ আগস্ট) বিকেলে আমি রাজি হই।
আপনি সাত খুনের মামলার অন্যতম আসামি নূর হোসেনকে বিনা টেন্ডারে ট্রাকস্ট্যান্ডের কাজ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শামীম ওসমান।
আমি তো সেদিন প্রমাণপত্র দেখিয়েছি। সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা থাকা অবস্থায় এই টেন্ডার হয়েছে। তিনি (শামীম) তো কাগজ দেখেও বিশ্বাস করতে চাইলেন না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর?
সিদ্ধিরগঞ্জ যখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হল তখনও টেন্ডারের মাধ্যমে তা দেওয়া হয়েছে। কারণ, টেন্ডার ছাড়া বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ড বা অন্য কোনো কাজ কাউকে দেওয়া যায় না। এটা স্থানীয় সরকারের নিয়মেই আছে। সরকার এখান থেকে ২০ শতাংশ টাকাও নিচ্ছে। এখানে আমার কি সাধ্য আছে আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করার?
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে এ পর্যন্ত কত টাকার টেন্ডার হয়েছে?
১৩ আগস্ট পর্যন্ত ২৫৩ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু শামীম ওসমান বলছেন, ৪০০ কোটি টাকার টেন্ডার নূর হোসেনকে দিয়ে দিয়েছি। আমি তো কোনো টেন্ডার দিতে পারি না। কারণ, আমি টেন্ডার কমিটির সভাপতিই নই। আর সভাপতিও তো কোনো কাজ দিতে পারে না। সরকারের আইন আছে।
তাহলে শামীম কেন এসব অভিযোগ করছেন?
নারায়ণগঞ্জের এলজিইডি, জেলা পরিষদ, ডেজার, ডেসা, ওয়াসা, পিডাব্লিউডি, ইপিজেডসহ সরকারি-বেসরকারি যত সংস্থা আছে সবগুলোই তার (শামীম ওসমানের) নিয়ন্ত্রণে। সিদ্ধিরগঞ্জের বালুমহাল থেকে বিসিকের ঝুট ব্যবসা, সব তার লোকজন লুটেপুটে খাচ্ছে। তার আঙুলের ইশারায় ওই সব জায়গায় কেউ টেন্ডার ফেলতে পারে না। সবই তার লোকজন করে। একমাত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন তিনি দখল করতে পারেননি।
আপনি বলতে চাইছেন সিটি করপোরেশনের টেন্ডারে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়নি?
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং সাবেক পৌরসভা মিলিয়ে আমার ১১ বছর চলছে। সারা দেশে কী হয় জানি না, কিন্তু আমার এখানে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রক্ষা করা হয়। দেশের বড় বড় অডিট প্রতিষ্ঠান চাইলে এটা যাচাই করে দেখতে পারে। ভুল হতে পারে। কিন্তু আমি ইচ্ছাকৃত ভুল করেছি এটা যদি প্রমাণিত হয়, তবে প্রচলিত আইনে যেই শাস্তি আছে তা আমি পাব।
শামীম ওসমান তো বলছেন আপনার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ আছে।
যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে তবে তিনি দুদকে যেতে পারেন। অথবা কোথায় দুর্নীতি করেছি তা দেখাতে পারেন। এভাবে কাগজ নিয়ে গিয়ে টিভিতে দূর থেকে দেখানো রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
এসব বলে বেড়ানোতে আপনার ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে না?
একটা মিথ্যা ১০ দিন বললে কারো না কারো মনে এ নিয়ে প্রশ্ন জাগবে। তিনি সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করেছেন।
কেন তিনি (শামীম) এটা করছেন?
তিনি কোনো অবস্থাতেই চাচ্ছেন আমি রাজনীতি করি। আমাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এটা তার কৌশল। দুর্নীতির কথা বলে ব্যক্তিগতভাবে আমার চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এটা কেন মনে হলো?
আগে বলতেন আমার সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির আঁতাত আছে। এসব বলে তিনি চাচ্ছেন হয় আমি দল ত্যাগ করি, না হয় দেশ ছেড়ে চলে যাই। এই কৌশল নিয়ে তিনি অন্যদের বেলায় সফল হয়েছেন।
তারা কারা?
এস এম আকরাম সাহেব যখন সংসদ সদস্য ছিলেন, তখন তাকে এমনই বিরক্ত করেছে যে, তিনি কখনো কোথাও গিয়ে দাঁড়াতে পারেননি। তার নির্বাচনী এলাকায় কাজ করতে পারেনি। তাকে বাধ্য করা হয়েছে দল থেকে চলে যেতে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন সাহেব। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। শামীম ওসমানের অত্যাচারে তিনি বাধ্য হয়েছেন দল ছেড়ে অন্য দলে যেতে। নাজমা রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচন করেছিলেন। তিনি দলের লড়াকু সৈনিক। তার সাংগঠনিক শক্তি যেমনটা ছিল, আমাদের অনেকেরই সে রকমটা নেই। তাকে শামীম ওসমান নাজেহাল করে ছেড়েছেন। বাধ্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে। শেষে রাজনীতি থেকেই তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। কামাল উদ্দিন মৃধা নামে একজন ত্যাগী নেতা ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগ সেখান থেকে আওয়ামী লীগে এসেছিলেন। তাকে দল থেকেই বের করা হয়নি, তার বিরুদ্ধে এত বেশি মামলা দেওয়া হয়েছে যে, তিনি বাধ্য হয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। পরে শামীম ওসমানের মার খেয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে শামীম ওসমানের শক্ত অবস্থান আছে...
আজকে তিনি বলেন সব আওয়ামী লীগ নেতা তার সঙ্গে। যাদের নিয়ে বড় বড় কথা বলেন সবার নামেই তিনি মামলা দিয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীদের তিনি সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছেন।
তিনি কেন এসব করেছেন বলে মনে হয়।
তিনি চান সবাই তার পায়ের নিচে যাক। যারাই দ্বিমত করবে তারাই জামায়াত-বিএনপি হয়ে যাবে। মামলা-হামলা করে তাকে হয়রানি করা হবে। যেন মানুষ বাধ্য হয় দল ত্যাগ করতে, না হয় দেশ ত্যাগ করতে। এখন তার মূল উদ্দেশ্য আমাকে কীভাবে আওয়ামী লীগ থেকে বের করা যায়।
আপনাকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য কী?
আমি ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেলে তিনি নারায়ণগঞ্জে একক রাজত্ব করতে পারবেন। উনি নিজেকে রাজা মনে করেন। আর আমাদের ভাবেন প্রজা। প্রজারা যেভাবে রাজাদের কুর্নিশ করে, উনিও চান আমরা তাকে সেভাবে কুর্নিশ করি। কিন্তু আমি আইভী এই কাজ করব না।
শামীম ওসমান বলছেন তার সঙ্গে আপনার পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিরোধ আছে।
তার পথ আলাদা, আমার পথ আলাদা। তার সঙ্গে আমার পারিবারিক কোনো বিরোধ নেই। উনি আওয়ামী লীগ করে, আমিও তাই। এখানে রাজনৈতিক বিরোধ থাকার প্রশ্নই আসে না। দলের কোনো পদ-পদবি নিয়ে তার সঙ্গে আমার এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিযোগিতা হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না।
তাহলে বিরোধটা কোথায়?
বিরোধটা আদর্শগত। শামীম ওসমানের পরিবার ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে শোষণ করছে। পুরো নারায়ণগঞ্জের মানুষকে তারা জিম্মি বানিয়ে রাখছে। সেটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টিই হোক। তারা চায় সবাই তাদের কাছে নতি স্বীকার করুক। আমি এটা ভেঙেছি।
কীভাবে ভাঙলেন?
নারায়ণগঞ্জে যত খুন হয়েছে আমি সেই খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এবং মানুষের জায়গা-জমি অন্যায়ভাবে দখলের প্রতিবাদ করেছি। মূলত ওনাদের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্বটা এখানেই।
ওসমান পরিবারের বর্তমান অবস্থানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ওসমানদের বাঘ মনে করা হতো। এখন আর সেই বাঘের ভয় নেই। কেউ তাদের ভয় করে না। এ জন্য তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যাকে খুশি তাকে নোংরা কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছেন।
শামীম ওসমানের কারণে কি আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষণœ হচ্ছে?
অবশ্যই। দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি যা করছেন তাতে দল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আপনিও কি বিতর্কে জড়িয়ে দলের ক্ষতি করছেন না?
কখনো গায়ে পড়ে আমি বিতর্কে জড়াইনি। ত্বকী, আশিক, চঞ্চল ও মিঠু হত্যার প্রতিবাদ করেছি। এতে বিতর্কের কিছু নেই।
আপনি শামীম ওসমানকে গডফাদার বলেন কেন?
ওনাকে আমি গডফাদার বলিনি। ১৯৮৮ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরে কামাল ও কালাম নামে দুই ব্যক্তি একসঙ্গে খুন হয়েছিলেন। তখন দৈনিক বাংলা পত্রিকায় লেখা হয়েছিল ‘নারায়ণগঞ্জের ইমদু গ্রেপ্তার’। শামীম ওসমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই সংবাদ ছাপা হয়েছিল। এরপর ২০০১ সালে তার কর্মকা- তুলে ধরে পত্রপত্রিকাগুলো তাকে গডফাদার উপাধি দিয়েছে। তাকে নতুন করে কেউ এ কথা বলে না।
১৯৮৮ সালে আপনি কোথায় ছিলেন?
ওই সময় আমি দেশে ছিলাম না। ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট শামীম ওসমানের অনুষ্ঠানে গোলাগুলিতে যুবলীগকর্মী আলম মারা গেছে। এর চার দিন পর সোহেল নামে আরেক কর্মীকে মেরে ফেলা হয়েছে। এভাবে মেরে ফেলার সংস্কৃতি তো নতুন কিছু নয়। এটা তো বহুদিনের।
শামীম ওসমান তো বলেন তার হাতকে দুর্বল করতে কর্মীদের খুন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক কর্মীকে নিজের হাতে দাফন করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এসব কর্মীকে খারাপ বানিয়েছে কে? তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে কে? তাদের দিয়ে এই শহরে হেন কোনো কাজ নেই, করিয়েছে কে? এই তথাকথিত গদফাদারই এসব করিয়েছে।
সাত খুনের ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়াকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সাত খুন নিয়ে কোনো কথাই বলতে চাই না। কারণ, এটা বিচারধীন অবস্থায় আছে। তবে এটুকু বলতে চাই, বুঝলাম র্যাব ঘটনাটি ঘটিয়েছে, কিন্তু র্যাবের পেছনে কারা ছিল? বিচার বিভাগই এটা খুঁজে বের করবে। কোনো একসময় হয়তো আমরা আসল তথ্য জানব।
ত্বকী হত্যার বিচারের অগ্রগতি কতটুকু?
পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি, আজমেরী ওসমানের সহযোগিতায় ত্বকী হত্যার সঙ্গে ১১ জন জড়িত। র্যাব একটা অভিযোগপত্রও আদালতে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন দেরি হচ্ছে। সাত খুনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে।
তাহলে কি ত্বকী হত্যার বিচারকে ধামাচাপা দিতেই সাত খুন?
বিচারাধীন বিষয়ে এর চেয়ে বেশি ব্যাখ্যা দেওয়া ঠিক হবে না। সাত খুনের ঘটনার বিচার এখন সামনে চলে এসেছে। তাই বলে ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন থেমে নেই।
শামীম ওসমানের সঙ্গে আপনার পারিবারিক সম্পর্ক কী?
পারিবারিক কোনো সম্পর্ক নেই। তার বাবা শামসুদ্দোহার সঙ্গে আমার বাবা আলী আহাম্মদের সম্পর্ক ছিল। দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। অবশ্য স্থানীয়ভাবে কিছুটা গ্রুপিং ছিল। তবে একে অন্যের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল।
তাহলে তো বোঝা যাচ্ছে রাজনৈতিকভাবে দুই পরিবারের সম্পর্ক মন্দ ছিল না।
দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কটা খুবই ভালো ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময় থেকে শামীম ওসমান সম্পর্কটা অবনতির দিকে নিয়ে যান। ২০০৮ সালে দেশে ফেরার পরও বিভিন্ন ভাবে আমার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেন।
আপনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। দলে থেকেই গডফাদারদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। এই লড়াইয়ের সুরাহা হবে বলে কি মনে করেন?
সুরাহা তো যেকোনো সময় হতে পারে। এ পর্যন্ত যত অপকর্ম করেছেন এর জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে তাকে (শামীম) ক্ষমা চাইতে হবে। খুন-খারাবি যা হচ্ছে সব বন্ধ করতে হবে। টেন্ডারবাজি, ঝুট ব্যবসা, বালুমহালসহ সব কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া বন্ধ করুক। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হলে এই শহরের মানুষ তার বিরুদ্ধে কথা বলবে না। সব কিছু বন্ধ করলে তো আমরা শান্তিতে থাকতে পারি।
শামীম ওসমান বলেছেন, আপনি এক-এগারোর এজেন্ট। এটা দিয়ে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
এক-এগারোর সময় তো শামীম ওসমান নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যে লোক পালিয়ে যায়, এক-এগারোকে মোকাবিলা করতে পারেনি তার মুখে এ কথা সাজে না।
ওই সময় দলের জন্য আপনার ভূমিকা কী ছিল?
ওই সময় নেত্রীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আমার ছোট ভাই শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল ১৪৪ ধারা ভেঙে নারায়ণগঞ্জে মিছিল করেছে। অথচ ওই দিন তার নিজের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল। এই উজ্জ্বলকেই ক্যাঙ্গারু পারভেজ গুমের ঘটনার আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা তো এই শহরে থেকে মোকাবিলা করেছি। মিছিল, মিটিং করেছি। আর তিনি পালিয়েছেন।
আপনি প্রকৃত গডফাদারদের বাঁচাতে চাইছেন বলে অভিযোগ করেছেন শামীম ওসমান।
এই গডফাদার কারা এটা তিনি (শামীম) বলতে পারবেন। তবে আমি যাকে বোঝাতে চেয়েছি তার নাম ধরেই তো বলেছি। কাউকে বাঁচাতে চাইলে আমি বলতাম না, খুনি আমার সন্তান হলেও তাকে ধরা হোক।
তদন্ত কমিটিতে আপনাকে ডাকা হয়েছিল কেন?
নিহত নজরুল ইসলাম এবং মামলার আসামি নূর হোসেন, দুজনই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর। যে কারণে তদন্ত কমিটি আমাকে তাদের বিষয়ে জানার জন্য ডেকেছিল।
কী ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছিল?
মেয়র হওয়ার পর গত আড়াই বছরে তাদের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক ছিল। তারা কেমন ছিলেন, এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে।
তদন্ত কমিটির কাছে কি আপনি ‘গডফাদার’ সম্পর্কে কিছু বলেছেন?
না, তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলার সময় এসব বিষয় আসেনি।
ক্যাঙ্গারু পারভেজ গুমের ঘটনায় মামলা হয়েছে আপনার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে...
মামলার আসামিদের পাঁচজনই আওয়ামী লীগের। অন্য দুজন বিএনপির। মামলার দুই নম্বর আসামি শওকত হাশেম শকু সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর। মামলার এজাহারে শামীম ওসমান লিখেছেন শকু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ইসমতের ছোট ভাই। আরেকজন হচ্ছেন তপন। যিনি পরিবহন নেতা। যাকে পরিবহন খাতের চাঁদাবাজ বলা হয়েছে। এই দুজনের বিরুদ্ধে এখন আর তিনি (শামীম) কথা বলেন না।
কেন বলেন না?
কারণ, শকু গত ২৬ জুনের উপনির্বাচনে লাঙ্গলের (সেলিম ওসমানের) হয়ে কাজ করেছেন। সমঝোতা হয়েছে তার বিরুদ্ধে সব মামলা-মোকাদ্দমা তুলে দেওয়া হবে। তপনের নাম তিনি বলেন না, কারণ, পরিবহন সেক্টর এখন শামীম ওসমানের দখলে।
আপনার পরিবারের সদস্যদের কেন এই মামলায় জড়ানো হলো?
যাতে আমি ত্বকী হত্যা নিয়ে কথা না বলি।
পারভেজকে কারা গুম বা খুন করতে পারে বলে মনে করছেন?
অতীতে শামীম ওসমানের কর্মকা- পর্যালোচনা করে মনে হয়, পারভেজকে তিনিই গুম ও খুন করিয়ে আমাদের নামে মামলা দিয়েছেন। যাতে আমরা ত্বকী, চঞ্চল, মিঠু হত্যার বিচার দাবি না করি।
নারায়ণগঞ্জে কোনো খুন হলে আওয়ামী লীগের মধ্যেই একটি পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করছে। কিন্তু প্রকৃত খুনি কে বা কারা তা জানা যাচ্ছে না।
এখানে দোষারোপ নয়, জনগণের মতামতই সামনে আসছে। তবে কাউকে অভিযুক্ত করা হলে অবশ্যই দেখতে হবে, সেই যোগ্যতা বা ক্ষমতা তার আছে কি না।
কোনো হত্যার বিচার কি দেখেছে নারায়ণগঞ্জবাসী?
বিচার যে হচ্ছে না, তা নয়। বলতে পারেন আরো কঠোরভাবে বিচার হলে হয়তো এই প্রবণতা কমে আসত। কিন্তু সব হত্যাই তো আর রাজনৈতিক নয়। গডফাদাররাই সব করছে তাও ঠিক না। নিজেদের মধ্য দ্বন্দ্বের কারণেও অনেক খুন হচ্ছে। তবে এসব বন্ধ হওয়া দরকার।
(ঢাকাটাইমস/ ২৩ আগস্ট /এইচএফ/এআর/ ঘ.)