logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
বিএনপি একটি কোমরভাঙ্গা দল : নূহ-উল-আলম লেনিন
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ১৭:৩৫:০০
image

ছাত্র জীবন থেকেই বামপন্থী রাজনীতি করেছেন। তবে এখন তার পরিচয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে। দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যও তিনি। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে তিনি নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। বিএনপির আন্দোলনের হুমকি, সরকারের নানা কর্মকান্ড, ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক অবস্থা আর নানা সমালোচনার জবাব দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানিম আহমেদ।


 


তানিম আহমেদ : বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল রোজার ঈদের পরপরই আন্দোলনে যাবে...


নূহ-উল-আলম লেনিন : অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিএনপি এর কর্মীদের নানা কথা বলে উদ্দীপ্ত করতে চাইছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রতিহত করার কর্মসূচি দিয়েও তারা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এর নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তাই কর্মীদের চাঙ্গা রাখার জন্য আন্দোলনের কথা বলছে তারা। তবে হুংকার দিলেও কিছু করতে পারবে না তারা। বিএনপি একটি কোমরভাঙ্গা দল। এ দল দিয়ে আর যাই হোক আন্দোলন হবে না।


তানিম : কেন হবে না? বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন আর বর্তমান সরকারের আমলে বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে তো সমালোচনা আছে...


লেনিন : আন্দোলনের নিজস্ব গতিশীলতা আছে। জনগণ কোন একটি ইস্যুতে সরকারের উপর ক্ষিপ্ত হতে পারে। কিন্তু তেমন কোনও পরিস্থিতি কি আছে? তাছাড়া বিএনপি জামায়াতের সাথে আঁতাত করে দেশব্যাপী অরাজকতা, সন্ত্রাস করেও নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি। তাদের কথায় জনগণ আন্দোলনে নেমে যাবে? বিএনপি এমনটি ভাবলে সেটা হবে বোকার স্বর্গে বসবাস।


তানিম : আন্দোলনের হুমকির কারণে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন কি?


লেনিন : বিএনপি যদি প্রকৃত গণতান্ত্রিক দল হতো তবে তারা জনগণের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করতো। কিন্তু তারা জনগণের সমস্যা সমাধানে কথা বলে না। তারা আন্দোলন করে সরকার উৎখাতের জন্য। কিন্তু তাতে মানুষ সাড়া দেয় না। সাড়া পায় না বলেই তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। এবারও হয়তো তা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।


তানিম : কী পন্থায় মোকাবেলা করবে সরকার?


লেনিন : আবার যদি বিএনপি সহিংসতা করার দুঃসাহাস দেখায় তাহলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। সরকারের সেই প্রস্তুতি আছে। জনগণকে বিএনপির এমন ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি সর্ম্পকে সচেতন করবে আওয়ামী লীগ।


তানিম : বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা আছে কী?


লেনিন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাইতো তাদেরকে আলোচনায় বসার আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি নেত্রী ‘কিসের সংলাপ’ বলে উল্টো আলটিমেটাম দিলেন। যিনি সংলাপের জবাবে আল্টিমেটাম দেন এবং শোক দিবসে ভুয়া জন্মদিন করতে কেক কাটেন তার সাথে কীসের সংলাপ করবো আমরা? তা ছাড়া এখন সংলাপের বিষয়বস্তুই বা কী হবে। নির্বাচন তো হয়ে গেছে।


গণতন্ত্রে তো বলা নাই যে একটি নির্দিষ্ট দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন বৈধ হবে না। নির্বাচন হয়ে গেছে আর ভোটের আগে সরকার বেশ কিছু অঙ্গীকার করেছিলো জনগণের কাছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হবে আর তার পরেই না নির্বাচন! এখন কী নিয়ে সংলাপ হবে? সংলাপ যদি করতে হয় তাহলে তা হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। সে নির্বাচনের সময় আসুক, তখন দেখা যাবে।


তানিম : মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি?


লেনিন : জনগণ ভালো আছে। এখন দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো পরিস্থিতি এবং সম্ভাবনা নেই।


তানিম : সরকারের সাথে জায়ামাতের গোপন আঁতাতের কথা বলা হচ্ছে, এটা কতটুকু সত্য?


লেনিন : জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আঁতাতের কী আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে লড়াই হয়েছে। যাদেরকে বাংলাদেশের মূল শত্রু মনে করে আওয়ামী লীগ, তাদের সঙ্গে আঁতাতের কী আছে? তাছাড়া জামায়াত-নেতাদের বিচার করছে সরকার। এই অবস্থায় সরকার কেন তাদের কাছে যাবে, তাদেরই তো এতে মাথা নত করার কথা।


অপেক্ষা করুন, দেখুন কয়জনের প্রাণ যায়। এরই মধ্যে এক নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এই রায় কার্যকরের আগেও অনেক কথা ছড়িয়েছিলো। কিন্তু সব মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অতীতের রাজনৈতিক নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কারণে মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে। সেজন্য সামান্য ঘটনাতেই মানুষের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় তৈরি হয়।


তানিম : তাহলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বিলম্ব হচ্ছে কেন?


লেনিন : সেটার জবাব দেবে ট্রাইব্যুনাল। কারণ সেটা সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন একটি সংস্থা।


তানিম : জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে না কেন?


লেনিন : অনেক জেলায় সম্মেলন হচ্ছে না সেটা ঠিক। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে সম্মেলন হওয়া উচিৎ। আমাদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন নির্ধারিত সময়েই হচ্ছে। কিন্তু জেলা নেতাদের দুর্বলতার কারণে সম্মেলন হচ্ছে না। আমরা সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। সেপ্টেম্বরের পর থেকে শুরু হয়ে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের জেলা সম্মেলন শেষ করা হবে।


তানিম : অনেকে বলছেন দলের সাংগঠনিক বিপর্যয়ের কারণে নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে...


লেনিন : পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান থাকলে দল কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনগণ এবং কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। এটা অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে এগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছি কি না? তবে আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ দলের নানান দিক বিবেচনা করতে হয়। নানা সমস্যা দেখতে হয়।


তানিম : নারায়ণগঞ্জে শামীম-আইভী দ্বন্দ্বে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন কি?


লেনিন : নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ে জটিলতা আছে। দুইজনের মধ্যে বিরোধ আছে। দুইজনই তাদের সমম্যা জনগণের সামনে নিয়ে এসেছে। আর তাতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর সেটা স্বীকার করেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। দুইজনই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত। আমি আশা করি তিনি হস্তক্ষেপ করে সমস্যার সমাধান করবেন।


তানিম : কোনও রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে এর সাংগঠনিক কর্মকান্ড গতি হারায় বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে বলে বলা হচ্ছে...


লেনিন : এটা অংশত সত্য। তবে এর কারণও আছে। যখন কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তার মূল নেতৃত্ব রাষ্ট্রপরিচালনার কাজে নিয়োজিত থাকেন। ফলে তারা দৈনন্দিন দল পরিচালনার সময় পান না। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়।


আমাদের দল সভাপতিকেন্দ্রিক দল। তার নির্দেশে দল এবং সরকার, দুটোই চলে। রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি দল পরিচালনা করা অনেক কষ্টসাধ্য। এছাড়াও শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই মন্ত্রীসভায় আছেন। তারা যখন মন্ত্রী ছিলেন না তখন দলকে সময় দিতেন। এখন সেটা পারছেন না। এজন্যই দল ক্ষমতায় থাকলে সাংগঠনিক কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হয়।


তানিম : শোক দিবসে দলের নাম ভাঙিয়ে অনেকেই চাঁদাবাজি করেছে?


লেনিন : এ বিষয়ে আমাদের সাধারণ সম্পাদক যা বলেছেন, তার ওপর কিছু বলার নাই। কিছু কিছু ভুইফোঁড় সংগঠন নানা সুযোগ নেয়। সেটা নিন্দনীয়। এটা প্রতারণা এবং আমাদের দল তা ঠেকানোর চেষ্টা করছে। প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


তানিম : ছাত্রলীগের সহিংসতার কারণে বারবার সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু দল কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না...


লেনিন : ছাত্রলীগ আমাদের কোনও সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন নয়। এটা ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন। তাই ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের দায়ভার আওয়ামী লীগের ওপর বর্তায় না। তবে এটাও সত্য যে, জনগণ এ কথা বললেই মানবে না। কারণ তারাও বঙ্গবন্ধুর অনুসারি।


আমরা কিছু ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছি। আবার কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীরা এসব সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিতও করা হয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, বিশৃঙ্খলা করলে ছাড় দেওয়া হবে না।


তানিম : অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে তো তাহলে ছাত্রলীগের সতর্ক থাকা উচিত...


লেনিন : ক্ষমতাসীন দলে অনুপ্রবেশ ঘটবে এটা স্বাভাবিক। এরা সরকারি দলে থেকে নানা সুযোগ সুবিধা খোঁজে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে এরা সে দলে ঢুকে পড়ে। আমরাই জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে তাদেরকে জায়গা দেই। অনেক সময় মনে করি সে যে দল ত্যাগ করে এসেছে সে আদর্শও ছেড়ে দিয়েছে।


কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা সত্য হয়নি। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দল এবং সহযোগী আর ভাতৃপ্রতীম সংগঠনকে সর্তক করা হচ্ছে। এর সুফলও মিলেছে। জামায়াতের নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার যে প্রবণতা ছিল তা বন্ধ হয়ে গেছে।


তানিম : আওয়ামী লীগে বাম নেতাদের আধিপত্য বাড়ার অভিযোগ আছে। এ কারণে ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আপনাকে নিয়েও একই ধরনের কথা বলা হয়...


লেনিন : আমার মনে হয় এই অভিযোগটা আওয়ামী লীগের মধ্যে নেই। দলের বাইরের কেউ কেউ এ কথা বলতে পারে। যারা দল থেকে অনেকবার মনোনয়ন পেয়েও পাস করতে পারেনি বা পদ-পদবি চেয়ে পায়নি, তারা নানা সময় নানা কথা বলে। আমার ধারণা এটা বঞ্চিতদর ক্ষোভ। আবার যে নেতা বামপন্থী ছিলেন তিনি তো তার আদর্শ ত্যাগ করেই এসেছেন আওয়ামী লীগে।


তানিম : তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে কুলাঙ্গারের দল বলেছেন...


লেনিন : সে (তারেক রহমান) নিজেই একটা কুলাঙ্গার, অপদার্থ ও অন্ধকারের জীব। তার সাহস থাকলে দেশে এসে আইনের মোকাবেলা করুক। আন্তর্জাতিক গডফাদার দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে যার সর্ম্পক আছে তার সর্ম্পকে আর কী বলবো!


(ঢাকাটাইমস/৪সেপ্টেম্বর/টিএ/এমএটি)