logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
আবাসন খাতে সরকারি সহায়তা ও নজরদারি জরুরি: আমিনুর রহমান
০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ১২:০৯:৩৭
image


ঢাকা: একই সঙ্গে আশা এবং হতাশা ছড়াচ্ছে আবাসন খাত। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক ফ্ল্যাট তৈরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কম জমিতে বেশি  মানুষের মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে নানা কারণে সম্প্রতি এই খাত বিকশিত হতে পারছে না। ফ্ল্যাট তৈরি করেও বিক্রি করতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ ছাড়াও নানা কারণ দায়ী এর জন্য। বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠা নানা অভিযোগও ক্রেতাদের বিশ্বাস ভঙ্গের একটি কারণ। এসব বিষয় নিয়ে ঢাকাটাইমসের মুখোমুখি হয়েছেন আবাসন প্রতিষ্ঠান অ্যারিস্টো ডুয়েলিং-এর বিপণন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুর রহমান। কজন বন্ধু মিলে দাঁড় করানো এই আবাসন কোম্পানির বর্তমান একক মালিক হচ্ছেন এমডি প্রকৌশলী মাহবুব আলম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিলকিছ ইরানী

আবাসন খাতের অবস্থা নাজুক বলা হচ্ছে।

৩৭ হাজার তৈরি ফ্ল্যাট বিক্রি করা যাচ্ছে না। ছোটখাটো আবাসন প্রকল্প ঝরে যাচ্ছে। অনেক কোম্পানি শ্রমিকের বেতন দিতে পারছে না। এ অবস্থায় আমরাও মধ্যবিত্তদের জন্য তৈরি করা অল্প কিছু ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারছি।

এই খাতের সম্ভাবনা কতটুকু?

আমাদের দেশে আবাসন খাতের অবশ্যই অনেক ভালো সম্ভাবনা আছে। এ খাতে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তা অন্য অনেক খাতেই হয়নি। শ্রমিক, ব্যাংক, রড, সিমেন্ট, আর্কিটেকচার থেকে শুরু করে প্রকৌশলী সবাই জড়িত।

পোশাক শিল্পের পরই আবাসন খাত। সঠিক নজরদারি থাকলে এ খাতে সরকারি আয় অনেক বাড়বে।

ভালো করার উপায় কী?

আবাসন খাতের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট তাতে ভালো করা সহসাই সম্ভব হবে নাÑযদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকে। এ জন্য রাজউকেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে। বিশেষ করে রাজউক যদি আবাসন খাতের নিয়মিত প্ল্যান দ্রুত পাস করে দেয় তাহলে এ খাত অনেক এগিয়ে যাবে।

আবাসন খাত মূলত জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি। আবাসন প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে মানুষের এ চাহিদা  মেটানোর জন্য। সে চাহিদা কীভাবে পূরণ করা যায় সে বিষয় দেখতে হবে আগে। কারও আয় কম, কারও বেশিÑ সেটা বিবেচনা করে ফ্ল্যাট করা দরকার। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাট তৈরি করে ভোক্তাদের কাছে হস্তান্তর করতে পারলে আবাসন খাত অনেক সহযোগিতা পাবে।

ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর কী ব্যবস্থা করা যেতে পারে?

ব্যাংক থেকে এক অঙ্কের (৯ শতাংশের কম) সুদের ব্যবস্থা করতে পারলে আবাসন খাতে একটা ভালো রূপ ফিরে আসবে। অন্যথায় এ খাতের উন্নতি সহসাই সম্ভব নয়।

কোন বিষয়গুলো এই খাতের বিকাশকে আটকে রেখেছে?

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও বড় বিষয়। হরতাল, ভাঙচুর ও অস্থিরতা এ সবের জন্য সুষ্ঠু কাজও নিয়মিত করা যাচ্ছে না। আন্দোলন এলেই বাধা হয় পণ্য পরিবহনে, বের হতে পারে না শ্রমিকরা। হরতাল, ভাংচুর ও অস্থিরতা থেকে মুক্ত হতে হবে। একটা শিথিল অবস্থানে এলে ভালো করার উপায় চলে আসবে।

আবাসন খাতে যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছিল এখন তা কমে গেছে। এখন ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের কাছ থেকে সুদ বেশি নিয়ে, যাচাই-বাছাই করেও যদি ব্যাংক থেকে প্রকল্পের বিপরীতে ডেভেলপারদের ঋণ দেয় তাহলে আবার গতি ফিরে পাবে।

জমির সমস্যা তো আছেই। আগে জমির মালিকরাই ডেভেলপারদের তোষামোদ করত। এখন ডেভেলপাররাই বিভিন্ন অফার দিচ্ছে। এর ফলে জমির মালিকরাই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। কারো ৫ কাঠা জমি থাকলেই কোটিপতি  হয়ে গেছে মনে করে ভাব দেখায়। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নইলে ডেভেলপাররা ভোক্তাদের সঠিক দামে ফ্ল্যাট দিতে পারবে না। এ জন্য জমির মালিকদেরও নমনীয় হতে হবে।

চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেওয়ার একটা অভিযোগ আছে আবাসন কোম্পানির বিরুদ্ধে।

এর জন্য অন্যতম প্রধান কারণ দ্রুত প্ল্যান অনুমোদন না হওয়া। আবার প্রকল্প সময়মতো শেষ হচ্ছে কি না সে ব্যাপারেও নজর দিতে হবে। সবাই সবার প্রতি সম্পূরকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। বিক্রির জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

সরকারেরও বেশ কিছু করণীয় আছে। নিবন্ধন ফি কমাতে হবে, বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুত করে দিতে হবে। গ্যাস সংযোগ নিয়মিত করা গেলে এখান থেকে আমরা হয়ত লাভবান হতে পারব। অবশ্যই এ খাতে সরকারি নজরদারি বাড়ানো উচিত। কারণ এ ক্ষেত্রে প্ল্যান পাস, জমি নেওয়া থেকে শুরু করে তাদের যে তদারকির ব্যবস্থা আছে সেগুলোর জনবল অনেক কম। এই জনবল বাড়িয়ে নিয়মিত নজরদারি করলে আবাসন খাত ও সরকারি সংস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে এবং বিক্রিও বেড়ে যাবে।

প্ল্যান পাসের ক্ষেত্রে দেখা যায় ফাইলগুলো এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে যাচ্ছে, এক থেকে দুই বছর লেগে যাচ্ছে কিন্তু প্ল্যান পাস হয় না। এতে ঘুষ দিতে হচ্ছে। এই ঘুষ দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

রিহ্যাব বহির্ভূত অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভোক্তা বা গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এই প্রতারণা নামিদামি প্রতিষ্ঠানও করে থাকে। এই প্রতারণা বন্ধের উপায় কী?

বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায় ডেভেলপাররা হুট করে অনেক বেশি জমি নিয়ে নেয়। তারা একটি চুক্তিও করে ফেলে যে, এক বছরেই পুরো কাজ করে দেবে। সমস্যা হচ্ছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত জমি থাকার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে তারা তেমন লোকবল খাটাতে পারে না। এক সময় অনেক ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারত, হস্তান্তর করতে পারত। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা হুট করে থেমে গেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় আয়ও কমে গেছে। দেখা গেছে যে পরিমাণে আয় করছে তার দ্বিগুণ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। এজন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সময়মতো ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে পারছে না। ভোক্তাদের সঙ্গে চুক্তি ধরে রাখতে পারছে না। এ জন্য তাদের সঙ্গে নিজেরাও ভুক্তভোগী।

রিহ্যাবের পক্ষ থেকে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আছে। এ ক্ষেত্রে জরিমানা করা হয়। একটি চুক্তি করা আছে নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে না পারলে ভোক্তার যে প্রাপ্য ভাড়া তা তাকে দিয়ে দিতে হবে।

আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাই।

২০০৪ সাল থেকে অ্যারিস্টো ডুয়েলিং-এর প্রজেক্ট আমরা শুরু করি। ২০১০ সালে এটি রিহ্যাবের অন্তর্ভুক্ত হয়। ধানমন্ডি থেকে শুরু করে বিভিন্ন লোকেশনে অনেক প্রকল্প হস্তান্তর করেছি নিয়মিত। বর্তমানে মগবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, মিরপুর, উত্তরা ও মধুবাগে এর ছয়টি প্রকল্প চলছে।

মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তাদের জন্যই আমরা ফ্ল্যাটগুলো তৈরি করি।

ভবিষ্যতের জন্য কী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন আপনারা?

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক আছে আমাদের। এর মধ্যে মধ্যবিত্ত  এবং নি¤œমধ্যবিত্তসহ সবার জন্যই বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। তারা যেন ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাই। এর মধ্যে কিছু শ্রেণিকে সহযোগিতা করতে পারলে আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব। শুধু ব্যবসায়িক কারণে নয়, মানবিক কারণেও আমরা কাজ করতে চাচ্ছি।

ভোক্তারা ফ্ল্যাটে উঠার পরও কিস্তি শোধ করতে পারবে এমন ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে। তবে এটা করতে সময় লাগবে। এ জন্য সরকারের নীতিগত সহযোগিতা দরকার। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা নির্ভর করবে সরকার আমাদের কতটুকু সহযোগিতা করতে পারবে তার ওপর।

(ঢাকাটাইমস/০১ সেপ্টেম্বর/ ইরা/এআর/ ঘ.)