বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন প্রায় ৮২ হাজার শ্রমিক রয়েছে। সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যাতে পাটশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শ্রমিকরা চাকরি হারায়। বলছিলেন পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি বলেন, সরকার পাটশিল্পের উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেশের ৮৬টি পাটকলের মধ্যে ৬০টি বেসরকারি খাতে। সরকার এই পাটকলগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি পাটকলগুলো সচল করা হয়েছে। অথচ ২০১০ সালে মাত্র ৬টি পাটকল চালু ছিল। সম্প্রতি সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে পাট প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে? জবাবে মির্জা আজম বলেন, ‘সোনালি আঁশের সোনালি গৌরব আমরা আবারও ফিরিয়ে আনতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটশিল্পের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী পাটের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এখনো পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ আছে, যা দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে। সরকার এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে।’
পাটচাষিদের সরকার কি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে? পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এরই মধ্যে দেশের ৪৪ জেলার ২০০ উপজেলায় কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও উন্নত পাটবীজ বিতরণ করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে চাষের ফলে আগের চেয়ে পাটের ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ উৎপাদন বেড়েছে। পাটের গৌরব ফেরাতে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকেও গুরুত্ব দিলেন তরুণ এই রাজনীতিক। তিনি বলেন, পাটশিল্প রক্ষায় সরকার, বেসরকারি উদ্যোক্তা, শ্রমিকসহ সব পক্ষকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
পাটকলগুলোকে হোল্ডিং কোম্পানি করার উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছিল? জবাবে মির্জা আজম বলেন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাটকলগুলোকে হোল্ডিং কোম্পানি করার শর্ত দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে বিজেএমসির সঙ্গে আলোচনা করেছি। এতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিজেএমসিকে হোল্ডিং কোম্পানি করা হচ্ছে না। পাট শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আলোচনায় উঠে আসে পাটের ব্যাগ ব্যবহার আইনের বিষয়টিও। পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে যে আইন করা হয়েছিল তা কি পুরোপুরি মানা হচ্ছে? পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাটজাত মোড়ক ব্যবহার আইন বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। যে করেই হোক ২০১০ সালে করা ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন’ শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। এতে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বাড়বে। তিনি বলেন, ধান, চাল, গম, চিনি, সার ও ভুট্টা সরবরাহে এখনো পলিথিন ও সিনথেটিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন যদি আইনের যথাযথ প্রয়োগে সচেষ্ট হয় তাহলে পাটশিল্পের চাহিদা আরও বাড়বে।
তবে এর পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক অসহযোগী মনোভাবের কথাও বললেন মির্জা আজম। তিনি অভিযোগ করেনÑ ধান, চাল, গম ইত্যাদির আড়তের মালিক অনেকে রাজনীতিক। তাদের অনেকে বিভিন্নভাবে প্রশাসনকে এই আইন বাস্তবায়নে তাড়াহুড়া না করতে তদবির করছে। যে কারণে অনেক জায়গায় পাটজাত মোড়কের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত হচ্ছে না।
রেশম শিল্প নিয়ে সরকার কী ভাবছে? পাটের পাশাপাশি রেশম শিল্পকেও এগিয়ে নেওয়ার কথা জানালেন পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম রাজশাহীর রেশমই উৎকৃষ্ট, কিন্তু আসলে তা হচ্ছে ভোলাহাটের রেশম। রেশমের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়বে। রেশমের ঐতিহ্য আমরা ফিরিয়ে আনব। ১৯৯৫ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলাহাট সফরে গিয়ে ক্ষমতায় গেলে রেশমের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা রেশমের উন্নয়নে কাজ করছি। বিএনপি সরকারের বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান ১৯৯২ সালে ভোলাহাটে এসে রেশম শিল্পকে ধ্বংস করেছিলেন।’
সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সময় অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কি ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে? মির্জা আজম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পর এ কাজ শুরু হয়েছে। শুরুতেই বাতিল করা হয়েছে চট্টগ্রাম সমিতির ইজারা। তিনটি বড় টেক্সটাইল মিলের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। বিক্রি বাতিল করার বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে তারা। পর্যায়ক্রমে এ তিনটি মিলের বিক্রি বাতিল করে অফিস আদেশ জারি করা হবে। অনিয়মের মাধ্যমে যেসব সরকারি সম্পদ ব্যক্তিমালিকানায় বিক্রি করা হয়েছিল সরকার একে একে সব ফেরত নেবে।’
বাংলাদেশের প্রাথমিক বস্ত্রখাতে (প্রাইমারি টেক্সটাইল) বিনিয়োগের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? তিনি জানান, বাংলাদেশে পোশাকখাত যেভাবে বিশ্ব বাজারে সম্প্রসারিত হচ্ছে, সে অনুযায়ী দেশে প্রাথমিক বস্ত্রখাতের সম্প্রসারণ ঘটেনি। ফলে দেশীয় উৎস থেকে চাহিদা অনুযায়ী কাপড় সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য সরকার প্রাথমিক বস্ত্রখাতে বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছে। ভারতীয় উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুই দেশের যৌথ বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।