logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
আ.লীগের জেলা সম্মেলনে উপেক্ষিত হাসিনার নির্দেশও
নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৯:৪৭:৫০
image


ঢাকা: তৃণমূলকে শক্তিশালী করার টার্গেট নিয়ে আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী জেলা সম্মেলনে হাত দিলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কমিটি নির্বাচনে উপেক্ষিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশও। কথাছিল তৃণমূলে ত্যাগী নেতাদের জেলা কমিটিতে নিয়ে আসা। দলকে শক্তিশালী করার জন্য এটা দরকারও ছিল।

কিন্তু জেলা কমিটিগুলোতে ত্যাগী নেতারা উপেক্ষিতই থাকছেন। এর পরিবর্তে জেলা কমিটির বড় বড় পদে স্থান পেয়েছেন অর্থের জোরে এমপি নির্বাচিত হওয়া ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া নেতারা। অনেক জায়গায় কমিটিতে স্থান পেয়েছে মন্ত্রীরাও। কথা ছিল এমপি ও মন্ত্রীরা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকায় কমিটেতে অন্য নেতাদের স্থান করে দিলে তাতে দল শক্তিশালী হবে।

ত্যাগী নেতাদের অভিযোগ, জেলা কমিটি গঠনের মধ্যদিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার কথা থাকলে আখেড়ে হিতে বিপরীতই হবে। রাজনীতিতে পোড় খাওয়া ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হওয়ায় দীর্ঘদিনের কোন্দল দৃশ্যত আরো দানা বাধতে শুরু করেছে।

 এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭৩ টি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন শেষ করার টার্গেট নিয়ে নেতারা মাঠে নামলেও অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারা ৭৩ টি সাংগঠিক জেলার মধ্যে মাত্র ২৬ টি সম্পন্ন করতে পেরেছে। বাকি ১০ দিনের মধ্যে পুরো সম্মেলন শেষ করা প্রায় অসম্ভব।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা মোট ৭৩টি। তার মধ্যে মাত্র ২৬টি জেলায় সম্মেলন করতে পেরেছে দলটি। বাকি ১০ দিনের মধ্যে ক’য়েকটি জেলা সম্মেলনের দিন-ক্ষণ ঠিক হয়েছে। তাতে সব মিলিয়ে অর্ধেকেরও বেশি জেলায় সম্মেলন শেষ করা সম্ভব হবে না। দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সব জেলার সম্মেলন শেষ করা সম্ভব হবে না। তবে তাদের দাবি জানুয়ারির মধ্যে এ সম্মেলন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

দীর্ঘদিন থেকে তৃণমূলে সম্মেলন না হওয়ায় গত মেয়াদে উদ্যোগ নিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সে কারণেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। আগামী দিনে বিরোধীদলের সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবেলায় চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই তৃণমূল সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে দল চাঙ্গা করতে উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে ১০টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়।



সূত্র জানায়, গত অক্টোবর থেকে টিমগুলো পুরোদমে কাজ শুরু করার কথা বললেও তাতে গতি ছিল না। বিষয়টি বুঝতে পেরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকগুলোতে ডিসেম্বরের মধ্যে সব পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করার দিনক্ষণ ঠিক করে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সবশেষ ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়েও বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী। এরপরও উত্তরের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুর ছাড়া অন্য জায়গার অবস্থা তেমন ভালো নয়। ঢাকা বিভাগের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এমপিদের দলের শীর্ষ পদে না আনতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের কড়া নির্দেশ দেন। তার পরেও রাজশাহী, নাটোর ও খুলনা মহানগরের সম্মেলন হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের বুঝিয়ে শীর্ষপদ বাগিয়ে নিয়েছেন এমপিরা। ফলে বঞ্চিত হয়েছেন ত্যাগী নেতারা। এতে দীর্ঘদিনের অন্তর্কোন্দল নতুনমাত্রা পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সমঝোতার ভিত্তিতে রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আসাদুজ্জামান আসাদের নাম ঘোষণা করা হয়।

 গত ২৯ নভেম্বর খুলনা মহানগরে সাবেক মেয়র ও বাগেরহাট-৩ আসনের এমপি তালুকদার আব্দুল খালেক সভাপতি ও খুলনা-২ আসনের এমপি মিজানুর রহমান মিজান সাধারণ সম্পাদক পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় নির্বাচিত হয়।

২ ডিসেম্বর নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন নাটোর-৪ আসনের এমপি আবদুল কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন নাটোর-২ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল।

এছাড়া জয়পুরহাট জেলা সভাপতি হয়েছেন জয়পুরহাট-১ আসনের এমপি সামছুল আলম দুুদু। বরগুনা জেলায় পুনরায় সভাপতি হয়েছেন বরগুনা-১ আসনের এমপি ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু। দিনাজপুর জেলার সভাপতি হয়েছেন দিনাজপুর-৫ আসনের এমপি ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।

লালমনিরহাট জেলার সভাপতি হয়েছেন লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন বরিশাল-১ আসনের এমপি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বরিশাল-২ আসনের এমপি তালুকদার ইউনুস। ফেনীর জেলার সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী।

উপজেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহীর বাঘায় সভাপতি হয়েছেন রাজশাহী-৬ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।  সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে সভাপতির পদে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের এমপি আবদুল মজিদ ম-ল, উল্লাপাড়ায় সাধারণ সম্পাদক হন সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের এমপি তানভির ইমাম।

রাজশাহী জেলার এক নেতা বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা সবসময় তৃণমূলের কর্মীদের খোজখবর রাখেন না। তারা জেলা ও উপজেলা কমিটির শীর্ষপদ পেলে নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হয়। ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজশাহী জেলার অধিকাংশ এমপিই নতুন ও ব্যবসায়ী হওয়ায় তারা পদ পেতে রীতিমতো উখিয়ে আছেন।

আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা যদি জেলা ও উপজেলা কমিটির শীর্ষপদ দখল করে রাখেন তা হলে সংগঠন শক্তিশালী হয় না। তারা এলাকায়ও থাকেন না। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগও রাখেন না। এতে নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু এবারও সম্মেলনে বেশ কিছুু কমিটিতে তারাই পদে এসেছেন। এতে দল ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সব জেলার সম্মেলন শেষ করা সম্ভব হবে না। ডিসেম্বরের বাকি যেটুকু সময় আছে তার মধ্যে আরও ১০ থেকে ১৫ জেলায় সম্মেলন করতে পারব বলে আমি আশা করি।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আমার বিভাগের সম্মেলনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করে ফেলতে না পারলেও জানুয়ারির শুরুতেই আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার কাজ শেষ হয়ে যাবে।

(ঢাকাটাইমস/ ২১ ডিসেম্বর / এইচএইচ /এআর)