logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
নারী নির্যাতন-৩
রাজধানীতে অভিনব ফাঁদ পেতে বিয়ে!
বিলকিছ ইরানী, ঢাকাটাইমস
১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১২:৩৫:৩১
image

ঢাকা: প্রতারণার অভিনব ফাঁদ পেতে এক সন্তানের জননীকে বিয়ে করার পর ৮ মাস ঘরে অবরুদ্ধ রেখে নির্যাতন চালান নূরু মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যাক্তি। ‘শারীরিক সুস্থতার সনদে’ সই করিয়ে নেয়ার ছলে যথাক্রমে তালাক ও কাবিননামায় সই করিয়ে, পরিবারবিচ্ছিন্ন ঐ গৃহবধুকে গৃহবন্দি করে রাখেন তিনি।


রাজধানীর গুলশান থানার নগদা, কালাচাঁদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নূরু মিয়া বলেছেন, পরিবারের সম্মতির ভিত্তিতেই বিয়ে করেছি। প্রতারণার অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। অভিযোগকারী সোনিয়া আমার আপন বোনের মেয়ে। ওর সঙ্গে আমি প্রতারণা করতে যাবো কেন।


১৮ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, এ বিষয়ে অভিযোগ করতে আসেন প্রতারণার শিকার ঐ গৃহবধু সোনিয়া (২৪)। বর্তমানে তিনি এখন ‘মহিলা অধিদপ্তরের’ হেফাজতে আছেন।


২০০৯ সালে পটুয়াখালির বাহারুল মিয়ার (৩০) সঙ্গে বিয়ে হয় বরিশালের মেয়ে সোনিয়ার। ঐ এলাকায় বসবাসরত নূরু মিয়াকে ‘নানা’ বলে ডাকতেন সোনিয়া। ঐ ব্যক্তি সোনিয়ার স্বামী বাহারুল মিয়াকে দীর্ঘদিন যাবৎ চাকরি দেয়ার কথা বলে আসছিল।


প্রায় আট মাস পূর্বে বদরুল মিয়াকে স্ত্রী-পুত্রসহ ঢাকার গুলশানে নিয়ে আসে নুরু মিয়া। কিছুদিন পর, ‘বিভিন্ন অযুহাতে’ বদরুল মিয়াকে সন্তানসহ পটুয়াখালি পাঠিয়ে দিয়ে, সোনিয়াকে নিজের কাছে রেখে দেন নুরু মিয়া। বদরুল মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে এক মিথ্যে সংবাদে জানানো হয়, তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছেন।


অতঃপর নিরক্ষর সোনিয়াকে অভিনব প্রক্রিয়ায় শারীরিক সুস্থতার সনদে সই করিয়ে নেয়ার ছলে, বদরুল মিয়াকে তালাক দেয়ার জন্যে তালাকনামা ও নুরু মিয়াকে বিয়ে করার কাবিননামায় সই করিয়ে নেয়া হয়। শোনা যাক, প্রতারণার শিকার নারীর জবানীতেই।    


‘আমি বারিত যাওয়ার জন্য অনেক কান্নাকাটি করি। সে আমার কাছে দুইটা মোড়ানো কাগজ নিয়ে আসে। বলে, তুমি যে এখানে এতদিন ছিলা এবং সুস্থ ছিলা সেইটার একটা ডকুমেন্ট রাইখা যাইবা না? আমি আমার পোলার চিন্তায় ছিলাম। ভাবলাম এইটা আর এমন কি। সুস্থ তো ছিলামই। তাই সই দিয়া দিলাম। সই দেয়ার চার পাঁচদিন পর কয়, তুমি কার কাছে যাইবা? যার কাছে যাইতে চাও তার সাথে তোমার তো ছাড়াছাড়ি হইয়া গেছে। আর আমারে তুমি বিয়া করছ।


যেই কাগজে সই দিছি সেই কাগজ নাকি ছিল ডিভোর্স পেপার আর কাবিন নামা।সে আমারে ঘরে তালা দিয়া ঘর থেকে বাইর হয়।কোথাও যাইতে দেয় না।ছেলের জন্য খুব বেশি কান্নাকাটি করলে সে এক সময় আমার ছেলে রহিদুল ইসলামকে(৪) ঢাকায় নিয়া আসে।


তার আগের বউ মারা গেছে আগেই। সে ঘরে দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সেই আমারে বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য করছে।’


ঢাকা শহরের কিছুই চেনেন না সোনিয়া। দীর্ঘ ৮ মাস শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অবশেষে বাড়ি থেকে পালাতে সক্ষম এ নারী, প্রতিবেশীদের সহায়তায় ‘মহিলা অধিদপ্তরের’ এসে উপস্থিত হন।


এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের কর্মকর্তা খুরশিদ আলম ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘বিষয়টি অনেক জটিল। মামলা করা হয়নি এখনও। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সোনিয়াকে এখন সরকারি হোমে রাখা হয়েছে। এখানে রেখেই কার্যক্রম চালাতে হবে। শিগগিরই নূরু মিয়াকে নোটিশ পাঠানো হবে।’


সোনিয়ার আশঙ্কা, তার স্বামীর পরিবার পুনরায় তাকে গ্রহণ করবে না। আরও জানান, নুরু মিয়ার পক্ষ থেকে একাধিকবার তাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্যে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।এ অবস্থায়, সন্তানকে নিয়ে বাকি জীবন একাকী কাটিয়ে দেয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বলে জানান।


এ ব্যাপারে নূরু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সোনিয়ার মা ও তাঁর পরিবারের সম্মতির ভিত্তিতে সামাজিকভাবে সোনিয়াকে বিয়ে করার কথা জানান। তিনি বলেন, এ বিয়েতে সোনিয়ারও মত ছিল।টেলিফোনে নূরু মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভাই আমি ঠিকাদারি করি এবং বিয়ের ১৪ বছর পর অনেক চেষ্টা তদবির করার পর আমার সন্তান হয়।বেশ কিছুদিন হলো আমার স্ত্রী মারা গেছে।সোনিয়া আমার আপন ভাগ্নির মেয়ে।ওর সঙ্গে আমি প্রতারণা করতে যাবো কেন। তিনি বলেন, আমি চেয়েছিলাম ওরা গরিব মানুষ। আমার সন্তানদের দেখাশুনার জন্য আমাকে বিয়ে করতেই হবে। সেকারণে আমি মনে করেছিলাম সোনিয়াকে বিয়ে করলে আমার সন্তানদের দেখাশুনা করতে পারবে।আর সোনিয়া স্বেচ্ছায় তার স্বামীকে তালাক দিয়ে আামার সঙ্গে ঘর সংসার করছিল। ও আমার সংসারে সাড়ে নয় মাস ছিল। হঠাৎ করে ও কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।


(ঢাকাটাইমস/ ১৮ ডিসেম্বর/ইরা/এইচকে/ এআর / ঘ.)