logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
রাতের ঢাকা: বাবা-কে জানা নেই বাবুলের
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১২:১০:৪৯
image

ঢাকা: জাতীয় সংসদের সামনে মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপন করা হলো গত ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার। দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। দিনের আলোতে অনুষ্ঠানটি তেমন আকর্ষণীয় না হলেও সন্ধ্যার পর সংসদ এলাকায় লাগানো লাল, নীল রঙ্গের বাতিতে সেটি রূপ নেয় এক ভিন্ন আঙ্গিকে। জাতীয় সংসদের এ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজধানীর বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাদের পাশাপাশি সেখানে ছিল ময়না, আয়শা, নিঝুম, পালকি, লতা ও নিশিতাও। যারা এই শহরের ছিন্নমূল মানুষ হিসেবেই পরিচিত।


রাত সাড়ে ১১টা। অনুষ্ঠান শেষে সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজধানীর বিভিন্ন পেশার মানুষেরা বাসায় গিয়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন।ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সংসদের উত্তর পাশের ন্যাম ভবনের বাসিন্দারাও।


কিন্তু ঘুম ছিল না ময়না, আয়শা, নিঝুম, পালকি, লতা ও নিশিতাদের চোখে। কেননা তখন রাস্তায় চলাচলকারী বাস, মাইক্রোবাস, এবং মিনিবাস গুলো সিগন্যালে থামার সঙ্গে সঙ্গে সেদিকে ছুটে যাচ্ছে এবং হাতে থাকা ছেড়া কাপড় দিয়ে যানবাহনগুলোর বাইরের অংশ পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত ছিল। বিনিময়ে কেউ কেউ দু/চার টাকা হাতে গুজে দিচ্ছিল।অনেকে আবার ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছিল।তাদের এই পরিশ্রম আর কিছুর জন্য নয় জীবীকার তাগিদে, একমুঠো ভাতের জন্য।


একপর্যায়ে রাত যতই গভীর হতে থাকে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যাও কমতে থাকে।কমতে থাকে নিশিতাদের ব্যস্ততাও।সারাদিনের ক্লান্তি এসে যখন তাদের হাতছানি দেয় তখন তাদের ঠিকানা হয় জাতীয় সংসদের আমবাগানের খোলা আকাশের নিচে।


রাত ১২টা। সংসদ এলাকার একটু সামনেই আড়ংয়ের মোড়। সেখানে আইল্যান্ডের ওপরে মর্জিনা বেগম (৩২) বিছানায় বসে ঝিমুচ্ছিলেন। মর্জিনা বেগম যেখানে বসে ঝিমুচ্ছিলেন তার একটু দূরেই আমবাগান। বাগানের পাশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মহান জাতীয় সংসদ।যে সংসদ দেশের মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান নিশ্চিত করার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে,প্রনয়ন করছে নানা আইনও।


সংসদ প্রনীত আইনের সুফল মর্জিনাদের কাছে না পৌঁছলেও সংসদের পাশের আমবাগানে যেন পরম 'শান্তি'তে ঘুমাচ্ছিলেন মর্জিনা, ময়না, আয়শা, নিঝুম, পালকি, লতা, নিশিতারা।


রাত ২টা। মর্জিনাদের ঘূমের ব্যাঘাত ঘটায় একদল টহল পুলিশ। সেখান থেকে তাদের চলে যেতে বললে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে মর্জিনা। পুলিশকে বলেন, স্যার, আমাদের এভাবে তাড়িয়ে দিবেন না। আমরা প্রতিদিন রাতে আপনাদের মতো সংসদ এলাকা পাহারা দেই। তাছাড়া আমাদের তো ঘর নেই। তাড়িয়ে দিলে কোথায় যাব। এ কথা শোনার পর পুলিশের বিবেক যেন নাড়া দেয় এবং কথা না বাড়িয়ে পুলিশের সদস্যরা গাড়ি ঘুরিয়ে  চলে যায়।


সারাদেশের বিপন্ন মানুষের প্রধান গন্তব্যই যেন এই রাজধানী ঢাকা। শুধু বিপন্ন মানুষই নন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষিত বেকাররাও তাদের সঙ্গে আসছেন ঢাকায়। খুঁজে নিতে চান আয়ের পথ।


এসব মানুষকে বুকে জায়গা করে দেয় রাজধানী ঢাকা। প্রত্যেকের দুঃখ, দীর্ঘশ্বাস ও আনন্দের মুহূর্ত মিশে থাকে এই বাতাসে। প্রত্যেকেই এই শহরকে কেন্দ্র করেই ফেরাতে চায় তাদের ভাগ্য কিংবা কোনোমতে টিকিয়ে রাখে তাদের অস্তিত্ব।


রাত ২টা ৩০মিনিট। রাজধানীর খামার বাড়ি মোড়ে তথনও ফুল বিক্রি করছিল বাবুল। এক পরযায়ে কোনো ক্রেতা না পেয়ে পথের ধারের দোকানের বিরিয়ানি খেয়ে ঘুমানোর জায়গা খুঁজে নিচ্চিল বাবুল। কথা হয় তার সঙ্গে। খামার বাড়ি মোড়ের খেজুর বাগানে ১০ বছর আগে জন্ম বাবুলের। এই শহরে তার বয়সী কয়েকজন ছেলে বন্ধু ছাড়া আর কেউ নেই। মমতাময়ী মা মারা গেছেন তিন বছর আগে। বাবাকে তা জানা নেই বাবুলের।


সংসদের উল্টো পাশে পাশে জিয়া উদ্যান। সেখানেই থাকেন ভিক্ষুক জামাল হোসন(৩৪)।রাত তথন দুটা, কথা হয় তার সঙ্গেও। তিনি বললেন, দিনের বেলায় ভিক্ষা করি। রিকশা চালাতে পারি না। একটা দোকান বানানোর জন্য টাকা জমাচ্ছি। ১০ হাজার টাকা জমলেই তিনি ফিরে যাবেন ময়মনসিংহের গ্রামের বাড়িতে।


ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/এইচআর/এআর/ ঘ.)