logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
৫৭ প্রাথমিক স্কুলের জমি উদ্ধারে সংসদীয় কমিটি
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
০৪ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৮:০৮:৫১
image

ঢাকা: রাজধানীর ৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেদখলকৃত জমি উদ্ধারে মাঠে নেমেছে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।


গত ২ ও ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর কোতোয়ালী ও সুত্রাপুর থানার ৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি এবং বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পরির্দশন করেছে। ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, সামশুল হক চৌধুরী, মো. আব্দুর রহমান, মো. নজরুল ইসলাম বাবু, মো. আবুল কালাম, আলী আজম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ এবং উম্মে রাজিয়া কাজল।


কমিটির সভাপতি সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা ওয়াসা, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বস্তিবাসী, ক্লাবঘর এসব জমি দখল করেছে। আবার দেখা গেছে, কমিউনিটি সেন্টার, আনসার ক্যাম্প, কাঁচাবাজার বসিয়েও বিদ্যালয়ের জমি, ক্লাসরুম, মাঠ ও ভবন দখল করা হয়েছে।


তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটির সাব কমিটি বেদখল হওয়া রাজধানীর ৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরির্দশন করেছে। আগামীতে আরও অনেক বিদ্যালয় পরির্দশন করা হবে।


কমিটির সভাপতি আরো বলেন, আগামীতে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।


জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সদস্য আ.খ.ম. জাহাঙ্গীর হোসাইন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয় অনেক আগ থেকেই বেদখল হয়ে আছে। এই স্কুল উদ্ধারে কোনো সরকারই আগে পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে এসব জায়গায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’ 


ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের (ডিপিও) তৈরি করা সরেজমিন প্রতিবেদনে স্কুল বেদখল হওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদনটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়।


প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ঢাকায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৯৫টি। এর মধ্যে জমি দখল করা হয়েছে ৫৭ টির।  এসব বিদ্যালয়ের জমিতে ঢাকা ওয়াসা, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বস্তিবাসী, ক্লাবঘর এসব জমি দখল করেছে। এ ছাড়া কমিউনিটি সেন্টার, আনসার ক্যাম্প, কাঁচাবাজার বসিয়েও বিদ্যালয়ের জমি, ক্লাসরুম, মাঠ ও ভবন দখল করা হয়েছে। আবার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন : মসজিদ, ঈদগাহ তৈরি করেও জমি দখলের কাজ সাড়া হয়েছে।


কোনো কোনো বিদ্যালয়ের জমিতে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার, মসজিদ ও ঈদগাহ। বস্তিবাসী থেকে শুরু করে অবাঙালিরাও দখলে রেখেছেন কয়েকটি বিদ্যালয়ের জমি। বাকি বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো থেকে শুরু করে জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে আছেন।


ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরীন আক্তার  ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, 'ঢাকার ২৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৭টি বিদ্যালয়ের জমি এবং স্থাপনা বেদখলে আছে।


জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরান ঢাকার সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক হাজার ৮০ বর্গফুট জমিতে বসেছে ওয়াসার পাম্প। এই বিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ তলায় রমনা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ ছাড়া মিরপুরের শহীদবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডেমরার মাতুয়াইল ২ নম্বর, গুলশানের মেরাদিয়া, মতিঝিলের আইডিয়াল মুসলিম বালক/বালিকা ও মাদারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ জমিতে রয়েছে ওয়াসার পাম্প। ধানমণ্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশ দখল করে বসানো হয়েছে ওয়াসার পাম্প। এই বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিতে পরিচালিত হয় ধানমণ্ডি ল' কলেজের কার্যক্রম। কোতোয়ালি থানার হাজি মাজহারুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলা রয়েছে আনসার বাহিনীর দখলে।


মিরপুরের আ. মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ জমির মধ্যে ২০ শতাংশ এবং মোহাম্মদপুর থানার কামরাঙ্গীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশ অবাঙালিদের দখলে রয়েছে। আর মিরপুরের খলিলুর রহমান ও কাজী ফরিদ এবং শেরেবাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বস্তি। রমনা রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো না থাকায় সেখানে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার।


দক্ষিণখান বিদ্যালয়ের জমিতে তৈরি হয়েছে ঈদগাহ মাঠ, আগারগাঁও তালতলা বিদ্যালয়ের জমিতে হয়েছে মসজিদ। আর খিলগাঁও মডেল বিদ্যালয়ের জমি দখল করে গ্যারেজ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এসব জমি উদ্ধারের জন্য সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।


অপরদিকে গত ১০ নভেম্বর ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরের মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে একটি সমন্বয়সভায় এসব বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারে  অগ্রগতি জানানো হয়।


(ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/এইচআর/এমএম)