রাজধানীতে যাত্রীদের কাছে লাল রঙের সরকারি বিআরটিসি বাসের কদর বরাবরই আলাদা ধরনের। কিন্তু যাত্রী চাহিদার তুলনায় বাসের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। যাত্রীদের হতাশার আরেক কারণ, বাসগুলোর দশা। অল্প কদিনেই ভেঙেচুরে বাসগুলো হয়ে যায় চলার অনুপযোগী। যেখানে একই সময়ে নামানো বেসরকারি মালিকানার বাস চলে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সময়।
বছর বিশেক আগেও রাজধানীতে বিআরটিসির বাস মানেই ছিলো দ্বিতল বাস। কিন্তু এখন দ্বিতলের পাশাপাশি চলে এক তলা বাসও। চলে জোড়া দেয়া আর্টিকুলেটেড বাস। চলে বেশ কয়েকটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসও। কিন্তু যতগুলো বাস চলার কথা চলে তার চেয়ে অনেক কম। কারণ, অল্পদিনেই বাসগুলো ভেঙে গেছে।
তবে বিআরটিসির বাসের এই সমস্যা কেবল রাজধানীতে নয়, সারা দেশেই। প্রতি চারটি বাসের একটিই নষ্ট হয়ে গেছে। সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংসদকে জানিয়েছেন, সারাদেশে এখন বিআরটিসির বাস চলে ৫২৯ টি। আর নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ৪৭৯ টি।
সরকারি বাস বলেই আয়ু কম
গত বছর দুয়েক ধরে বিআরটিসি চীন থেকে সিএনজিচালিত ২৪৫টি বাস আনে পর্যায়ক্রমে। এই বাসগুলোর মধ্যে অচল হয়ে গেছে ১২১টি। নতুন বাসগুলো এতো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিআরটিসি কখনই কোনো ব্যাখ্যা দেয় না। তবে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, যাদেরকে ইজারা দেয়া হয়, সরকারি বাস বলে তার কোনো যতœ নেয় না তারা। ইজারাদার ভাড়া তুলে লাভ করলেও বাস মেরামতের কোনো দায় নেয় না তারা।
এই বাসগুলোর তুলনায় উন্নতমানের কোরিয়ান দাইয়্যু কোম্পানির বাসগুলোর দশা অত খারাপ না হলেও বেসরকারি খাতে বাসের তুলনায় পরিস্থিতি যথেষ্ট খারাপ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ রকম ২৫৩টি বাসের মধ্যে অচল হয়ে গেছে ৩৪টি। নগর পরিবহণের পাশাপাশি আন্তঃজেলা রুটেও চলে এসব বাস। ভারত থেকে আনা অশোক লিল্যান্ডের ৮৮টি এসি বাসের মধ্যে অচল হয়ে গেছে চারটি। ননএসি আন্তঃজেলা রুটে চলাচলকারী ৪৩৪টি বাসেল মধ্যে অচল হয়ে পড়ে আছে ২০০টি। টাটার তৈরি এই বাসগুলো আনা হয়েছে ভারত থেকে। অশোক লিল্যান্ডের নগর এবং আন্তঃনগরে চলা একতলা ও দ্বিতল মিলিয়ে ৪০৯টি বাসের মধ্যে অচল হয়ে পড়ে আছে ৬৮টি।
ঢাকায় চলা জোড়া লাগানো (আর্টিকুলেটেড) ৫০টি বাসের মধ্যে তিনটি অচল হয়েছে এক বছরেই।
বিআরটিসি সূত্র জানায়, সাধারণ ত্রুটির জন্য প্রতিদিনই কিছু বাস ডিপোতে যায়। এগুলো ঠিক করে আবার রাস্তায় নামিয়েও দেয়া হয়। কেবলমাত্র বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে অর্থাৎ যেখানে প্রচুর ব্যয়ের মতো ব্যাপার আছে সে ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ছাড়া কাজ করা যায় না।
বিআরটিসির নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, নানা প্রশাসনিক জটিলতার কারণ দেখিয়ে ইচ্ছে করে এ বাসগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। একই কারণে এগুলো অবহেলায়-অযতেœ পড়ে আছে। ধীরে ধীরে এগুলো বাতিল হয়ে যাবে। এতে লাভবান হবে বেসরকারি বাস মালিকরা।
একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তারা চান না বিআরটিসি জনপ্রিয় হোক, লাভজনক হোক। তারাই বেসরকারি বাস মালিকদের হয়ে কাজ করে। তারা সবসময় নিরাপদ, আরামদায়ক ও দামি গাড়ি ব্যবহারের বিপক্ষে কথা বলেন। এসব কর্মকর্তারাই বিআরটিসি বাসের ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে থাকেন। কারণ এসব গাড়ি থাকলে এবং ভাড়া কম হলে মানুষ আর বেসরকারি সিটিং ও কাউন্টার বাসগুলোতে উঠবে না। বিআরটিসি বাস স্বচ্ছন্দে চললে বেসরকারি লোকাল বাস, সিটিং বাস এবং অন্যান্য কাউন্টার সার্ভিস বাসের মালিকদের মাথায় হাত।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, পাঁচ-ছয় বছরের পুরানো গাড়িও মেরামত করে চালান তারা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এতে ঝামেলা হয় না তেমন।
বেসরকারি বাস পাঁচ বছরের বেশি চললেও সরকারি বাস এর আগেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) আব্দুল্লাহিল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, বেসরকারি গাড়ির সঙ্গে সরকারি গাড়ির তুলনা করলে ভুল হবে। সরকারি গাড়ির চালকরা মনে করে মাস শেষ হলেই তারা বেতন পাবে। কিন্তুবেসরকারি গাড়ির চালকরা মনে করে গাড়ির কোন সমস্যা হলে তাদের বেতন কাটা যাবে এই জন্য তারা সচেতন থাকে।।
এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিআরটিসির গাড়িগুলো মেরামত করি না,এটা সঠিক তথ্য নয়। আমাদের বিআরটিসির ২০/২৫ বছরের পুরানো গাড়ি এখনও রাস্তায় চলাচল করে’।
তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাসীব মোহাম্মদ হাসান মনে করেন সরকারি গাড়িগুলো ঠিকমতো মেরামত করা হয় না। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘রুটিন মাফিক যদি বাসগুলো মেরামত করা হত তাহলে আজ এই সমস্যা হতো না’।
ভলভোর দুঃখ
২০০২ সালে সুইডেনের বিখ্যাত কোস্পানি ভলভোর দ্বিতল বাস যখন ঢাকায় চালু হয় তখন নগরে যাত্রী পরিবহণে নতুন যুগের সূচনার স্বপ্নের কথা জানায় সরকার। কিন্তু সে স্বপ্ন এখন ভেঙে গেছে পুরোপুরি।
১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুইডেন ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই দফায় ২৫টি করে মোট ৫০টি দ্বিতল ভলভো বাস আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০২ সালে বাসগুলো দেশে আসে। প্রথম দফায় আসা প্রত্যেকটি ১ কোটি ৩২ লাখ ও দ্বিতীয় দফার প্রত্যেকটি ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দরে কেনা হয়। এসব বাস সরবরাহ করে সুইডেনের বাস কোম্পানি সুইডিস মোটরস। সাধারণ ভলভো বাসের আয়ুষ্কাল ১২ বছর ধরা হয়। তবে সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে এসব বাস অনায়াসে ১৮-২০ বছর চলাচলের উপযোগী থাকে বলে জানিয়েছেন কারিগরি বিশেষজ্ঞরা। অথচ ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ, সময় মতো ইঞ্জিন তেল ও মবিল না দেয়াসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এসব বাস কেনার ৬-৭ বছরের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই আনা ৫০টি বাসের মধ্যে ৪৯টি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে ডিপোতে। সেগুলো আর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যে বাসটি এখনও টিকে আছে সেগুলো একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া। তারা বেশ যতœ নিয়ে বাসটি চালায় বলে এখনও সেটি চলে সগৌরবে।
চুক্তির শর্ত অনুসারে কেনার পর প্রথম ৫ বছর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিক্রয়োত্তর সেবার অংশ হিসেবে খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। ওই সময়ে বাসগুলো সচল ছিল। এরপর ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বাসগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। এমনকি ছোটখাটো সমস্যাগুলোও সারানো হয়নি। এ কারণে ২০০৬ সালের শেষ ও ২০০৭ প্রথমদিকে বাসগুলো ভারী মেরামতের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন থেকে ডিপোগুলোতে বাস বসিয়ে রাখা হয়।
২০০৭ সালের এক এগারোর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এসব বাসের ভারী মেরামতের প্রয়োজন দেখা দিলেও তা করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, নতুন বাস কেনার পথ প্রশস্ত করতেই এসব বাস ঠিকমতো মেরামত করা হয়নি। এমনকি তখনকার বিআরটিসি কর্মকর্তারাও সামরিক বাহিনীর খড়গের ভয়ে বাস মেরামতে আগ্রহ দেখাননি। এ অবস্থায় দীর্ঘ তিন বছর অচল পড়ে থাকায় ভলভোগুলো ক্রমেই নষ্ট হয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, ভলভো বাসগুলোর নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশ সময়মতো লাগানো হতো না। এ ছাড়া এক-এগারোর সময় বেশ কিছু কর্মকর্তা ইঞ্জিন অয়েলের টাকা আত্মসাৎ করেন। তখন পুরনো ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে বাস চালানোর অভিযোগও আছে। গাড়িতে জ্বালানি তেল ডিজেলের সঙ্গে পানি মেশানোর মতো অভিযোও উঠে। এগুলোর সত্যতা কখনও যাচাইয়ের চেষ্টা করেনি বিআরটিসি।
এছাড়াও সুইডিস মোটরস সন্তোষজনকভাবে বাস মেরামত করেনি। পরবর্তীতে ছোটখাটো অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে তা আর ঠিক করা হয়নি।
কর্মকর্তারা জানান, একতলা বাসের ভারী মেরামতের ক্ষেত্রে ৪ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা লাগে। অথচ প্রতিটি ভলভো বাসের মেরামত করতে ব্যয় হবে গড়ে ৫০ লাখ টাকা। কারণ হিসেবে তারা জানান, ভলভো বাসে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা যায় না। এসব যন্ত্রাংশ সুইডেনের সুইডিশ মটরস বা এ ধরনের বাস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করতে হবে। তারা আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে চলমান ১৮টি ও অপেক্ষাকৃত কম নষ্ট সাতটিসহ মোট ২৫টি ভলভো বাস মেরামত করা হবে। এসব বাসের মেরমত ব্যয় হবে ৪০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সর্বমোট ১০ কোটি থেকে সাড়ে ১২ কোটি টাকা। আর বাকি ২৫টির জন্য ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। এসব বাসের মেরামত খরচ ৫০ লাখের বেশি ধরা হচ্ছে।
এদিকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করে ভলভো বাস মেরামত না করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বেশ ক’জন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে ভয়াবহ যানজটের কারণে একটি ভলভো বাস প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪টি ট্রিপ দিতে পারবে। এতে খরচ বাদে দৈনিক ৫ হাজার টাকা আয় হবে। এছাড়া ঢাকার রাস্তায় এত বড় বাস চলার উপযোগী নয়। এছাড়া ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করে বাস মেরামত করা হলেও তা দু’তিন বছরের বেশি টিকবে না। ফলে ভলভো মেরামতের টাকাই বিফলে যাবে।
ভলভো বাস গুলো সম্পর্কে বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্ণেল আব্দুল্লাহিল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভলভো গাড়ি গুলো তখন যেভাবে মেরামত করা উচিত ছিল সেভাবে করা হয়নি। ভলভো বাসে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা যায় না। এটা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ। আর এগওলো মেরামত করার মত ফান্ডও ছিল না। সেসময় কেন মেরামত করা হয়নি সেটা আমরা জানি না। কারণ তখন আমরা ছিলাম না।
লাভের হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকি
২০০৯ সাল থেকে নতুন বাস আমদানি ও নতুন নতুন রুট চালুর পর থেকে বিআরটিসির আয় বাড়ছে। আর এতে লোকসানি প্রতিষ্ঠান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার দাবি করছে সংস্থাটি।
তবে কাগজে কলমে লাভের অংক থাকলেও সেটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। কারণ বছর শেষে পরিচালনা ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হওয়ার হিসাব থাকলেও বাস রক্ষণাবেক্ষণ করতে কতো টাকা লাগবে, তা এই লাভ-লোসকানের হিসাবে ধরা হয় না। বিআরটিসির এক কর্মকর্তাই বলছেন, এসব হিসাব ধর্তব্যে নিলে বছর শেষে লাভের হিসাব আর থাকে না।
আবার বিআরটিসির যে পরিমাণ আয় হওয়ার কথা তাও হয় না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা সিটি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটে চলাচল করা ৯৭০টি বাস থেকে বিগত অর্থবছরে আয় ২২০ কোটি টাকা, পরিচালনা ব্যয় ২০৩ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম না হলে শুধু ঢাকা সিটিতে চলাচল করা ৩৫২টি বাস থেকেই কমপক্ষে ২৫০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। সারাদেশের বিবেচনায় এই আয় ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যেত। বর্তমানে ঢাকা সিটি থেকে স্বাভাবিক আয়ের সমপরিমাণ আয়ও করতে পারছে না বিআরটিসি।
উত্তরা থেকে নিয়মিত মতিঝিলে যাতায়াত করা যাত্রী মোস্তফা কামাল জানান, উত্তরা থেকে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ওঠার পর রাস্তার মাঝখানে কাউন্টার ছাড়াই অসংখ্য যাত্রী তোলা হয়। ফলে পরবর্তী কাউন্টারগুলো থেকে টিকিট করেও যাত্রীরা ওঠার সুযোগ পান না। টিকিট ছাড়াই যাত্রীদের কাছ থেকে টিকিটের সমপরিমাণ ভাড়া আদায় করেন চালক।
শুধু এসি বাস নয়, বিআরটিসির কাউন্টার পদ্ধতিতে চলা নন-এসি সিঙ্গেল ডেকার ও ডাবল ডেকার এবং আর্টিকুলেটেড বাসে ভ্রমণ করেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। কাউন্টার থেকে যাত্রী তোলার পর কয়েক গজ সামনে এসে দরজা খুলে যাত্রী তোলা হয়। বনানীতে সরেজমিন দেখা যায়, কাউন্টারে আসার আগেই কাকলি মোড় থেকে বিপুল পরিমাণ যাত্রী তুলে পরে কাউন্টারের সামনে এসে বাস বলা হয়, ভেতরে জায়গা নেই। পরে চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় এসে আরও এক দফা যাত্রী তোলা হয়।
একটি সূত্র জানায়, টিকিট ছাড়া যাত্রীর ভাড়া পরিবহণ ভবনে ব্যবস্থাপক পদ পর্যন্ত কয়েকজন কর্মকর্তার মধ্যে ভাগাভাগি হয়, এর সামান্য অংশ পান বাসচালক, সহকারী এবং পরিদর্শনকারী। পরিদর্শনকারীর দায়িত্ব যাত্রীদের টিকিট নিশ্চিত করা এবং সুবিধা-অসুবিধা দেখার কথা হলেও তারা মূলত টিকিটবিহীন যাত্রী ভাড়ার হিসাব নিয়ে চলে আসেন। প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিনই ভাগাভাগি হয়ে যায়। ফলে বিপুল ব্যয়ে কাউন্টার সার্ভিস চালু এবং এসব কাউন্টার চালু রাখতে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করা হলেও বাস্তবে খুব কমই সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
দিনে লোপাট হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টাকা!
বিআরটিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজধানী ও আশপাশের রুটে ৩৫২টি বাস চলাচল করছে। বেসরকারি বাস সার্ভিসের সঙ্গে তুলনা করলে প্রতি বাসে দিনে গড়ে আয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। গড়ে ১০ হাজার টাকা আয় দেখানো হলেও ৩৫২ বাসে প্রতিদিন আয় হওয়ার কথা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু বিআরটিসির বাসে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা এবং যাত্রীর ভিড় বেশি হলেও বাসপ্রতি গড়ে কোনোদিনই পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার বেশি আয় দেখানো হয় না। কোনোদিনই আয় দিনে ২০ লাখ টাকার উপরে যায় না, কালেভদ্রে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা দেখানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির পরিচালক (অপারেশন ও প্রশাসন) নিখিল রঞ্জন রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক মাসেই সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপককে একটি লক্ষ্য ঠিক করে দেই। লক্ষ্য পূরণ করতে না পারলে আমরা তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেই। আর দুর্নীতি নিয়ে যদি আমাদের কাছে কোন অভিযোগ থাকে তাহলে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে কুমিল্লার একজনকে বহিষ্কার করেছি’।
হরতালে বিআরটিসির ওপর আক্রমণ
বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্ণেল আব্দুল্লাহিল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন জানুয়ারী ২০০৯ থেকে জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৩৩৪টি বিআরটিসির গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। তার মধ্যে ৪৬ বাস আগুনে ভস্মীভুত হয় যার মধ্যে ১৬টি বাস ছিল নতুন। আর ২৮৮টি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।
এই কর্মকর্তা বলেন, ৩৩৪ টি গাড়িতে আমাদের রাজস্বক্ষতি হয়েছে, ৫৮কোটি ২৭লাখ ৬৯ হাজার তিনশত৬৫টাকা।
৩৩৪টি গাড়ির মধ্যে কয়টি গাড়ি মেরামত করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৪৬টি গাড়ির মধ্যে ৩০টি গাড়িকে মেরামত করে রাস্তায় নামানো হয়েছে। আর ২৮৮টি গাড়ির মধ্যে ২৩০টি গাড়ি মেরামত করে রাস্তায় নামানো হয়েছে।- সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে