logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
ক্ষমতার স্বাদ নিতে রাজনৈতিক আদর্শ বদল
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
২৬ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:১২:৪৪
image


জাতীয় পার্টির শাসনামল তখন, রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জনসভা থাকে প্রায়ই দেশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে। প্রতিটি জনসভাতেই বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়ার পর এই আদর্শে অনুপ্রাণিত নেতা-কর্মীদের আর পাশে পাননি এরশাদ।

এরশাদ আমলে এভাবে ঘোষণা দিয়ে দলবদলের ঘটনায় তার শাসনামলে একটি কৌতুক চালু হয় যে, ৯ বছরে ৯ কোটির বেশি মানুষ (তখন দেশের জনসংখ্যা ছিল ৯ কোটি) জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছে। এরশাদ পতনের আগে তিন জোটের রূপরেখায় এরশাদের কোনো ‘দোসর’কে দলে না ভেড়ানোর অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপিতে জাতীয় পার্টি থেকে নেতা-কর্মীদের যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে। প্রায়ই জাতীয় পার্টির নেতাদের ফুল দিয়ে খালেদা জিয়া বা অন্য কারও হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার ছবি আসত পত্রিকায়।

নির্বাচন আসলে এভাবে রাজনৈতিক আদর্শ ত্যাগ করে নতুন আদর্শ গ্রহণের রীতি বাড়তে থাকে দিনে দিনে। এ নিয়ে রীতিমতো কৌতুক তৈরি হয় রাজনৈতিক পরিম-লে। মনোনয়ন না পেয়ে নতুন দলে ভেড়ার এই রীতি বন্ধ হয় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। কমপক্ষে তিন বছর কোনো দলের প্রাথমিক সদস্য না থাকলে সেই দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে নাÑ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনে এমন ধারা সংযোজনের ফলে মনোনয়ন পেতে দলবদল বন্ধ হলেও এই রীতি বন্ধ হয়নি একেবারে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি আন্দোলনে তেমন সুবিধা করতে পারবে নাÑ রাজনৈতিক মহলে এমন কথা ছড়ানোর পর আবার শুরু হয়েছে সেই হিড়িক। প্রায়ই বিএনপি বা অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার খবর আসছে এখান থেকে সেখান থেকে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এমন দলবদল বন্ধ করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন স্বয়ং শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনা তুলে নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু দলের সভাপতির সেই নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না আওয়ামী লীগের নেতারা।

পরিচয় গোপন করে ক্ষমতাসীন দল বা তার সহযোগী সংগঠনে মিশে সেই দল বা সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদাহরণ আছে অনেক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একাধিকবার ছাত্রলীগে শিবিরের নেতা-কর্মীদের অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা বলেছেন। ছাত্রলীগের বদনাম করতে এই নেতা-কর্মীরা তৎপর এমন অভিযোগও তুলেছেন তিনি। কিন্তু সেই ‘ছদ্মবেশি’ কর্মীদের চিহ্নিত করে বাদ দেওয়ার কোনো চেষ্টা তো নেই-ই, উল্টো অন্য দলের নেতাদের এভাবে দলে ভিড়িয়ে নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন কোনো কোনো নেতা।

রাজনীতিবিদরা বলছেন, দলবদলের এই রাজনীতিতে লাভের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে লোকসানের পাল্লা ভারী হয়। অনেক বিতর্কিত রাজনীতিক নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতে দলবদল করেন। তার উদ্দেশ্য থাকে নিজেকে বাঁচানো, এখানে দলীয় আদর্শ মুখ্য হয় না। অতীতে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীরা দলবদলে ক্ষমতাসীন দলের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। রাজনৈতিক বেকায়দায় পড়ে বিএনপি-জামায়াত ছেড়ে অনেকে আসছেন আওয়ামী লীগে। স্বাধীনতা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও ভিড়ছে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে। এতে ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য সুফল বয়ে আসলেও ভবিষ্যতে ভাল কিছু অপেক্ষা করছে না।





তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিনের মতে, বড় একটি রাজনৈতিক দলে কে কোথায় দলে এলো এটা তো আর ধরে ধরে যাচাই করা যাবে না। তাছাড়া মানুষের রাজনৈতিক আদর্শ যে পরিবর্তন হবে না, এটা তো বলা যায় না। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি কারো ভুল বুঝতে পেরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের ছায়াতলে আসে তাকে তো তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দরজা খোলা আছে। কেউ খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তার দায় নিজের ওপরই বর্তাবে।’

বিএনপি নেতাদের দাবি, এসব আওয়ামী লীগের প্রপাগা-া। বিএনপিকে ভাঙতে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করছে দলটি। মামলা-হামলা থেকে বাঁচতে অনেকে পা দিচ্ছে আওয়ামী লীগের ফাঁদে। আর বিএনপি থেকে যারা চলে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন তাদের কারণে দলের বড় কোনো ক্ষতি হবে না।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শুধু যে বিএনপি ছেড়ে লোকজন আওয়ামী লীগে যাচ্ছে তা নয়; আওয়ামী লীগ ছেড়েও অনেকে বিএনপিতে এসেছে। বড় রাজনৈতিক দলে এমন দলবদল নতুন কিছু নয়। তবে সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য অনেককে প্রলোভন দেখিয়ে দল পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারে। যদিও রাজনৈতিক মানদ-ে এটা নৈতিক নয়।’

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকÑসুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দলবদলের রাজনীতি এ দেশে নতুন কিছু নয়। রাজনীতিকরা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় এই দল থেকে সেই দলে চলে যান। তাদের আদর্শ একটাই, স্বার্থ। দেশপ্রেম বা মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কেউ রাজনীতি করলে তো আর এমনটা করতে পারতেন না। আর দলবদলকারীদের বিশ্বাস করা যায় না। সময়, সুযোগ পেলে সে যে ভবিষ্যতেও আবার পরিবর্তন হবে না, এই নিশ্চয়তা কে দেবে?’

জামায়াত থেকেও আওয়ামী লীগে!

রাজনীতিকদের দলবদলের ইতিহাস নতুন নয়। সময়ে- অসময়ে স্বার্থ হাসিলে দলবদলের তালিকায় নাম লিখেয়েছেন অনেকে। এদের মধ্যে যেমনি নামিদামি অনেক নেতা আছেন তেমনি আছেন বিতর্কিতরাও। একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার নজির দেখা গেছে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আগে।

ঘটনাটি ঘটে কুষ্টিয়ায়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জামায়াতের নেতা নওশের আলী জামায়াত ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগে। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে নিজের পরিচয় পাল্টে ফেলেন জামায়াতের ওই রোকন। তিনি তখনও জামায়াতপন্থি শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি। এখানেই শেষ নয়, আওয়ামী লীগের যোগদান অনুষ্ঠানে জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সহসভাপতি জামায়াতকে এক হাত নেন। বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী আন্দোলনের নামে নাশকতামূলক কর্মকা- করছে, যা ইসলাম সমর্থন করে না। তাই এখন থেকে আমি আর জামায়াতের সঙ্গে নেই। স্বাধীনতার পক্ষের দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করতে চাই।’  

ওই ঘটনার পর আওয়ামী লীগকেও কমবেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। জামায়াত নেতাকে দলে ভেড়ানোকে ভালভাবে নেননি স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। দলের শীর্ষনেতাদের কানেও গেছে ওই ঘটনা। তখন চুপ থেকে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু তারপরও দলে নেওয়া বন্ধ রাখেনি আওয়ামী লীগ ।

আওয়ামী লীগের এক সময়ের ‘ত্রাস’ এখন তাদের দলের নেতা। গত ২০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এমন এক বিএনপি নেতাকে দলে ভেড়ান স্থানীয় সংসদ সদস্য যিনি বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার নাম আবুল বাশার কাশু। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে যার হাতে আড়াইহাজারে আওয়ামী লাগের অনেক নেতা-কর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর হাতে সোনার নৌকা তুলে দিয়ে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসেন গোপালদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চার হত্যা মামলার অন্যতম আসামিসহ ২৫ নেতা।

স্থানীয়রা জানান, আবুল বাশার কাশু ২০০১ সালে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি ও হত্যায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠে। ২০০২ সালের ১২ মার্চ বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই বারেক, ফুফাতো ভাই বাদল, আওয়ামী লীগ কর্মী ফারুক ও কবীরকে নির্যাতন করার পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে চারজনকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।

আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চার হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য আওয়ামী লীগে এসেছেন আবুল বশর।’ নিহতদের স্বজনরা জানান, পুলিশ আলোচিত চার হত্যা মামলায় কাশুর নাম বাদ দিয়ে প্রথমে একটি অভিযোগপত্র দেওয়ার পর এর বিরুদ্ধে আদালতে না-রাজি জানানো হয়। পরে আদালতের নির্দেশে পুনঃতদন্ত হয়। ওই তদন্তের পর দেওয়া অভিযোগপত্রে কাশুর নাম দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত গোপালদী পৌরসভার নির্বাচনে আবুল বাশার কাশু বিএনপির প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।

আওয়ামী লীগে আসার হিড়িক

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকে শেষ দেখার অপেক্ষা ছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন, তিনবার ক্ষমতায় যাওয়া দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে না। দাবি আদায় করে নির্বাচনী ট্রেনে চড়বে তারাও। কিন্তু ৫ জানুয়ারির পর হতাশায় ডুবেছেন দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকে। কেন্দ্রের ঘোষণার আশায় ছিলেন কঠোর আন্দোলনে সরকার পতন করে অন্তর্বর্তী নির্বাচনে। দিনে দিনে সেই আশাও ক্ষীণ হয়ে আসছে। বিরোধীদলে থাকলে হামলা-মামলার শিকার হতে হয় তাই গা বাঁচাতে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের ভিড়ছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

গত ২২ অক্টোবর বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের সাড়ে তিন শর বেশি নেতা-কর্মী আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। কচুয়া উপজেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগমের নেতৃত্বে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দলবদল করেন। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর উপজেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম নিজের ব্যবসায়িক ব্যস্ততা ও শারীরিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে মহিলাদলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

গত ২৯ মার্চ রাতে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে যুবদল ও ছাত্রদলের শতাধিক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা কর্মীদের মধ্যে আছেন আবদুল হক, রিপন, জাকের, আলমগীর, বোরহান, সোহেল, রুবেল, শেখ ফরিদ, সুমন, সাইফুল ইসলাম, মো. শাকিল, কামাল উদ্দিন, শরিয়ত, নিজাম, জাবেদ, মামুন, সোহাগসহ অন্যরা।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো নেই বললেই চলে। এ অবস্থার মধ্যেই চলছে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে একের পর এক যোগদানের ঘটনা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির রাজনীতিতে হতাশ হয়ে তাদের অনেক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে। বিএনপি নেতাদের দাবি, বিএনপির পদ-পদবিধারী কেউই আওয়ামী লীগে যোগ দেয়নি। বিভিন্ন ছোট দলের লোকজনকে বিএনপি সাজিয়ে যোগদান করানো হচ্ছে।

সর্বশেষ গত মে ও জুলাই মাসে দুটি বড় যোগদানের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর পরিবেশিত খবর অনুযায়ী, মে মাসে টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান স্বপন ও মহিলা কাউন্সিলর হোসনে আরা বিউটির নেতৃত্বে তিন শতাধিক এবং জুলাই মাসে ঘারিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আনোয়ার হোসেন বাকীর নেতৃত্বে ওই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা অবশ্য তাদের নেতা-কর্মীদের দল ত্যাগের এসব ঘটনা অসত্য বলে দাবি করছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম তোফা বলেন, বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় টাঙ্গাইলে বিএনপি এখন অনেক সংগঠিত। বিএনপি থেকে কেউ আওয়ামী লীগে যায়নি। যোগদানের এসব অনুষ্ঠান সাজানো নাটক।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর সঙ্গে আলাপে এ দাবি সঠিক নয় বলে জানা গেছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপে জানা গেল, দীর্ঘদিন সরকারের বাইরে থাকার কারণে তাদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছে। জাতীয় পর্যায়ের মতো আঞ্চলিক পর্যায়েও আন্দোলন-সংগ্রামে দলটি নানা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সর্বোপরি দলের অভ্যন্তরে রয়েছে উপদলীয় কোন্দল। টাঙ্গাইলের বিএনপি রাজনীতিতে এখনও তিনটি উপদল রয়েছে। ফলে দলীয় কোন্দল জেলা সদর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যন্ত। বিএনপির কোন্দলের আঁচ লেগেছে যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও।

গত ২৭ অক্টোবর ঝিনাইদহ সদর (কালীগঞ্জ আংশিক) উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মাজেদুল ইসলাম মাজুর নেতৃত্বে ১ হাজার ২শ বিএনপি নেতা-কর্মী আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। যোগদান সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার।

দুর্নামের ভাগীদার দল

যাকেতাকে দলে নিয়ে আসলে জনসমর্থনের পাশাপাশি দুর্নামের দায়ও পড়ে দলের ওপর। ব্যক্তি অপরাধ করলে তাকে বিবেচনা করা হয় দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, এমনটি ঘটেছে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একজন আলোচিত্রী ও তার দুই ভাগ্নীর ওপর হামলার ঘটনায়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পুকুরঘাটে দুই ভাগ্নীকে নিয়ে বেড়াতে এসে হামলার শিকার হন বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফির পরিচালক ইমতিয়াজ আলম বেগ। হামলায় তার মাথা ফেটে যায়। তার সঙ্গে থাকা দুই ভাগ্নীকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে হামলাকারীরা। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। যাদের সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তবে তারা কেউ আসলেই ছাত্রলীগের আদর্শ লালন করেন কি না তা নিশ্চিত নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলে ওঠার পর থেকেই বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে হয়। শুরু থেকেই নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নাম লেখাতে হয় ছাত্রলীগে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণহারে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার কারণে ভালো-খারাপ অনেক ধরনের শিক্ষার্থী দলে ঢুকে পড়ছে। যাদের সবাইকে চোখে চোখে রাখাও সম্ভব নয়। কোথায় অন্যায় করার পর তারা এই পরিচয় ব্যবহার করছে। তখন দায় এসে পড়ছে সংগঠনের ওপর। অথচ সংগঠন তো কাউকে অন্যায় করতে বলে না।

আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছেড়ে জাসদে!

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার যেমন নজির আছে, তেমনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছেড়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলÑজাসদে নেতা-কর্মীদের  যোগ দেওয়ার নজিরও স্থাপন হয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ও মোকারিমপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি গঠন ও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে দুই শর বেশি নেতা-কর্মী আনুষ্ঠানিকভাবে জাসদে যোগ দেয়। ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খোকন আলী, আবু সাঈদ ও কাজলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ থেকে শতাধিক ও জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মন্টু দফাদার, রেজাউল মহলদার ও সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি থেকে শতাধিক নেতা-কর্মী জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম স্বপনকে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাসদে যোগ দেন।



এই সময়ের সৌজন্যে