logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সময় কমবে ডিসেম্বরেই
দিদারুল আলম
০২ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৯:৩৯:৩২
image


ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দূরত্ব অনুযায়ী আধুনিক যুগে এ পথ পাড়ি দিতে যত সময় লাগার কথা, লাগে এর চেয়ে অনেক বেশি। এর কারণ রেললাইনের দুরবস্থা। এখানে-সেখানে দুর্বল হয়ে গেছে লাইন। তাই ধীর গতিতে টানতে হয় রাস। এছাড়া বেশিরভাগ এলাকায় একটি লাইন থাকার কারণে প্রায়ই এক পাশের ট্রেন দাঁড়িয়ে ছাড়তে হয় অপর পাশের ট্রেন। লাইনের উন্নয়ন এবং এই ক্রসিংয়ের সমস্যা সমাধানে সমান্তরাল আরেকটি লাইনের কাজ চলছে তিন বছর ধরে। ডিসেম্বরের মধ্যেই চিনকি আস্তানা থেকে লাকসাম পর্যন্ত প্রায় ৬১ কিলোমিটারের কাজ শেষ হবে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাতায়াতের সময় কমে আসবে।

লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটারে দুটি লাইন করার প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ডাবল লাইন আছে ১২৪ কিলোমিটার। নির্মাণ করতে হচ্ছে আরও ১৯৬ কিলোমিটার।

পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে জানিয়েছে, ডাবল লাইন না থাকায় আউটার সিগনালে ক্রসিংয়ের জন্য বিভিন্ন ট্রেনকে অপেক্ষা করানো হয়। ডাবল লাইন প্রকল্প চালু হওয়ার পর তা ৭৫ শতাংশ কমে আসবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দুদিক থেকেই এর উপযোগিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে দেশের শিল্প-বাণিজ্যে গতি সঞ্চার হবে। এতে ঢাকা থেকে রপ্তানিপণ্য সহজে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো যাবে। অন্যদিকে বন্দরে খালাসকৃত শিল্পের কাঁচামালও স্বল্প খরচে ঢাকায় আনা যাবে। উপরন্তু ডাবল লাইন হওয়ায় এই রুটে যাত্রী পরিবহনও বাড়বে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, ঢাকা-চট্টগ্রামের এই সেকশনটি ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে এবং উপ-আঞ্চলিক করিডোরের একটি বড় অংশ। এই উপ-অঞ্চলে পরিবহন এবং ট্রান্সশিপমেন্টের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। এর সীমান্তে রয়েছে ভারত, মিয়ানমার এবং নেপাল ও ভুটান। এছাড়া যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোর দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সুবিধা দিতে পারে। আগরতলা-আখাউড়া রেল যোগাযোগ ডাবল লাইনে উন্নীত হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হবে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এই রুট চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা আরও বাড়াবে।

লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশন

২০১২ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও সিলেট রেল রুটকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার কাজ। জাইকার অর্থায়নে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ‘চায়না রেলওয়ে’ ও বাংলাদেশের ঠিকাদারি কোম্পানি ‘ম্যাক্স’ যৌথভাবে।

চিনকি আস্তানা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আগে থেকেই ছিল ডাবল রুট। কিন্তু আস্তানা থেকে লাকসাম পর্যন্ত একটি লাইনের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর নিশিতা, গোধূলি, প্রভাতী, সুবর্ণ, সিলেটের জালালাবাদ, চাঁদপুরগামী সাগরিকা এবং মেইল ট্রেন, লোকাল ট্রেন ও কনটেইনারবাহী ট্রেনসহ দৈনিক ৫০টি ট্রেনেরই যাত্রাপথে অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরি হয়।

এই লাইনের কাজ শেষ হওয়ায় লাকসাম থেকে ফেনী পর্যন্ত অংশ খুলে দেওয়ার কথা ছিল গত বছর। কিন্তু পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর সময় ত্রুটি ধরা পড়ায় এই অংশ আর উদ্বোধন করা হয়নি। এই অংশে হাসানপুর থেকে গুণবতীর মধ্যে একটি সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া ফেনী থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত অংশে ফেনী ও মুহুরী সেতুর নির্মাণকাজ চলছে।

মিরসরাইয়ের ধুমঘাট এলাকায় রেললাইন নির্মাণে কর্তব্যরত ম্যাক্সের মাঠ প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই এ রুটের অবশিষ্ট কাজ শেষ করে রেলকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কাজ দ্রুত শেষ করতে দিন-রাত কাজ চলছে।’

আখাউড়া-লাকসাম সেকশন

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে করার জন্য গত মাসে ৫ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয় একনেকে। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত যে ৭২ কিলোমিটার রেলপথ বাকি আছে, সেই অংশটুকু ডাবল লাইন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে পূর্ণতা পাবে। এছাড়া এই অংশটুকু সম্পন্ন হলে ভারত, নেপাল ও ভুটান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রেলপথ দিয়ে সহজেই তাদের পণ্য পরিবহন করতে পারবে।

এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে দাতা সংস্থা এডিবি ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। মোট প্রকল্প ব্যয়ের বেশির ভাগ টাকা অর্থাৎ ৪০ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা দিচ্ছে এ দুটি সংস্থা। আর সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৯৭১ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পে ডাবল লাইন নির্মাণ ছাড়াও কম্পিউটার বেজড সিগনালিং সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে প্রচলিত রেলপথের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

রেলপথ বিভাগের মহাপরিচালক তাফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দিক থেকে সারা দেশে রেললাইনের মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সেকশনকে। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অচিরেই এ রুটটির সংস্কার হচ্ছে।’ -সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে