ঢাকা:পরিবাগ পেট্রল পাম্পের সামনের ফুটপাতে রাতে চা,পান ও সিগারেট বিক্রি করেন ষাট বছর বয়সী মোল্লা মিয়া। তাকে ক্রেতারা ডাকেন মামা বলে।
বুধবার রাত একটার সময় দোকানের সামনেই কথা হয় ‘মামা’র সঙ্গে। বৃদ্ধ বয়সে এখনও রাতে বেলায় পান, সিগারেট বিক্রি করেন আপনার ছেলে-মেয়ে নাই? তারা আপনাকে এখানে আসতে দিছে? উত্তরে মোল্লা মামা বলেন, ‘পোলা-মাইয়্যা পাঁচজন। কিন্তু হগলেই ছোঁট সবাই পড়ালেহা করে। বাড়িতে জমি কমতো সেগুলোতে যে ধান হয় তাতে সংসার চলে না, তাই বাধ্য হইয়্যা এগুলো বিক্রি করি’।
কত রাত পর্যন্ত এখানে থাকেন? উত্তরে বলেন, ফজরের নামায পর্যন্ত থাকি।
-সারা রাত থাকেন কোন সমস্যা হয় না?
-না মামা কোন সমস্যা হয় না। এই এলাকায় সবাই আমারে চিনেতো তাই কোন সমস্যা হয় না।
-যদি কোন রাতে বেশি শীত পড়ে সেই রাতে খুব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যাই।
রাত দেড়টায় মোল্লা মামার সাথে আড্ডা থামিয়ে ছুটে চললাম শাহবাগের দিকে, চেষ্টা করা মোল্লা মামার মতো বয়সী কিছু ব্যক্তি আছে যারা এখনো পরিবারের ঘানি টানতে রাতে শহরে কাজ করেন।
রাত পৌনে দুইটায় শাহবাগের মোড়ে দেখা হয় ময়মনসিংহের সাজিদ আলীর সাথে। রিকশা চালান তিনি। রিক্সায় উঠে তার সাথে গল্প জমানোর চেষ্টা করলাম।
চাচা আপনার বয়স কত? উত্তরে তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধন কার্ডে আমার জন্মতারিখ দেওয়া আছে ৬২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।
প্রশ্ন করলাম, এত বছর বয়সে এখনো আপনি রিক্সা চালান যে?
জবাব আসলো, ‘বাবা ফুলাফান নাইত। তাই আমারেই কষ্ট করে সংসার চালাতে অয়’।
-সংসারে কে কে আছে?
-আমি আর আমার বউ। দুই মেয়ের বিয়া অয়া গেছে। হেরা থাহে জামাইর বাইত’।
-সবসময় কি রাতেই রিক্সা চালান?
-হ, বেশির ভাগ সময়ই রাইতেই চালাই’।
-রাতে?
ভাড়া বেশি পাওয়া যায়। রাস্তায় জ্যামও থাহ না। আর সব জয়গায় যাওয়া যায়।
গল্প করতে করতে পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে নেমে পড়ি বাংলামোটরে।
এই মেগাসিটি ঢাকায় মোল্লা মিয়া ও সাজিদ আলীর মত হাজারো বয়োজ্যেষ্ট আছেন যারা জীবাকা নির্বাহের জন্য এই ঢাকার রাস্তায় বিচরণ করেন।
(ঢাকাটাইমস/১২ ডিসেম্বর /টিএ/ সধু/ ঘ.)