ঢাকা: বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লতে চলন্তবাসে এক মেডিকেল ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী বাসটির চালক মুকেশ সিংয়ের সাক্ষাতকারসহ নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বা তথ্য চিত্র প্রচার করায় বিবিসির বিরুদ্ধে আইনী নোটিশ জারি করেছে ভারত সরকার। নোটিশে দিল্লি জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তথ্য চিত্রটি প্রচার করা কেন অবৈধ বলে গণ্য হবে না তার কারণ দর্শানোর আদেশ দেয়া হয়েছে। নোটিশে আরও অভিযোগ করা হয়েছে তথ্যচিত্রটিতে মুকেশের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নারীদেরকে খুবই হীনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে নারী অধিকারেরও লঙ্ঘন হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন দোষী সাব্যস্ত ধর্ষণকারীর সাক্ষাৎকার নিয়ে বিবিসির এরকম বিতর্কিত প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করা বিবেচনার কাজ হয় নি।
এ ব্যাপারে আরো পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেছেন ‘সাধারণ নিয়মকানুন ভঙ্গ করা হয়েছে কীনা তাও তদন্ত করে দেখা হবে।’
দিল্লিতে ২০১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ওই গণধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মুকেশ সিং-এর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এই প্রামাণ্য চিত্রে, যেখানে ধর্ষণের ঘটনার জন্য তার মধ্যে কোনোরকম অনুশোচনা দেখা যায় নি।
ওই ঘটনায় দিল্লির একটি চলন্ত বাসে ওই মেডিকেল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
মুকেশ সিং ছিলেন ঘটনায় জড়িত চারজনের একজন এবং ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
মুকেশ সিং তার সাক্ষাৎকারে কোনোরকম অনুতাপ না দেখিয়ে বরং বলেন যে বাধা না দিলে ধর্ষিতাকে হয়ত মরতে হতো না।
প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা লেসলি আডউইন এই ছবিটি তৈরির পক্ষে তার যুক্তি দিয়েছেন। বুধবার রাতে ব্রিটেনে এই প্রামাণ্য চিত্রটি দেখানো হয়েছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে।
ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ এবং ধর্ষণকারীর এই সাক্ষাৎকার ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
প্রামাণ্য চিত্রটি ভারতে দেখানো না হলেও নারী অধিকার বিষয়ে সক্রিয় অনেকেই ধর্ষণকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কেউ কেউ অবশ্য এমন যুক্তিও দেখাচ্ছেন যে ভারতে ধর্ষণ নিয়ে বিতর্ক উৎসাহিত করতে ছবিটি দেখানো উচিত।
ধর্ষিতা ছাত্রীর বাবা প্রামাণ্য চিত্রটি দেখানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি এই ছবিটিতে ‘তিক্ত সত্য’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন এটা প্রত্যেকের দেখা উচিত।
‘অপরাধী যদি জেলের ভেতরে বসে এসব কথা বলতে পারে, তাহলে ভাবুন রাস্তায় ছাড়া থাকলে এই ব্যক্তি কী করতে পারে,’ মন্তব্য করেন তিনি।
ছবিটি আগামী রবিবার বিবিসিতে এবং ভারতীয় টিভি চ্যানেল এনডিটিভিতে দেখানোর কথা ছিল।
ভারত সরকার ছবিটির প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারির পর বিবিসি নির্ধারিত দিনের আগেই বুধবার রাতে বিবিসি ফোর চ্যানেলে প্রামাণ্য চিত্রটি দেখায়। যুক্তরাজ্য ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি দেশে তথ্যচিত্রটি দেখানো হয়।
এরপর এক দর্শক সেটি ভিডিও করে ইউটিউবেও আপলোড করে দেন। তবে ভারত সরকারের অনুরোধে ইউটিউব আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভিডিওটি সরিয়ে নিয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/৫মার্চ/এমএটি)