সাংবাদিকতা কি আর দশটা সাধারণ পেশার মতো। এই প্রশ্নটা সবসময় আমি নিজেকে করি, এমনকি অন্য সহযোগী সাংবাদিকদেরকেও করি। অনেকেই অনেক কথা বলেন, আমাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দেন। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত, সাংবাদিকতা যতটা না পেশা তার চেয়ে অনেক বেশি নেশার মতো কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে ভালোলাগা, ভালোবাসা এবং সর্বোপরি একটি স্বাধীনতা। এই নেশাটা হচ্ছে দেশের জন্য,দেশের মানুষের জন্য কিছু করার নেশা। আমার মনে হয়, একজন চিকিৎসক যেভাবে মানুষের সেবা করতে পারেন তার চেয়ে অনেক বেশি সেবা করতে পারেন একজন দেশপ্রেমিক সাংবাদিক।
যদি কখনও কোনো দায়িত্ববান সাংবাদিকের এই নেশার ঘোর কেটে যায় তখন তিনি যতটা না সাংবাদিক থাকেন তার চেয়ে বেশি একজন চাকরিজীবী হয়ে ওঠেন। আমার নিজের ছোট্ট একটি অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি বিষয়টির ব্যাখ্যা করছি। আমার ছেলেবেলা থেকেই সংবাদপত্রের প্রতি এক ধরনের কৌতূহল ছিল। বড় হয়েও যে সেটি আমার ছিল না তা কিন্ত একদম নয়। আটানব্বই সালের কথা, তখন আমি স্কুলে পড়ি। বানান করে করে অন্তত আমি বাংলা পড়তে শিখে গেছি। কিন্তু আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার পত্রিকা পড়া এক প্রকার নেশায় পরিণত হলো।
মানুষ যে মূলত ‘নিয়তি-নির্ভর একথা কেউ কেউ অস্বীকার করতে চায়। আসলে এই যে ‘অস্বীকারের একটি রোগ আর এটাও তার নিয়তি। কেননা, অস্বীকারকারীরাও কেউই নিয়তির নির্মম পরিহাস এড়াতে পারেননি। এনিয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। মহামতি লেনিনের মতো মহান মানুষও ভাবতে পারেননি তিনি সিফিলিসের মতো মারাত্মক একটি রোগে আক্রান্ত হবেন।
আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী। তিনি সারাদিন তার ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। আমাকে সময় দেয়ার মতো তার সময় একপ্রকার ছিল না। আর আমার মা একজন গৃহিনী। তিনি ইচ্ছা করলেও আমাকে সময় দিতে পারতেন না। কিন্তু আমাদের পরিবারটা বেশি উচ্চাভিলাসী না। মোটামুটি চলেই যেত বলা যায় এক প্রকার। আর আমি নিজেও একপ্রকার স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতাম। তাই আমার কাজে হস্তক্ষেপ করার মতো তেমন কেউ ছিল না। আমাদের বাড়িটা গ্রামের মধ্যে হওয়ায় পত্রিকা আসতে একটু সময় লাগে। তাই আমি নিজেই মাঝে মাঝে আমাদের স্থানীয় বাজারে চলে যেতাম সংবাদপত্রের টানে। আর বাজারে আমার এক চাচার দোকান থাকায় আমি চাচার দোকানে গিয়ে পত্রিকা পড়তাম। একসময় নিজে একটা পত্রিকা রাখতে শুরু করলাম।
আর এই খবরটা আমার বাবা জানতে পেরে আমাকে বেদম হারে মেরেছিলেন। কিন্তু আমি অসহায়, তাই কেউ আমার কোনো কথায় শোনেনি সেদিন। এমনকি মাকেও অনেক বকা দিয়েছিলেন বাবা। এভাবে চলতে থাকলেও আমার পত্রিকার প্রতি নেশার ঘোর থেকে আমি বঞ্চিত হইনি বরং আরও বেশি একটা নেশা লেগে যায়। আর সেদিন হতে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি একজন সাংবাদিক হবো। জানি না এখনও হতে পেরেছি কিনা?
এভাবে একদিন প্রথম আলো পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দেখি, একুশের ওপর একটি প্রতিযোগিতা হবে। সব নিয়ম মেনে আমি ও একটি লেখা পাঠাই। কে বা জানতো সেই লেখায় আজ আমাকে একজন সাংবাদিক হতে সাহায্য করবে। আমি সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করি।
পুরস্কার হিসেবে পাই নগদ ৭০ হাজার টাকা আর ক্যামব্রিয়ান কলেজে সম্পূর্ণ ফ্রিতে অধ্যায়নের সুবর্ণ এক সুযোগ। তারপর কলেজ পেরিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় অধ্যয়নরত। কিন্তু আমি কিভাবে সাংবাদিকতায় এলাম এটা সবার মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে। ক্যামব্রিয়ানে অনেক বড় বড় প্রোগ্রাম হতো সেখানে নামকরা অনেক সাংবাদিকরা আসতেন নিউজ কাভার করার জন্য। আর সেখানেই পরিচয় তৎকালীন বৈশাখী টেলিভিশনে কর্মরত/বর্তমানে চ্যানেল২৪ এর সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে। আর তখন আমি ক্যামব্রিয়ান কালচারাল একাডেমিতে আবৃত্তি করতাম। আমার ইচ্ছার কথাটি তাকে বললে তিনি আমাকে একটি ভিজিটিং কার্ড দেন এবং সময় হলে তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
আমার আগ্রহের সীমা তখন আর দর সইতে ছিল না। তাই যত দ্রুত সম্ভব ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করে আমার হিমালয়ের মতো আগ্রহের কথা জানান দিতেই তিনি আমাকে একটি প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতার ওপর তিন মাসের একটি কোর্স করতে বলেন। তৎকালীন বিসিজিএ বর্তমানে যার নামকরণ করা হয়েছে বিএমটিআই। এখান থেকেই আমার সাংবাদিকতার বলা যায় একপ্রকার হাতেখড়ি। তাই মাকসুদ ভাইকে আমি ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না। পরবর্তী সময়ে আমি একটি অনলাইন পত্রিকাতে কাজ করার প্রথম সুযোগ পাই। আমার মধ্যে তখন সুখের বন্যা বইতে শুরু করে। আমি তখন থেকেই নিজেকে সাংবাদিক ভাবতে শুরু করি। কলেজে আমাকে সবাই নাম ধরে না ডেকে সাংবাদিক বলে ডাকতে শুরু করে। তখন আমার খুবই ভালো লাগতো। প্রথমত চার হাজার টাকায় আমি সাংবাদিকতা শুরু করি। কিন্তু টাকার চেয়ে কাজ করতে পারাটাই আমার কাছে অনেক বড় ছিল।
যেদিন আমার নিউজ থাকতো সবাইকে ফোন করে বলতাম আর সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। কিন্তু আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি সেদিন বরং আমার মধ্যে আরও বেশি কাজ করার প্রবণতা বেড়ে যেত। এভাবে কাজ করতে করতে একদিন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র সাব-এডিটর রণক ইকরাম ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি আমার লেখা দেখে আমাকে তার অফিসে যেতে বলেন। তার অফিসে গেলে রণক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার কথা বললে, রিসিপশনে বসা ভদ্র মহিলাটি আমাকে পাত্তাই দিলেন না। ছোট্ট একটি হ্যাংলা, পাতলা ছেলে যে কিনা বাংলাদেশের নামকরা একটি পত্রিকার সিনিয়র সাব-এডিটরের সঙ্গে দেখা করবে। রিসিপশনে বসা মহিলাটি নিশ্চয় মনে মনে একথাটি ভাবছেন? আর এটি ভাবারও কথা! এভাবে সকাল হতে দুপুর গড়িয়ে গেলেও তিনি আমাকে বসিয়েই রাখেন।
এমন এক সময় রণক ভাই আমার সামনে হাজির। আমি পুরো হতভম্ব হয়ে গেলাম। তিনি বললেন, আমি কখন এসেছি। জবাবে আমি যখন বললাম সকালে তখন তিনি আমাকে একটা জোরে ধমক দিয়ে বললেন কেন, রিসিপশনে আমার কথা বলোনি! যখন আমি বললাম বলেছি.. তখন তিনি ভদ্র মহিলাকে অনেক বকা দিয়েছিলেন আর সেই কথা এখনও আমার মনে পড়ে। একজন বড়মাপের মানুষ এতটা আন্তরিক হতে পারে সেটি আমি কখনো ভাবতে পারিনি। সেখান থেকে আমার সাংবাদিকতায় আসা যেন আরও বড় একটি নেশা হয়ে গেল। তারপর একের পর এক আমার লেখা বাংলাদেশ প্রতিদিনের রকমারিতে ছাপা হতে লাগলো। টাকা পেতাম না অবশ্যই কিন্তু যে ভালোবাসা মানুষের কাছ থেকে পেতাম সেটি আমি অন্তত অন্য কোনো পেশায় পেতাম না। সেটি আমি তখন থেকেই বুঝতে শুরু করি। সবাই তখন আমার লেখা পড়ে আনন্দ পেতে শুরু করে।
বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে আমি আমার লেখাকে সবার সামনে উপস্থাপন করতে থাকি। এরই মধ্যে দৈনিক একটি পত্রিকাতে আমি স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে জয়েন করি। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে সেখানে আমার বেশি দিন কাজ করার সৌভাগ্য হয়নি। কারণ আমি কারো তোষামোদ করা পছন্দ করি না। কেননা যদি তুমি কাজই পারো তবে তোষামোদের কি বা দরকার আছে! তারপর কয়েক মাস কোনো কাজ না পেলেও আমি ভেঙে পড়িনি। কারণ আমি জানতাম উদ্দেশ্য যদি সঠিক থাকে তবে একদিন সফলতা আসবেই।
এবার আমার প্রশ্ন হচ্ছে-সাংবাদিকতার এই যে নেশা! এটা কেন? সাংবাদিকতা বিভাগের সব শিক্ষার্থীর মধ্যে কিংবা সব সাংবাদিকদের মধ্যে কেন থাকে না? আমার মনে হয়, এর পেছনে কয়েকটি কারণ বিদ্যমান রয়েছে। প্রথমত-ইচ্ছা বা কাজ করার সদিচ্ছা না থাকলে কারো সাংবাদিকতায় আসা ঠিক নয়। দ্বিতীয়ত, দুষতে চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। আমাদের শ্রদ্ধেয় অনেক শিক্ষকই হয়তো রাগ করতে পারেন আমার লেখায় কিন্তু বাস্তবতা হলো, যারা সাংবাদিকতার শিক্ষক তাদের বেশিরভাগই ছাত্রদের মধ্যে সাংবাদিকতার জন্য আলাদা করে কোনো ভালোলাগা, কিংবা আকর্ষণ বিষয়ক কোনো নেশা তৈরি করতে পারেন না। কেননা আমাদের যে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে রিপোর্টিং পড়ান তিনি হয়তো কোনোদিন রিপোর্টই করেননি। তাহলে তিনি কিভাবে রিপোর্টিং পড়ান এটি একটি প্রশ্ন? যিনি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পড়ান তিনি কোনোদিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনই হয়ত করেননি। যিনি সম্পাদনা পড়ান তিনি হয়তো কোনোদিন সম্পাদনাই করেননি। যিনি ফটোগ্রাফি পড়াচ্ছেন তিনি কি জীবনে কোনোদিন ক্যামেরা হাতে ভালো কোনো ছবি তুলে দেখেছেন আমার মনে হয় না। কাজেই যার মধ্যে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই, তিনি যতো ভালো শিক্ষক হন না কেন, যতো তত্ত্বই তার মুখস্থ থাক না কেন তিনি কখনো তাঁর ছাত্রদের মধ্যে সাংবাদিকতার নেশা তৈরি করে দিতে পারবেন না।আর এটাই সবচেয়ে বড় সত্য এবং বাস্তব।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় পাশ করা হাজারো শিক্ষার্থীকে কেন আজ রাস্তায় রাস্তায় একটি চাকরির জন্যে ঘুরতে হবে। কারো হাত ধরে কিংবা টাকা দিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় আসা যায় না,সাংবাদিকতা পেশায় আসতে হলে নিজের ইচ্ছা শক্তি থাকতে হয়। নিজেকে চেষ্টা করতে হবে, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করার মানসিকতা থাকতে হবে। কারো নিউজ নকল করে কখনো বড় সাংবাদিক হওয়া যায় না, যায় কেবল একজন প্রতিষ্ঠিত চোর হওয়া। সাংবাদিক হতে চাও নিজের ইচ্ছা শক্তি, মনোবল আর সাধারণ মানুষকে নিয়ে ভাবতে শেখো। আজ না হয় কাল তুমি একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকে পরিণত হবে এটা আমার দীর্ঘ বিশ্বাস। হতাশা নয়, শক্তি সঞ্চায় কর। হতাশা মানুষকে ধবংস করে কিন্তু যারা এই হতাশা থেকে শক্তি সঞ্চায় করতে পারে, তারা অবশ্যই একদিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
আমাদের দেশে যারা প্রথমত সাংবাদিকতা পেশায় আসে তাদের অনেকেরই প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকে একজন নামকরা সাংবাদিক হওয়ার। কিন্তু এক পর্যায়ে সেটি নষ্ট হয়ে যায় বিভিন্ন অফিসের কারণে। দিনের পর দিন হয়তো একজন সাংবাদিক ভালো রিপোর্ট করছে কিন্তু ন্যূনতমভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে সম্মানী পাওয়া প্রয়োজন তা কি সে পাচ্ছে, হয়ত না। আর প্রতিষ্ঠানে আছে নানান রাজনীতি। ফলে অনেক আশা নিয়ে যে ছেলে বা মেয়েটি সাংবাদিকতা পেশায় আসে একদিন তার মধ্যে ব্যাপক হতাশা তৈরি হয়। ফলে মনের দুঃখে একদিন সাংবাদিকতাকে সে চাকুরি বানিয়ে ফেলে। এরপর আর ওই সংবাদকর্মী অসৎ হতেও দ্বিধা কিংবা কুণ্ঠাবোধ করে না।
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা কিংবা নেশা- এটা বহু পুরনো বুলি। নেশা দিয়ে কিছুদিন বুঁদ হয়ে থাকা যায় কিন্তু পেটের দায়ে শেষ পর্যন্ত পেশা খোঁজার দায়টাই বড় হয়ে দেখা দেয়। সাংবাদিকতার শুরুটা কারো নেশা দিয়ে শুরু হয় কিন্তু পরে সেটা পেশায় রূপ নেয়। কারো পেশা হিসেবে শুরু হয়ে তা নেশায় পরিবর্তিত হতেও পারে। তবে সব কথার শেষ কথা, নিয়তিই তাকে তার রুটি রুজির সংস্থানের দিকে টেনে নিয়ে যায়। সেটা মহান পেশা হোক আর না হোক। সাংবাদিকতার বেলাতেও তা পৃথক কিছু নয় বলেই মনে করি। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা- একথা ঠিক আছে। কিন্তু চিকিৎসকের পেশা কি মহান নয়? বিচারকের পেশা, কিংবা পুলিশের পেশা অথবা আইনজীবীর পেশা? শিক্ষকতা পেশাকে অবশ্য মহান বলে উল্লেখ করা হয়, তবে এখন ততোটা জোর দিয়ে নয়। এখানে যেসব পেশার কথা উল্লেখ করা হলো তার সবকটিই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবশ্যই মহান।
মানুষ যেখানে তার বিশ্বাসযোগ্যতা সন্ধান করে, যেখানে একটু আশ্রয় খোঁজে, শেষ ভরসাস্থল বলে ভাবে- সে সবই মহান পেশাভুক্ত বলে আমার বিশ্বাস। সাংবাদিকতা পেশায় পান থেকে চুন খসলেই গেল গেল, আর অন্যদের বেলায় ‘গেল গেল’ হবে না কেন? তবে ইদানীং এসব পেশার লোকদের পদস্খলন ঘটলে মানুষ ছেড়ে দেয় না। তাদের নানা বিশেষণে ভূষিত করতে কসুর করে না।
সাংবাদিকরা সমাজের সার্বিক হাল-অবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তারা সর্বাধিক রাজনীতি সচেতন হবে, সমাজ সচেতন হবে, ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর হন, অতিমাত্রায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার শিকার হন, মাত্রা ছাড়া রাজনীতির প্রভাবে আচ্ছন্ন হন, তখন প্রকৃত সত্য বা ‘ফ্যাক্টস’ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবতে শরীর শিউরে ওঠে। সাংবাদিক প্রতিবাদী হবে, লড়াকু হবে, আপোসহীন হবে- এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু যদি তা গড্ডালিকা প্রবাহ হয়, অথবা একটু নম্র করে বললে বলতে হয়, দালালি বা ভাঁড়ামী করে, তবে সেটা সাংবাদিকতার পর্যায়ে থাকেনা।
তাই সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ‘তুমি যে বেতন পাও সেটি হয়তো অনেক কম। অপেক্ষা করো, একদিন ভালো বেতন পাবে। তুমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করো সেটি হয়তো অতো ভালো নয়।কিন্তু আবারও বলছি অপেক্ষা করো তুমিও একদিন ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাবে। কিন্তু সাংবাদিকতার জন্য যে ভালোবাসা, যে নেশা সেই নেশা তুমি হারিয়ে ফেলো না। কারণ সেই নেশা হারিয়ে গেলে তুমি আর সাংবাদিক থাকবে না। মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ পাবে না’।
আমি সর্বশেষ আবারো বলছি-সাংবাদিকতা কোন চাকরি কিংবা পেশা নয়, এটি এক ধরনের ভালোলাগা, এক ধরনের নেশা। এ নেশা ভালো কিছু করার। পৃথিবীর আর কোন পেশাতেই এতো স্বাধীনতা ও মানুষের জন্য কিছু করার এমন সুযোগ আর পাওয়া যায় না যেটি কিনা এই পেশায় পাওয়া যায় । আর তাই সাংবাদিকতা ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ কিংবা প্রশাসনের বড় কর্তা হওয়ার পরেও কারো কারো এই পেশার প্রতি টান থেকে যায় আর তারা সব ছেড়ে আবারো ফিরে আসে সাংবাদিকতায়। কেননা আমি জানি এই নেশা কতোটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। আর সেই কারণেই আমি আজীবন সংবাদের সাথে যুক্ত থাকতে চাই। মানুষের ভালোবাসা পেতে চাই। চাই নেশাটা থাকুক আজীবন আর এই নেশা ছড়িয়ে পড়ুক সব সংবাদকর্মীর মধ্যে। তবেই জাগ্রত হবে প্রকৃত সাংবাদিকতার!
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট