logo ১৪ মে ২০২৫
শবেবরাতে করণীয় বর্জনীয়
জহির উদ্দিন বাবর
০২ জুন, ২০১৫ ১৮:৫৩:৫১
image

আজ পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা ভাগ্য রজনী। পবিত্র শাবান মাসের তাৎপর্য ও মহিমা এই রাতের কারণেই। উপমহাদেশের সবখানেই এ রাতটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়। মুমিন বান্দারা এ রাতটি ইবাদত বন্দেগিতে কাটান। তবে শবেবরাতের ইবাদত-বন্দেগি ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয়, নফল। এ রাতের ইবাদতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। তবে কেউ এ রাতে ইবাদত না করলেও তাকে ভর্ৎসনা করা যাবে না। কারণ কোনো নফল ইবাদতের জন্য কাউকে ভর্ৎসনা করা যায় না।


‘বরাত’ শব্দের অর্থ মুক্তি। অসংখ্য বনি আদমকে ক্ষমা করার ফলে তারা জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি পান। এমন সুসংবাদ বিজড়িত হওয়ায় এ রাতের নাম হয়েছে লাইলাতুল বরাত বা মুক্তি রজনী। রাসুল সা. বলেছেন, ‘মধ্য শাবানের রাত এলে তোমরা সে রাতে ইবাদতের জন্য সজাগ থাকবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। কেননা সে রাতের শুরুতেই বা সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে মুক্তি দেব। কোনো রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করবো। কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। এভাবে প্রভাত পর্যন্ত তিনি আহ্বান করতে থাকেন। এ রাতে ইবাদতকারীদের প্রতি মহান আল্লাহ বিশেষ রহমতের অবারিত ধারা বর্ষিত করেন এবং তাদের ইবাদত ও প্রার্থনা কবুল করার জন্য আল্লাহ তাআলা প্রস্তুত থাকেন। সুতরাং কারো কোনো দোয়া করার থাকলে এ রাতের শুরু থেকেই আল্লাহর সমীপে সমর্পিত হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।


হাদিসে শবেবরাত উপলক্ষে দুটি করণীয় বিষয় জানা যায়। এক. রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করা। যেমন নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দুরুদ, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি। দুই. পরদিন রোজা রাখা। এমনিতে সারা শাবান মাসেই অধিক হারে রোজা রাখা উত্তম। রাসুল সা. প্রায় সারা শাবান মাসেই রোজা রাখতেন। হজরত উম্মে সালমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলকে শাবান ও রমজান ছাড়া দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি।

হজরত আয়েশা রা. বলেন, আমি হজরত নবী করিম সা.-কে শাবান মাসের মতো আর কোনো মাসে এত অধিক (নফল) রোজা রাখতে দেখিনি। এ মাসের কয়েক দিন ছাড়া সারা মাসটাই বরং বলতে কী গোটা মাসটাই তিনি রোজা রাখতেন।


তবে মনে রাখতে হবে ইসলামে এ রাতের ইবাদতের জন্য কোনো বিশেষ নিয়মনীতি নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। যেমন আমাদের মধ্যে অনেকে শবে বরাতের জন্য আলাদা নামাজ আছে বলে মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, এই নামাজের নিয়মনীতিও সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। যেমন প্রথম রাকাতে অমুক সুরা পড়তে হবে, দ্বিতীয় রাকাতে অমুক সুরা পড়তে হবে। এ-জাতীয় ধারণা অবশ্যই ভিত্তিহীন।


শবে বরাতে কতগুলো বর্জনীয় বিষয়ও সম্পৃক্ত আছে। এ রাতকে কেন্দ্র করে অনেক অপব্যয় করা হয়। অপব্যয় কখনও ইসলাম সমর্থন করে না। আতশবাজিতে অনর্থক অপচয় না করে সে অর্থ মানবতার কল্যাণকর কাজে বা গরিব-মিসকিনের মধ্যে দান-সাদকা করা অনেক সওয়াব ও বরকতের কাজ। প্রকৃতপক্ষে শবে বরাতের বৈশিষ্ট্য অনুষ্ঠানের আড়ম্বরতার মধ্যে নয়, বরং চরিত্রবলের সাধনার মাধ্যমে দয়াময়ের করুণা লাভের আন্তরিক প্রয়াসই এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।


এ রাতে অহেতুক আলোকসজ্জা করা, তারাবাতি জ্বালানো, আতশবাজি পোড়ানো, পটকা ফোটানো প্রভৃতি শরিয়তগর্হিত কাজ। এতে অপসংস্কৃতির সঙ্গে যেমন সাদৃশ্য তৈরি হয়, তেমনি ইবাদতেও যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটে। শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের এ বিষয়ে সতর্ক করা অবশ্য কর্তব্য। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এসব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ।


আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের ক্ষমা করার জন্য নানা উপলক্ষ রেখেছেন। শবেবরাত এর অন্যতম। এই রাতে আল্লাহর রহমত ও দয়ার অবারিত ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। আল্লাহর করুণার দৃষ্টি কার ওপর পড়ে যাবে এটা বলা যায় না। এজন্য এই রাতকে হেলায় খেলায় না কাটিয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটানো উচিত।