logo ১৫ মে ২০২৫
অপরাধ দমনে তাকওয়া
ইসলাম ডেস্ক
২৯ মে, ২০১৫ ২১:২৫:৫৫
image

ঢাকা: আমাদের সমাজে অপরাধ-প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। অপরাধ দমনের জন্য বহু আইন তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু তা অপরাধ দমনে কার্যকরী ও ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করতে পারছে না।  ইসলাম অপরাধ দমনের জন্য আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যক্তি চরিত্রের উন্নয়ন সাধনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ দমনের প্রধান ফলপ্রসূ ব্যবস্থা হলো তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় মানুষের অন্তরে জাগিয়ে তোলা।


ইসলাম ব্যক্তির মনমানসিকতায় আল্লাহর ভয় ও পরকালের জবাবদিহিতার প্রত্যয় সৃষ্টি করার প্রতিই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। মানুষকে পরিষ্কারভাবে একথা বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, যত সংগোপনেই সে অপরাধ করুক না কেন আল্লাহ তায়ালা তা দেখেন। পরকালে আল্লাহর কাছে এ জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। পরকালে ভালো-মন্দ বিচারের মাপকাঠি হবে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। যার ভেতর আল্লাহর ভয় যত বেশি থাকবে সে তত বেশি আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা লাভ করবে। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মাঝে অধিক মুত্তাকী।’ (সূরা হুজরাত ১৩)।

মানব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও তাত্পর্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং নিজেকে কু-প্রবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে রাখে নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।’ (সূরা নাযি’আত ৪০-৪১)। অন্য আয়াতে আছে, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর মনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা বাকারা ১৯৪)।


বস্তুত মানুষের মাঝে যদি এই ভয় উপস্থিত থাকে যে, চুরি-ডাকাতি করলে, খুন-গুম করলে, কারও ওপর জুলুম-অত্যাচার করলে, কারও ইজ্জত লুণ্ঠন করলে আল্লাহর কাছে একদিন এর জবাব দিতে হবে এবং কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে, তবেই সে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। পাবন্দির সঙ্গে আল্লাহর হুকুম মানা তার জন্য সম্ভব হয়।


হজরত ওমর (রা.) এক রাতে মানুষের খোঁজখবর নেয়ার জন্য মদিনার অলিগলিতে টহল দিচ্ছিলেন। হঠাত্ তিনি একটি ঘর থেকে কথাবার্তার শব্দ শুনতে পেলেন। কথাবার্তার ধরন শুনে তার কৌতূহল হলো। তিনি ঘরের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালেন এবং শুনতে পেলেন, এক বৃদ্ধা তার মেয়েকে বলছে, ‘বেটি! আজ তো উটের দুধ কম হয়েছে। দুধের সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে দাও।’ মেয়ে উত্তরে বলল, ‘মা! আমিরুল মুমিনীন তো দুধের সঙ্গে পানি মেশাতে নিষেধ করেছেন।’ বৃদ্ধা বলল, ‘আমিরুল মুমিনীন কি আমাদের দেখছেন? তিনি হয়ত নিজ ঘরে ঘুমিয়ে আছেন। তুমি নিশ্চিন্তে পানি মেশাতে পার।’ এবার মেয়ে বলল, ‘মা! আমিরুল মুমিনীন এখানে নেই এবং তার কোনো লোকও নেই। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তো আছেন। তিনি তো দেখছেন। তার কাছে আমরা কী জবাব দেব?’ এই ঘটনায় আমরা দেখতে পাই যে, একটি সাধারণ মেয়ের অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকার কারণে রাতের অন্ধকারেও সে অন্যায় থেকে বিরত থেকেছে।

মোটকথা, মানুষের অন্তরে যদি সর্বক্ষণ এই চিন্তা জাগরূক থাকে যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেখছেন, তাহলেই সে নিজেকে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার ও পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পূত-পবিত্র রাখতে পারে।


(ঢাকাটাইমস/২৯মে/জেবি)