ঢাকা: বাংলাদেশে যেভাবে জাকাত দেয়া হয়, ইসলামের রীতিনীতি তা সমর্থন করে না বলে জানিয়েছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা। তারা বলছেন, জাকাতের নামে ঘটা করে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণের যে রীতি আমাদের সমাজে চালু আছে তা মোটেও ইসলাম সম্মত কোনো বিধান নয়। এই ধরনের কার্যকলাপে জাকাত আদায়ের পরিবর্তে লোক দেখানো মনোভাব প্রকাশ পায়।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি যাকাত। এটি বান্দার আর্থিক ইবাদত। যাদের সামর্থ্য আছে কেবল তাদেরকেই জাকাত দিতে হবে। ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, জাকাতের প্রথম দাবিদার কারও নিকটাত্মীয় গরিব মানুষ। না থাকলে অধস্তন কর্মচারীদেরকে দিতে হবে সহায়তা। আবার কাউকে এমন পরিমাণ টাকা দিতে হবে যেন যে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ পায়। একটি-শাড়ি বা লুঙ্গি দিয়ে জাকাতের বিধান আদায় সম্ভব না বলেও মনে করেন তারা।
জানতে চাইলে ইসলামী চিন্তাবিদ এসএম মাসুদুল ইসলাম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা জাকাতের নামে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করি। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় এ সব শাড়ি-লুঙ্গি ব্যবহারের উপযোগীও নয়। অনেক সময় গ্রহীতারা এ গুলো নিতে এসে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে মানুষ মারা যায়। অনেক দোকানে ঝুলানো থাকে এখানে জাকাতের শাড়ি বিক্রি করা হয়। ইসলামে এ ধরণের কোন বিধান নেই। রাসুল (সা.) ও সাহাবাদের সময় এমন ঘটনার কোন নজির নেই।’ তিনি বলেন, ‘যারা জাকাতের নামে এ ধরনের প্রতারণা করে তাদের যাকাত আদায়তো দূরে থাক, উল্টা এই প্রতারণাই হতে পারে কাল কিয়ামতের দিন তার কঠিন শাস্তির কারণ। ধনীদের সম্পদে যে গরিবের হক রয়েছে তা আগে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তাকে ওই সম্পদ/অর্থ পুরোপুরি দিয়ে দিতে হবে, ওই অর্থের মধ্যে তাদের পূর্ণ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর পর সে মালিক হওয়ার পর সে অর্থ দিয়ে তার প্রয়োজন মেটাবে।’
জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি আনতে গিয়ে প্রতিবছরই কমবেশি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কিন্তু তারপরও ঘটা করে জাকাত দেয়ার এই পদ্ধতি বন্ধ হচ্ছে না। শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ শহরে একটি বাড়িতে জাকাত আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৩ জন মারা গেছেন। এ ঘটনায় জাকাত দাতা শামীম তালুকদারসহ ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রায় প্রতি বছরই জাকাতের কাপড় বিতরণের সময় একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।
ইসলামী আইন ও বিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকে দেখা যায়, জাকাত বিতরণের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে স্থানীয়ভাবে মাইকে ঘোষণা দেয়। সময় ও স্থানও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। অথচ এটা মোটেও কোনো ইসলামী বিধানের মধ্যে পরে না। প্রয়োজনে গরিবের ঘরে ঘরে গিয়ে জাকাতের অর্থ বা সম্পদ পৌঁছে দেয়ার কথা বলছেন তারা।
(ঢাকাটাইমস/ ১০ জুলাই/ এইচএফ/ঘ.)