চোরাই পণ্য জোর করে ছাড়িয়ে নিতো শ্যামল বাহিনী
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৪:১৭:৩২

ঢাকা: বিমানবন্দরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক বদরুল আলম শ্যামল ও তার বাহিনীর সদস্যরা চোরাইভাবে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতেন। পরে তারা কাস্টমসের কাছ থেকে হুমকি ও জোর জবরদস্তিমূলকভাবে এসব পণ্য নিয়ে যেতেন বলে জানিয়েছেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে উত্তরা র্যাব-১ এর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে র্যাবের অভিযানে হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো কমপ্লেক্সে সংঘবদ্ধ মালামাল ছিনতাই চক্রের প্রধান শ্যামলসহ তার দুই সহযোগী গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শ্যামল বাহিনীর প্রধান বদরুল আলম শ্যামল (৩৭) তার ছোটভাই ফখরুল আলম প্রিন্স (৩৩) ও মো. আসিফুজ্জামান পাপন (২৬)।
র্যাবের অধিনায়ক বলেন, ২০১৫ সালের গত ১০ আগস্ট সোমবার দুপুরে আনুমানিক ২০/৩০ জনের একদল সশস্ত্র ক্যাডার হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পণ্য কুরিয়ার গোডাউন থেকে নিয়ে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে কাস্টম হাউজ কুরিয়ার ইউনিটের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী ঢাকার বিমানবন্দর থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও তিনি র্যাব-১ এর কাছে অভিযোগ দেন। পরে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টম হাউস ঢাকার কার্গো কমপ্লে¬ক্সের কুরিয়ার ইউনিটে হামলার মূল হোতা শ্যামল বাহিনীর প্রধান সদস্য বদরুল আলম শ্যামল ও তার বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুর বেনারশি পল্লী এলাকায় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গত ১১ আগস্ট কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলীর বিমানবন্দর থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে জানা যায়, শ্যামল বাহিনীর সদস্যরা দলবল নিয়ে কাস্টমস হাউস ঢাকার কার্গো কমপ্লেক্সের কুরিয়ার ইউনিটের ১৫টি কার্টুন ভর্তি পণ্যের মালামাল বিল অব এন্টি না দিয়ে ও মালামাল পরিদর্শন না করিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। কুরিয়ার ইউনিটের কর্তব্যরত রাজস্ব কর্মকর্তারা শ্যামল ও তার দলবলকে মালামাল না নিতে অনুরোধ জানান এবং গেইটের তালা লাগিয়ে দেন। তখন শ্যামল ও তার সহযোগীরা মিলে তালার চাবি ছিনিয়ে নেয়। গেইট খুলে ১২ কার্টুন মালামাল জোরপূর্বক বের করে নিয়ে যায়। তারা এ সময় ওই কুরিয়ার কমপে¬ক্সে অবস্থানরত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের হুমকি দেয় ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। দুষ্কৃতিকারীদের মধ্যে শ্যামল, প্রিন্স, সহিদুর, আসাদ, হাদীস, ইয়াসিন, সুমন ও মো. আলমকে কাস্টমস কর্মকর্তারা চিহ্নিত করেন। তাদের ফেলে যাওয়া অবশিষ্ট তিনটি কার্টুনে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ক্যামেরা, মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল ছিল। শ্যামল ও তার বাহিনীর সবাই কুরিয়ার ও সিএনএফ ব্যবসার সাথে জড়িত। শ্যামলের এসএমআই নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিস রয়েছে। এই সূত্র ধরেই কুরিয়ার ও কার্গোর মতো সংরক্ষিত এলাকায় তার অবাধ যাতায়াত। শ্যামল ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে এরকম জোর জবর-দস্তিমূলকভাবে মালামাল নিয়ে যাওয়ার অনেক নজির রয়েছে।
কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, গত ২৮ জুলাই ঢাকা কাস্টম হাউসে ঢুকে এক সহকারী কমিশনারের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন শ্যামল।
স্থানীয় সূত্রমতে শ্যামল বিমানবন্দরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার পোস্টার ফেস্টুন টানানো রয়েছে। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে মূলত চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য। তাছাড়া গত বছর শ্যামলের সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে দুটি বিলাসবহুল চোরাই প্রাইভেটকার আটক করে ডিবি।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, এর আগেও একাধিকবার শ্যামল কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জোর করে মালামাল কুরিয়ার গোডাউন থেকে বের করে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, শ্যামল যেসব পণ্য পেশিশক্তির বলে ধারাবাহিকভাবে কুরিয়ার গোডাউন থেকে বের করে নিয়েছেন, সেগুলো বেশিরভাগই চোরচালান পণ্য। এমনকি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অন্য চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের সাথে তার গ্রুপের একাধিকবার সংঘর্ষও হয়। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসের এমন একটি ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় মামলাও করে। বিভিন্ন সিএন্ডএফ এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। এসএমআই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এক্সপ্রেস নামের কুরিয়ার সার্ভিস ও সিএন্ডএফ লাইসেন্সের আড়ালে শ্যামল ও তার লোকজন চোরাইপথে আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন পণ্য আনে। সোনার চোরাচালানেও তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যায়।
(ঢাকাটাইমস/২সেপ্টেম্বর/এএ/জেবি)